Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Panchayat Poll 2018

নিরাপত্তার ভার নবান্নের কাঁধেই ঠেলল কমিশন

শান্তিপূর্ণ ভোট করানো নিয়ে কমিশন এবং প্রশাসনের অন্দরে একে অপরকে ‘দায়িত্ব’ স্মরণ করানোর পিছনে আদালতের রায়ের ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৮ ০৩:৩০
Share: Save:

অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দায় রাজ্য সরকারের দিকে ঠেলে দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে রাজ্যের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে বৃহস্পতিবারই মুখ্যসচিব মলয় দে-কে চিঠি লিখেছেন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ। শুক্রবার দুপুরে সেই চিঠি নবান্নে গিয়ে পৌঁছয়।

এর পর ভাঙড়-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতেই রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে ফোন করেন কমিশনার। ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। নবান্নের খবর, তার পরেই বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন ডিজি। পুলিশ সুপারেরা আবার ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কাছে সেই নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন।

শান্তিপূর্ণ ভোট করানো নিয়ে কমিশন এবং প্রশাসনের অন্দরে একে অপরকে ‘দায়িত্ব’ স্মরণ করানোর পিছনে আদালতের রায়ের ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁদের মতে, হাইকোর্ট বলেছে, এ বারের ভোটে ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের মতো হিংসাত্মক ঘটনা ঘটলে তার দায় নিতে হবে রাজ্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের। প্রয়োজনে তাঁদের বেতন থেকে টাকা কেটে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি এই ব্যাপারে কমিশনেরও যে দায় থাকবে, সে কথাও বলেছে তারা। অন্য দিকে সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর দায়িত্ব কমিশনেরও রয়েছে ।

ভোটে নিরাপত্তা নিয়ে নবান্নের সঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের চাপানউতোর চলেছে শুরু থেকেই। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছে বটে, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন কমিশনার। এ দিকে, হাইকোর্টে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজ্যের দেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তারা সন্তুষ্ট। তখন আদালত বলে, কমিশন ‘সন্তুষ্ট’ হলে তাদের আর কিছু বলার নেই। এর পরেই ভোটে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটলে তার দায় রাজ্য সরকার ও কমিশনের কাঁধে দিয়ে নির্দেশ জারি করে হাইকোর্ট।

কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, ২০১৩-এ কেন্দ্রীয় বাহিনীর ২৫ হাজার জওয়ান নামিয়ে ভোট হয়েছিল। তাতেও হিংসা থামেনি। ফলে এ বার কী হবে তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। সেই কারণেই সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের রায়ের উল্লেখ করে মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন কমিশনার। কয়েকজন এসপি এবং ডিএম সম্পর্কেও ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন তিনি।

সূত্রের খবর, হাইকোর্টে ও কমিশনকে যে নিরাপত্তারক্ষীর হিসেব দিয়েছিল রাজ্য, তার অতিরিক্ত দু’হাজার র‌্যাফ কিছু জেলায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শনিবার। যা ‘অপ্রতুল’ বলেই মত প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের। শনিবারই বিভিন্ন জেলায় পৌঁেছছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। কোথাও রুট মার্চও শুরু হয়েছে।

সূত্রের খবর, যেখানে বিরোধীরা শক্তিশালী, সেখানে ভিন্‌ রাজ্যের পুলিশ রাখা ও নিরাপত্তা আটোসাঁটো করা হচ্ছে। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতে নিরাপত্তা তুলনায় হালকা থাকবে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও কমিশনের এক মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘আমাদের তরফে আইনমাফিক সবই করা হয়েছে। বাকিটা জেলাশাসক, জেলা পঞ্চায়েত নির্বাচন আধিকারিক ও পুলিশের দায়িত্ব।’’ সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা ছাড়াও বিডিও, এমনকী সেক্টর অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব চিত্র বুঝতে চাইছেন কমিশনার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE