Advertisement
১১ মে ২০২৪

খবরের খোঁজে গিয়ে মার খেলেন যাঁরা...

মনোনয়নপত্র পেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সোমবার রাজ্য জুড়ে এ ভাবেই আক্রান্ত হন দুই মহিলা সাংবাদিক-সহ সংবাদমাধ্যমের মোট ১২ জন।

আহত চিত্রসাংবাদিক সব্যসাচী ইসলাম এবং সাংবাদিক সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আহত চিত্রসাংবাদিক সব্যসাচী ইসলাম এবং সাংবাদিক সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ১৬:১৭
Share: Save:

কোথাও মাটিতে ফেলে গাছের ডাল আর বাঁশ দিয়ে দমাদ্দম পেটানোয় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিক। কোথাও বা সাংবাদিককে গলির মধ্যে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় ফেলে মারা হচ্ছে কিল-চড়-লাথি। আবার খাস কলকাতায় মহিলা সাংবাদিককে বস্তির ঘরে ঢুকিয়ে তল্লাশির নামে সমানে চলেছে নিগ্রহ, গালিগালাজ।

মনোনয়নপত্র পেশের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সোমবার রাজ্য জুড়ে এ ভাবেই আক্রান্ত হন দুই মহিলা সাংবাদিক-সহ সংবাদমাধ্যমের মোট ১২ জন। তাঁদের মধ্যে সাত জন আনন্দবাজার পত্রিকার।

একটি ছাড়া সাংবাদিকদের উপরে হামলার সব ঘটনায় আঙুল উঠেছে শাসক দল তৃণমূলের দিকে। একটি ঘটনায় কাঠগড়ায় বিজেপি। তৃণমূল বা বিজেপি, কেউই অভিযোগ মানতে চায়নি। সব ক্ষেত্রেই পুলিশ নির্বাক দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল বলে অভিযোগ। কেউ গ্রেফতার হয়নি।

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বিডিও অফিসের সামনে এক বিজেপি-সমর্থকের নিগ্রহের খবর সংগ্রহে গিয়ে প্রহৃত হন আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে মাটিতে ফেলে বাঁশ, গাছের ডাল দিয়ে মারা হয়। অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। লালবাগে লাঠির আঘাতে আনন্দবাজারের চিত্র-সাংবাদিক গৌতম প্রামাণিকের চশমার কাচ ভাঙে।

ডোমকলে প্রহৃত হয়েছেন আনন্দবাজারের চিত্র-সাংবাদিক সইফুল্লা ইসলাম। কান্দিতে আনন্দবাজারের সাংবাদিক কৌশিক সাহাকে লোহার রড দিয়ে পিঠে আঘাত করা হয়। শমসেরগঞ্জে ঘিরে ধরে কিল, চড়, ঘুসি মারা হয় একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের দুই সাংবাদিককে।

রামপুরহাটে লাঠির আঘাতে মাথা ফেটেছে আনন্দবাজারের চিত্র-সাংবাদিক সব্যসাচী ইসলামের। কাটোয়ায় আক্রান্ত হন আনন্দবাজারের মহিলা সাংবাদিক সুচন্দ্রা দে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। আক্রান্ত হন তাঁর সঙ্গে ঘটনাস্থলে থাকা অন্য এক পত্রিকার চিত্র-সাংবাদিক প্রণব দেবনাথও। দুর্গাপুরে একটি সংবাদপত্রের সাংবাদিক সঞ্জয় দে ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বিকাশ সেন মারের চোটে হাসপাতালে ভর্তি।

কলকাতার আলিপুরে ট্রেজারি ভবনের সামনে পুলিশের নাকের ডগায় আনন্দবাজারের সাংবাদিক আর্যভট্ট খান এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমের মহিলা সাংবাদিক প্রজ্ঞা সাহাকে অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ প্রজ্ঞাকে উদ্ধার করলেও দীর্ঘ ক্ষণ আর্যভট্টের খোঁজ মেলেনি। পরে তিনি মুক্তি পান। সকাল থেকে ওখানে জড়ো হয়েছিলেন তৃণমূল সমর্থকেরা। তার পরেই এই ঘটনা।

প্রজ্ঞা বলেন, ‘‘বেলা ১১টা নাগাদ জেলাশাসকের অফিসে ঢুকতেই ৭-৮ জন ঘিরে ধরে। শুরু হয় গালিগালাজ। প্রতিবাদ করায় এক মহিলা সপাটে চড় কষায়। সঙ্গে কুৎসিত ইঙ্গিত।’’ তিনি জানান, আলিপুর জেলের কাছে একটি বস্তিতে ঢুকিয়ে কিছু মহিলা পোশাক সরিয়ে তল্লাশি করে। ফোন কেড়ে নেয়। ‘‘ছেড়ে দেওয়ার আগে হুমকি দেয়, পুলিশের কাছে যেন অভিযোগ না-জানাই,’’ বলেন প্রজ্ঞা।

সাংবাদিক-নিগ্রহ কেন? জবাব দেননি মুখ্যসচিব মলয় দে। ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘সাংবাদিক-নিগ্রহের কথা জানতাম না। পরে সাংবাদিকদের কাছে থেকেই জানতে পারি।’’ পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় নয় কেন?

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

‘‘আলিপুরে জেলাশাসকের অফিসের আশেপাশে বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বেসরকারি অফিস রয়েছে। পুলিশের তরফে সব কিছু নজরদারি করা সম্ভব নয়। এ দিনের ঘটনা সাংবাদিকের কাছ থেকে জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে,’’ বলেন সুপ্রতিমবাবু। রাজ্য জুড়ে সাংবাদিক-নিগ্রহের তীব্র নিন্দা করেছে কলকাতা প্রেস ক্লাব।

গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat poll
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE