দিনের শেষে ঝোলাভরা খুচরো এতদিন ওঁদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এখন কাঁদছেন।
ওঁরা আঙুলের আন্দাজে চেনেন এক টাকা, দু’টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা। এখন কয়েন হাতে এলেই মুখে বিরক্তি। উপচে পড়া খুচরো নিয়ে কী করবেন, কোথায় যাবেন বুঝতে না-পেরে শুক্রবার সকালে চুঁচুড়ার হুগলি মোড়ে জি টি অবরোধ করলেন জনা পনেরো দৃষ্টিহীন ভিখারি। সেই খুচরোই রাস্তায় ছড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, দোকান, বাজার, ব্যাঙ্ক— কোথাও খুচরো নিতে চাইছে না।
বাজারে চলে আসা প্রচুর খুচরো নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই জেরবার সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যে কিছু জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভও হয়েছে। কিছু দিন আগেই তারকেশ্বরের বালিগোড়িতে পথ অবরোধ করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাঙ্কেও বিক্ষোভ হয়।
আরও পড়ুন: পৃথক পথের সারথি কারা, প্রশ্ন সিপিএমে
ব্যবসায়ীদের তবু নোটে কারবার চলে। কিন্তু ভিখারিদের উপার্জন তো মূলত খুচরোতেই। এ দিন যাঁরা অবরোধ করেন, তাঁদের বেশির ভাগই চুঁচুড়া এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। কেউ ট্রেনে গান গেয়ে ভিক্ষা করেন, কেউ বাসে। সকলেই ‘হেলেন কেলার হ্যান্ডিক্যাপড অ্যাসোসিয়েশন’ নামে দৃষ্টিহীন ভিখারিদের একটি সংস্থার সদস্য। তাঁদেরই এক জন পরাণ মণ্ডল জানান, ভিক্ষা করে কখনও ২০০, কখনও ৪০০-৫০০ টাকা মেলে। কিন্তু সবই খুচরোতে। এত দিন দোকানে বা ব্যাঙ্কে খুচরো দিলে নোট মিলত। কিন্তু এখন মিলছে না। ওই সংস্থার সভাপতি নুপূরকান্তি মাইতি বলেন, ‘‘সমাধান না-হলে আমাদের মতো দৃষ্টিহীন মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাবে।’’
জেলা প্রশাসনের এক কর্তাও মানছেন, ‘‘এই সমস্যা এখন সর্বত্রই। এ জন্য বহু মানুষ বিপদে পড়ছেন।’’ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। এই আশ্বাস শুনেই এ দিন মিনিট কুড়ি পরে অবরোধ প্রত্যাহার করেন ভিখারিরা।
ব্যাঙ্কের দাবি, কয়েন দ্রুত গোনা ও রাখার পরিকাঠামো অপর্যাপ্ত। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বড় নোট কয়েনে ভাঙিয়ে দিতে পারে, কিন্তু কয়েন জমা নিয়ে নোট নিতে পারে না।