Advertisement
০৩ মে ২০২৪
TMC

আরামবাগ সেই বিরোধীশূন্যই

সময় বদলেছে। কিন্তু ভোট-ময়দানে আরামবাগ সেই ‘বিরোধীশূন্য’ই! যখন যে বিরোধী, তাদের অভিযোগের সুরও এক, ‘ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস’!

প্রকাশ পাল ও পীযূষ নন্দী 
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ০৪:১৫
Share: Save:

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে! বাম আমলে এ তল্লাটের মানুষ বলতেন, ‘এখানে জোর যার, মুলুক তার’। এখনও সেটাই বলেন।

সময় বদলেছে। কিন্তু ভোট-ময়দানে আরামবাগ সেই ‘বিরোধীশূন্য’ই! যখন যে বিরোধী, তাদের অভিযোগের সুরও এক, ‘ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস’!

এ বারেও পঞ্চায়েত ভোটে আরামবাগে বিরোধীরা কার্যত নিশ্চিহ্ন। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ— সর্বত্রই আতস কাচ দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে বিরোধী প্রার্থীকে। মহকুমায় মোট গ্রাম পঞ্চায়েত ৬৩। আসন ৮২৪। এর মধ্যে বামেরা মাত্র গোঘাট-১ ব্লকের শেওড়া পঞ্চায়েতের সাতটি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। বিজেপি খানাকুল এবং পুরশুড়ার দু’টি পঞ্চায়েতের পাঁচটিতে প্রার্থী দিতে পেরেছে। পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে ৬টি। আসন ১৮৫টি। শুধু বামেরা চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। মহকুমায় জেলা পরিষদের আসন ১৬। বিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূলকে লড়তে হবে মাত্র তিনটি আসনে।

ইতিহাসও বলছে, বাম আমলের শেষ দু’দফার ভোটেও কমবেশি এমনই ছিল ছবিটা। তখনও বিরোধীরা দাঁত ফোটাতে পারেনি। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই বিরোধী প্রার্থী ছিলেন না। ২০০৮-এ বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বিরোধী প্রার্থী ছিলেন। তার আগে ১৯৮৩-তে অবশ্য আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতি কংগ্রেস দখল করেছিল। ১৯৯৮-এর ভোটে খানাকুল-১ ও ২ পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে তৃণমূল। ২০১৩-তে গোটা রাজ্যের মতো এখানেও ক্ষমতার পাশা ওল্টায়। ওই নির্বাচনে বহু বুথে প্রার্থী দিতে পারেনি বামেরা।

কেন ভোট হয় না এ তল্লাটে?

গোঘাটের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘‘এখানে ক্ষমতা যার হাতে, মানুষ তার দিকেই ঢলেন। শাসক দল হয়তো মনে করে, অত্যাচারই ক্ষমতার উৎস!’’ খানাকু‌লের ছত্রশালের এক বৃদ্ধও মানছেন, ‘‘এখানে শাসকই শেষ কথা। গ্রামবাসীরা শুধু জামা বদলান।’’ মহকুমার অনেক প্রবীণের মনে পড়ছে, বাম আমলের প্রথম ১৫-২০ বছরের পর থেকে সিপিএমের এক শ্রেণির নেতার উৎপীড়নে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেতে শুরু করে। এখন শুধু শাসকের নামটাই পাল্টেছে বলে তাঁদের দাবি। গোঘাট-২ ব্লকের শ্যামবাজার, খানাকুল-১ ব্লকের তাঁতিশাল, খানাকুল-২ ব্লকের মাড়োখানার মতো কিছু পঞ্চায়েতের গ্রামে ২০০৩ থেকে পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী প্রার্থী দাঁড়াতেই পারেননি। এ বারেও তার অন্যথা হয়নি।

ছবি কেন বদলায় না? সিপিএমের আরামবাগ-২ এরিয়া কমিটির সম্পাদক উত্তম সামন্তের দাবি, ‘‘৩৪ বছরের শেষ দিকে মানুষের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব হয়েছিল। তার সঙ্গে অত্যাচারের মিথ্যা কাহিনি বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন। তাই ভয়ে ভোটে দাঁড়াতে দিচ্ছে না।’’ গোঘাটের তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদারের পাল্টা দাবি, ‘‘সিপিএম কতটা অত্যাচারী গোটা আরামবাগ জানে। ওরা ভোট করতেই দেয়নি। আর এখন ওদের হয়ে কেউ ভোটে দাঁড়াতে চান না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এলাকার উন্নয়ন মানুষ খালি চোখেই দেখতে পাচ্ছেন।’’ বিরোধী-স্বর এবং শাসক-স্বর চেনা লাগছে! আগেও তো এমনই শোনা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE