প্রায় ৩৫ বছর আগে তৈরি হয়েছিল পানীয় জলের প্রকল্পদুটি। তারপর জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাত থেকে দায়িত্ব গিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির হাতে। অথচ সংস্কার হয়নি একবারও। এমনই হাল পূর্বস্থলী ও পাটুলি এলাকার পানীয় জলের দুটি প্রকল্পের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্সেনিক আক্রান্ত পূর্বস্থলীতে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে পূর্বস্থলী ও পাটুলিতে ওই প্রকল্পদুটি তৈরি হয়। শুরুতে ভাল কাজ করলেও পরবর্তীতে স্রেফ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যথাযথ পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রকল্পদুটি। পাটুলিতে যে প্রকল্পটি রয়েছে তার থেকে নারায়ণপুর, দামপাল, মধ্য পাটুলি, উত্তর পাটুলি, মাসুদপুর প্রভৃতি এলাকার মোট ৯০টি জায়গায় জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু নজরদারির অভাবে পাম্পহাউসটি ভগ্নপ্রায়। চারিদিকে আগাছা, রিজার্ভারের গায়ে ফাটল নিয়ে কোনওরকমে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাম্পহাউসটি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায়শই পাম্পের পুরানো যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জলসঙ্কটে ভুগতে হয় তাঁদের। তার মধ্যে মাসুদপুর, দামপাল প্রভৃতি এলাকায় কল থেকে খুব কম জল পড়ে। কিছু কিছু জায়গায় আবার খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে জলের কলগুলি। ফলে গরমে রীতিমতো মুশকিলে পড়েন বাসিন্দারা। বিশুদ্ধ পানীয় জলের জোগানের জন্য মাসে একবার রিজার্ভার পরিস্কার করা উচিত। কিন্তু চার মাসেও একবারও তা হয় না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
তবে কর্মীদের দাবি, পুরনো সিঁড়ি বেয়ে প্রায় চল্লিশ ফুট উপরে উঠে রিজার্ভার পরিষ্কার করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া রিজার্ভার সাফাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্লিচিং পাউডার মেলেনা বলেও তাঁদের দাবি।
পাটুলির থেকেও আরও খারাপ অবস্থা পূর্বস্থলীর প্রকল্পটির। রিজার্ভারটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে, যে কোনও সময় সেটি ভেঙে পড়তে পারে। তাছাড়া পুরনো পাইপ ফেটে মাঝেমধ্যেই পরিষেবা বিঘ্নিত হয় বলে বাসিন্দাদের দাবি। ফলে পলাশপুলি, বরজপোতা, হরিনগর, কাষ্ঠশালী এলাকার বাসিন্দারা ঠিকমতো পরিষেবা পান না। পাইপ বা খারাপ হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ সারাতেই অনেক সময় লাগে বলে বাসিন্দাদের দাবি। কর্মীদের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, “জেলা পরিষদ থেকে গত ১৬ মাসের বেতন দেওয়া হয়নি। তার মধ্যেও যতটা পারি ভাল পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
প্রকল্পদু’টির পরিকাঠামো যে ভগ্নপ্রায় সে কথা স্বীকার করেছেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপনকুমার চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “প্রকল্পদুটি তিন দশকেরও বেশি পুরনো। তাই পরিষেবা দেওয়ায় মাঝে মাঝে সমস্যা হচ্ছে।” তবে চলতি বিধানসভায় রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রীর গোচরে বিষয়টি আনা হয়েছে এবং মন্ত্রী ব্যাপারটি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলেও তপনবাবুর দাবি। আর কর্মীদের বকেয়া বেতন নিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “টাকা পেতে দেরি হওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে কর্মীদের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। পরে রাজ্য থেকে টাকা পেলে দিয়ে দেওয়া হয়। তবে ওই জলপ্রকল্পের কর্মীদের ক্ষেত্রে কী সমস্যা হয়েছে তা দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy