প্রবীণ চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বা হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকারের মনে পড়ছে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলের কথাও। ‘ইগো’ বা অহং ঠেলে সিদ্ধার্থবাবু রোটান্ডায় ডাক্তার-প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। ডাক্তারেরাও ধারাবাহিক ভাবে রোগী-স্বার্থে মানবিকতা দেখিয়ে এসেছেন। কিন্তু এ বারের অচলাবস্থার পিছনে নাগাড়ে গোলমাল, প্রশাসনের ‘মমতাহীনতা’র অভিঘাতও কাজ করছে।
প্রবীণ চিকিৎসকেরাও মানছেন, লোকসভা ভোটের ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের রাজনৈতিক ‘দুর্বলতা’ চোখে পড়ায় প্রতিবাদী কণ্ঠ গলা ছাড়ার সাহস পেয়েছে। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে হয়তো আরও বড় প্রতিবাদযোগ্য ঘটনা রাজ্যে ঘটেছে। কিন্তু এখন সরকার কিছুটা বিপাকে পড়ায় আন্দোলনের মাত্রা এত তীব্র হচ্ছে।’’
একদা বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির মুখ শ্যামল চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বাম আমলে হাসপাতালে কত গোলমাল হলেও এত দিন ধরে চলেনি। এর দায় মুখ্যমন্ত্রীরই।’’ তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্বভাবতই ডাক্তারদের এই আন্দোলনের কার্যত সমালোচনা করছেন। বলছেন, ‘‘ছোট-বড় নানা আন্দোলনেই মানুষের ভোগান্তি হয়। কিন্তু খুব বেশি দিন ভুগতে হয়, এমন আন্দোলন আমরা করিনি।’’
যাঁরা এই আন্দোলনকে সংবেদনশীল চোখে দেখছেন, তাঁরাও মনে করেন, একটা পর্যায়ে থামার রাস্তাটা খোঁজা উচিত। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ডাক্তারদের ধর্মঘটের অধিকারও আইনপ্রদত্ত। এসমা প্রয়োগেও ডাক্তারদের বন্দুক ঠেকিয়ে কাজ করানো যায় না বলে জানাচ্ছেন জয়ন্তবাবু। তবে তিনিও বলছেন, আন্দোলনের গন্তব্য কোথায়, তা এ বার বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
এটা সাধারণ নাগরিকের আন্দোলন ভেবেই মিছিলে সংহতি জানিয়েছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন। মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় তিনি হতাশ। বলছেন, ‘‘ডাক্তারেরা তাঁদের সমস্যার গুরুত্ব বোঝাতে পেরেছেন। নৈতিক জয় তো তাঁদের হয়েইছে। এখন ইগো ভুলে সকলেরই শুভ পরিণতি খোঁজার সময়।’’ কুণালবাবুর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবার এই সঙ্কটে প্রশাসন বা প্রশাসন-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক সমাজেরও দায় আছে। কিন্তু এখন জুনিয়র ডাক্তারদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলব, প্রতিবাদ চলুক অন্য ভাবে। কিন্তু যুদ্ধটা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসেব নেওয়ার আর দরকার নেই।’’