Advertisement
০৪ মে ২০২৪

‘যুব’র দাবি মানতে গিয়ে জেরবার তৃণমূল

দলের পুরনো ও সক্রিয় কর্মীদের ‘যোগ্য’ মর্যাদা দিয়ে এ বার ভোটে ‘কাজে’ লাগাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবারতি সিংহ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০০:৪৯
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী তালিকায় যুব তৃণমূলের ‘উত্থান’ এ বার নজরকাড়া। আর তা নিয়ে অন্য রকম চাপানউতর শুরু হয়েছে দলের মধ্যেই।

দলের পুরনো ও সক্রিয় কর্মীদের ‘যোগ্য’ মর্যাদা দিয়ে এ বার ভোটে ‘কাজে’ লাগাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু যুবদের দাবি মানতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সেটা সম্ভব হয়নি দলের শীর্ষ নেতাদের পক্ষে। দলের খবর, যুব তৃণমূল যেখানে যেমন আসন চেয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা তা পেয়ে গিয়েছে। দলের পুরনো কর্মীরা টিকিট পাননি, শেষ মুহূর্তে অভিযোগ পেয়ে মমতা নিজেই বেশ কিছু প্রার্থী বদল করেছেন।

যুব তৃণমূল সভাপতি হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যুব সংগঠনের এই ‘উত্থান’ নিয়ে প্রকাশ্যে দলের কোনও স্তরেই কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি, সমালোচনা তো নয়ই। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শুধু সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘যুবও টিকিট পেয়েছে, বুড়োও পেয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু বলা এখনই সম্ভব নয়।’’ যদিও টিকিট না পাওয়া বিক্ষুব্ধ অনেক পুরনো কর্মীই যে নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন, ঘনিষ্ঠ মহলে তা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই। টিকিট না পাওয়া এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া কর্মীরা পরোক্ষে নির্দলদেরই ‘মানসিক ও রাজনৈতিক’ সমর্থন দিয়েছেন বলে তৃণমূলের অনেকের ধারণা। আগামী দিনে এই সমস্যা বাড়লে তা দলের পক্ষে বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে বলে দলেরই একাংশের আশঙ্কা। শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য এ সব ‘জল্পনা’ বলে উড়িয়ে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘তৃণমূল এক ঐক্যবদ্ধ পরিবার। এখানে ‘হাঁড়ি’ ভাগের কোনও জায়গা নেই।’’

আরও পড়ুন: সকালেই পৌঁছে গিয়েছিল রাজ্যপালের রিপোর্ট, তার পরেই হিংসা নিয়ে চড়া স্বর প্রধানমন্ত্রীর

দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, মালদহের মতো জেলায় মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকেই টিকিট পাওয়া নিয়ে যুব ও আদি তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘর্ষ প্রকাশ্যে এসেছে। যুবর প্রতিনিধিত্বই যে অনেক ক্ষেত্রে বেশি, তা স্বীকার করে নিয়েছেন অনেক জেলার নেতাই। জলপাইগুড়ির জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যুব যে ক’টি আসন দাবি করেছিল, সবটাই তাদের দেওয়া হয়েছে। এই জেলায় যুব প্রার্থীই বেশি ছিল।’’ মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় যুবর ‘প্রভাব’ বাড়ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জেলার তৃণমূল সভাপতি সুব্রত সাহা। তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘যুব-রা দ্রুত দখল নিতে চাইছে। তাই সমস্যা বাড়ছে।’’ যুব তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ও মুর্শিদাবাদের কার্যকরী সভাপতি সৌমিক হোসেন বলেন, ‘‘অভিষেকদা এই জেলার প্রার্থী তালিকা নিজে দেখেছেন। এই জেলায় যুব খুবই শক্তিশালী। তিনটি স্তর মিলিয়ে প্রচুর টিকিট দেওয়া হয়েছে যুবকে।’’

একই সুর উত্তর ২৪ পরগনার যুব সভাপতি পার্থ ভৌমিকের কথাতেও। তাঁর জেলায় যুবর পাল্লা যে ভারী, তা স্বীকার করে নিয়ে পার্থবাবু বলেন, ‘‘এ জেলায় যুবর প্রায় সকলেই টিকিট পেয়েছেন। কোথাও যুব বাদ যায়নি।’’ যুবর আধিপত্য ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। অভিষেকের নিজের কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারের পাশাপাশি বাসন্তী, কুলতলি, ক্যানিং, মথুরাপুর, রায়দীঘিতে যুবর প্রার্থীই বেশি বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

পুরুলিয়ার হুড়ায় তৃণমূল ব্লক সভাপতি শ্যামনারায়ণ মাহাতোকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন জেলা নেতৃত্ব। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের ‘চাপে’ সেখানে এক বিধায়কের ‘যুব’ পুত্রকে প্রার্থী করতে হয় বলে জেলা সূত্রের খবর। এই জেলায় নব্যদের দাবি মানতে গিয়ে ‘আদি’ তৃণমূল অনেকটাই ম্রিয়মাণ বলে দলের নেতাদের মত। এখানে জেলা পরিষদের ৩৮টি আসনের মধ্যে ২৪টিতেই নির্দল প্রার্থীরা লড়েছেন। অনেকের মতে এটা আদি বনাম নব-র দ্বন্দ্বেরই প্রতিফলন।

দলীয় নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, সবই অপপ্রচার। কিন্তু বিভিন্ন জেলার উদাহরণ সামনে রাখলে তার নির্দিষ্ট জবাব দলের উপরতলা থেকে মিলছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE