Advertisement
E-Paper

সতর্ক থাকুন গোপন ক্যামেরা থেকে

নিরাপত্তার জন্যই সিসিটিভি। কিন্তু তার সামনে আপনার গোপনীয়তা কতটা নিরাপদ? অপরাধ রুখতে বা পরে অপরাধীকে শনাক্ত করতে সিসিটিভি বসানো যে জরুরি, তা সকলের জানা। তার অপব্যবহার রুখতে নিয়ম আছে, আছে আইনও। কিন্তু সেই কড়াকড়ি কি সত্যিই রুখতে পারে সিসিটিভির অপব্যবহার? শুক্রবার গোয়ায় ফ্যাব ইন্ডিয়ার একটি দোকানে ট্রায়ালরুমের বাইরে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে বসানো সিসিটিভিতে খোদ মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির পোশাক পরিবর্তনের ফুটেজ প্রশ্ন তুলে দিল তা নিয়েই।

পরমা দাশগুপ্ত ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৭

নিরাপত্তার জন্যই সিসিটিভি। কিন্তু তার সামনে আপনার গোপনীয়তা কতটা নিরাপদ?

অপরাধ রুখতে বা পরে অপরাধীকে শনাক্ত করতে সিসিটিভি বসানো যে জরুরি, তা সকলের জানা। তার অপব্যবহার রুখতে নিয়ম আছে, আছে আইনও। কিন্তু সেই কড়াকড়ি কি সত্যিই রুখতে পারে সিসিটিভির অপব্যবহার? শুক্রবার গোয়ায় ফ্যাব ইন্ডিয়ার একটি দোকানে ট্রায়ালরুমের বাইরে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে বসানো সিসিটিভিতে খোদ মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির পোশাক পরিবর্তনের ফুটেজ প্রশ্ন তুলে দিল তা নিয়েই। পুলিশ এবং সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, নিত্যনতুন প্রযুক্তির হাত ধরে নিয়মবহির্ভূত বা লুকোনো ক্যামেরায় ছবি তোলা সংক্রান্ত অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আইনেরই যেখানে এই হাল, সেখানে ক্রেতাদেরই সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, লুকোনো ক্যামেরার ক্ষেত্রে ইনফ্রা রেড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা দিয়ে অন্ধকারেও ছবি তোলা যায়। তবে পোশাক বিপণির ট্রায়াল রুমে লুকোনো ক্যামেরা থাকলে তা ধরার কিছু রাস্তাও রয়েছে। যেমন— এক, ট্রায়াল রুমের আয়নায় আঙুল ঠেকালে তা যদি তার প্রতিফলনের সঙ্গে জোড়া লেগে যায়, তবে বুঝতে হবে, আয়নাটিতে কোথাও কোনও গলদ রয়েছে। দুই, ট্রায়াল রুমের দেওয়াল এবং সিলিংয়ের দিকে মোবাইল ক্যামেরা তাক করুন। লুকোনো ক্যামেরা থাকলে মোবাইলের স্ক্রিনে লাল বিন্দু দেখা যাবে। তিন, কিছু ক্ষেত্রে লুকোনো ক্যামেরার কারণে ফাইবার অপটিক্‌স ফোনের নেটওয়ার্কে বিঘ্ন ঘটায়। সে ক্ষেত্রে ট্রায়াল রুমের ভিতর থেকে বাইরে ফোন করা যাবে না। এক সাইবার বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘‘ইদানীং স্মার্টফোনে লুকোনো ক্যামেরা ধরার কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করা যায়, তবে সেগুলি কতটা কার্যকরী বা বিশ্বস্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’

শুধু ট্রায়াল রুম নয়, শপিং মল, দোকান বা রেস্তোরাঁ শৌচাগার ব্যবহার করলেও এ ভাবে সচেতন হওয়া জরুরি, বলছেন সাইবার অপরাধ ও পুলিশের বিশেষজ্ঞেরা। সেই সঙ্গে ট্রায়াল রুম বা শৌচাগারের দরজা-জানলা বা দেওয়ালের ফাঁকফোকর দিয়ে মোবাইলে কেউ ছবি তুলছে কি না, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে। সিসিটিভি বা মোবাইলে তোলা এ সব ফুটেজ অনেক ক্ষেত্রে নানা অশ্লীল সাইটে দিয়ে দেওয়া বা বিক্রিও করা হয়।

কলকাতার বিভিন্ন শপিং মলের তরফে সিসিটিভি-র অপব্যবহার রুখতে নজরদারির কথা বলা হয়েছে বটে, কিন্তু লুকোনো বা অবৈধ ক্যামেরা হদিস করতে তা যে কার্যকরী নয়, তা মানছেন তাঁরা নিজেরাই। এমনকী, কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের এক শীর্ষকর্তাই বলছেন, এত দিন শহরের দোকানগুলিতে সিসিটিভি-র অবস্থানের উপরে সে ভাবে নজরদারি করা হতো না। যদিও এই ধরনের অপরাধে ৩৫৪ (সি) ধারায় তিন থেকে সাত বছর কারাদণ্ড হওয়ার কথা। ওই শীর্ষকর্তা জানান, গোয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে থানায় থানায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, থানা এলাকার দোকানগুলিতে কোথায় কোথায় সিসিটিভি রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। লুকোনো ক্যামেরা মিললে সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়ে ফেলে দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে থানাগুলিকে।

গোয়ার ওই বিপণিতে সিসিটিভি ছিল ট্রায়াল রুমের বাইরের দেওয়ালে। কিন্তু ট্রায়াল রুমের উপর হাওয়া চলাচলের ফাঁক দিয়ে নীচের দিকে তাক করা ছিল ক্যামেরার লেন্সটি। এ দিনের ঘটনায় হইচইয়ের পর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, কিছু ক্রেতা নিয়মের বাইরে বাড়তি পোশাক নিয়ে ট্রায়ালরুমে ঢুকছিলেন। এবং একটি পোশাক লুকিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। এই চুরি যাওয়া পোশাকের দাম মিটিয়ে মাসুল গুনতে হচ্ছিল দোকানের কর্মীদের। সম্প্রতি এক ক্রেতা হাতেনাতে ধরা পড়ার পরে চুরি আটকাতেই তাঁরা এই সিসিটিভি লাগিয়েছেন।

ফ্যাব ইন্ডিয়ার কলকাতা শাখার তরফে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতা শাখায় এ ধরনের অসঙ্গতি নেই। আর গোয়ার ওই ঘটনা নিয়েও মুখ খুলতে রাজি নন তাঁরা।

কলকাতার শপিং মলগুলি এই যুক্তিতে সায় দেননি অবশ্য। প্রত্যেকেই বলেছেন, ট্রায়াল রুমের ভিতরে বা বাইরে থেকে লেন্স তাক করে ক্যামেরা বসানো আইনবিরুদ্ধ, নিন্দনীয় এবং কুরুচিকর। লালবাজারের শীর্ষ কর্তাও বলেছেন, ‘‘ট্রায়াল রুমের ভিতরে সিসিটিভি রাখা সমর্থনযোগ্য নয়। কোনও যুক্তিই খাটে না। চুরি আটকানোর অনেক পন্থা রয়েছে।’’

আনোয়ার শাহ রোডের একটি মলের তরফে রেশমী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চুরি আটকানোর অনেক উপায় রয়েছে। ট্রায়াল রুমের বাইরে রক্ষীর নজরদারি, ওই ঘরে ক্রেতার ঢোকা-বেরোনোর সময়ে পোশাক গুনে এবং মিলিয়ে নেওয়া, প্রয়োজনে টোকেনের ব্যবস্থা করা যায়। সিসিটিভি বসানোর দরকার নেই। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা জেনেবুঝে অসৎ উদ্দেশেই করেছেন। তাঁদের শাস্তি হওয়া জরুরি।’’ হাওড়ার এক মলের তরফে সুবীর দাস বলেন, ‘‘চুরি-ডাকাতি-জঙ্গিহানা বা যে কোনও অপরাধ রুখতে সিসিটিভি খুবই জরুরি। কিন্তু তা কোথায় আছে ও ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে। বিপণিতে ঢোকা-বেরোনোর পথ, ক্যাশ কাউন্টার বা সাধারণ দেওয়ালে সিসি ক্যামেরা থাকতেই পারে। কিন্তু ট্রায়াল রুম বা শৌচাগারে নিশ্চয়ই নয়। মলের তরফে এ বিষয়টি আমরা নিয়মিত নজরে রাখি। মলের ভিতরে হোক বা আলাদা দোকান, সবারই তা করা উচিত।’’

আর সল্টলেকের এক মলের বি কে সিংহ বলছেন, ‘‘আমরা নজরদারি করি বটে। তবে লুকোনো ক্যামেরা রাখলে কেউ কি আর তা জানিয়ে রাখবে? তা ধরার কোনও ব্যবস্থাও নেই সে ভাবে। ফলে ক্রেতারা নিজেরা সচেতন হওয়া সব চেয়ে জরুরি।’’

সাবধানের মার নেই।

hidden camera Smriti Irani Goa fabindia Police smart phone CCTV Parama Dasgupta Kuntak Chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy