Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

যন্ত্রণা নিয়েই ফিরলেন রোগীরা

চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে টানা এক সপ্তাহ ধরে শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কণিকার মতো হাজার হাজার রোগীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

হতাশ: ভাঙা হাত ও পায়ের চিকিৎসা মেলেনি এক সপ্তাহেও। কণিকা মণ্ডলকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুলতলিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরিজনেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

হতাশ: ভাঙা হাত ও পায়ের চিকিৎসা মেলেনি এক সপ্তাহেও। কণিকা মণ্ডলকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুলতলিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পরিজনেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯ ০১:০৮
Share: Save:

বাস থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে গিয়েছিল হাত-পা। গত সোমবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বাসিন্দা কণিকা মণ্ডল। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে তাঁর কোনও চিকিৎসাই হয়নি বলে পরিবারের অভিযোগ। তাই সোমবার দুপুরে কণিকাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কুলতলিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁর পরিজনেরা। কণিকার স্বামী ভুবন মণ্ডল বলেন, ‘‘সহ্যের সীমা পার হয়ে গিয়েছে! দিনের পর দিন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থেকে কেবল স্যালাইনটুকু পেয়েছিল। শুধু নার্সরা ছিলেন। কোনও ডাক্তারকে দেখা যায়নি। বাধ্য হয়ে ওকে কুলতলির হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসাটা অন্তত চালু তো হবে।’’

চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে টানা এক সপ্তাহ ধরে শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কণিকার মতো হাজার হাজার রোগীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ) সোমবার দেশ জুড়ে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছিল। সপ্তাহের প্রথম দিন অনেক রোগী দূরদূরান্ত থেকে এসএসকেএম-সহ শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এলেও একরাশ হতাশা ও ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। এ দিন এসএসকেএমে গিয়ে দেখা গেল, জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও সেখানে কয়েক জন মাত্র সিনিয়র ডাক্তার রয়েছেন। ফলে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের। এমনই এক সিনিয়র চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমরা জুনিয়রদের পাশে আজ, সোমবার পর্যন্ত রয়েছি। এ বার কিন্তু ওঁদের কাজে ফেরা উচিত। সহ্যের তো একটা সীমা আছে!’’

মালদহের বাসিন্দা মিরাজা খাতুন ২৭ দিনের কন্যাসন্তানকে নিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে এসএসকেএমের প্রতীক্ষালয়ে রয়েছেন। সঙ্গে মিরাজার মা। মিরাজার কথায়, ‘‘জন্মানোর পরেই মেয়ের মাথায় জল জমে যায়। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখান থেকে এসএসকেএমে আসতে বলে। কিন্তু ডাক্তারদের ধর্মঘটের জন্য কোনও চিকিৎসাই শুরু হয়নি।’’ বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা আফসানা আখতার সেতুর জ্বর কমছে না। সারা শরীর ফুলে যাচ্ছে। আফসানার মা মিনারা বেগম বলেন, ‘‘গত শুক্রবার বরিশাল থেকে এসেছি। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় ওর চিকিৎসা শুরু হচ্ছে না। কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’’

গত এক সপ্তাহ ধরে ন্যাশনাল ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সমস্ত গেট বন্ধ। এ দিন দুপুরে ন্যাশনালে গিয়ে দেখা গেল, সঙ্কটাপন্ন রোগীদের গেটের বাইরেই গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে গাড়ি আটকে তৈরি হচ্ছে যানজট। রোগী এলেই জুনিয়র ডাক্তারেরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, ধর্মঘট চলায় পরিষেবা পাওয়া যাবে না। যা শুনে রোগীদের ফিরিয়ে নিচ্ছে যাচ্ছেন তাঁদের পরিজনেরা। ন্যাশনালের জরুরি বিভাগের সামনে ত্রিপল টাঙিয়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা এ দিন সকালেও ধর্নায় বসে ছিলেন। একই অবস্থা ছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। ফিরে যেতে হয় অসংখ্য রোগীকে।

শৌচাগারে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে গিয়েছিল লেক টাউনের বাসিন্দা প্রমোদ সাউয়ের। এ দিন দুপুরে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মেঝেয় দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকতে দেখা গেল বছর পঞ্চাশের ওই প্রৌঢ়কে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। প্রমোদের এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘জরুরি বিভাগে যেতে বলা হল, চিকিৎসক নেই। তাই বাধ্য হয়ে বাইরে অপেক্ষা করছি।’’ পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অশোকনগরের বাসিন্দা জয়দেব সাহা গত শুক্রবার থেকে আর জি করে ভর্তি। কিন্তু ধর্মঘটের জেরে তাঁর এখনও অস্ত্রোপচার হয়নি। জয়দেববাবুর স্ত্রী বর্ণালী সাহা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে শয্যায় পড়ে রয়েছেন। ধর্মঘটের জন্য এত দিন ধরে অস্ত্রোপচার হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE