Advertisement
E-Paper

‘অভিভাবক’ই ভোটার কার্ড রাখেন সবংয়ে

সকলে ভোটার কার্ড নিয়ে হাজির হন ‘অভিভাবক’ জয়দেব পাত্রের কাছে।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫১
আঁধারে: উন্নয়ন পৌঁছয়নি বাগালপাড়ায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

আঁধারে: উন্নয়ন পৌঁছয়নি বাগালপাড়ায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

উন্নয়ন এখানে ভিন দেশি তারা!

আইআইটি-র শহর থেকে দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। খড়্গপুর মহকুমার সবং ব্লকের দণ্ডরা পঞ্চায়েতের সেই খলাগেড়িয়া গ্রামে একটি পুকুরকে ঘিরে ২২টি পরিবারের বাস। গোটা তল্লাট বিদ্যুৎহীন। ২২টি পরিবারে সর্বোচ্চ শিক্ষিত পঞ্চম শ্রেণিতে ফেল। দিনমজুরি করে আর চেয়েচিন্তে যেটুকু খাবার জোটে তাতে পুষ্টি মেলে না। ভোট এলেই ডাক পড়ে এই পুকুর পাড়ের বাসিন্দাদের। সকলে ভোটার কার্ড নিয়ে হাজির হন ‘অভিভাবক’ জয়দেব পাত্রের কাছে।

উন্নয়ন হবে। ৪০ বছর ধরে আশায় আছেন বৈশাখী, দেবেন, বচ্চন দেহরিরা। সেই যখন তাঁর পূর্বসূরিরা ওডিশার বারিপদ, ওডিশা ঘেঁষা দাঁতনের সোনাকানিয়া সংলগ্ন এলাকা থেকে এসে খলাগেড়িয়ার এই পুকুর পা়ড়ে বসতি গড়েছিলেন, তখন থেকেই চলছে প্রতীক্ষা। সে জন্যই ভোটার কার্ডে নাম তোলা, ভোট দেওয়া। তবে স্বাধীন দেশের নাগরিকের এই পরিচয়পত্র বৈশাখী, দেবেনদের কিছুই দেয়নি। অতীত সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলতে না পারায় ‘সাধারণ’ হিসেবে ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে। ভোটার কার্ডে সকলের পদবিও এক— বাগাল (অর্থ রাখাল)। তাই এলাকার নাম ‘বাগালপাড়া’। সবংয়ের ক্ষেত্র সমীক্ষক শিক্ষক শান্তনু অধিকারী, গৌতম পাত্র বলেন, “ওঁরা আসলে খেরিয়া। কিন্তু ভোটার কার্ড হওয়ার সময় কিছু বলতে না পারায় বাগাল হয়ে গিয়ে তফসিলি জাতি, জনজাতির তকমা হারিয়েছেন ওঁরা।” হারিয়েছে, সরকারি সুযোগ-সুবিধাও।

ভোটার কার্ড অন্যের কাছে কেন? বাগালপাড়ার বৈশাখীর জবাব, “বাড়ি থেকে যদি হারিয়ে যায়! তাই জয়দেববাবুর কাছে রেখেছি।” জয়দেববাবু সম্পন্ন। জমিজমা রয়েছে। কিন্তু তিনি কেন অন্যের ভোটার কার্ড নিজের জিম্মায় রাখেন? জবাব খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল পরম্পরার কথা। জয়দেবাবু জানালেন, ওঁদের পরিবারই মাঠের কাজের জন্য দেবেন, বচ্চনের বাপ-ঠাকুরদাদের এখানে এনেছিল। সেই থেকে পরিবারগুলির অভিভাবক জয়দেববাবুরাই। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের সচেতনতার অভাব। কেউ দেখেও না। তাই ভরসা করে ভোটার কার্ড আমাকে দিয়ে রেখেছেন।”

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোট কবে? আজই চূড়ান্ত রায় দেবে কোর্ট

প্রতি বছর ভোটার দিবস পালন করে নির্বাচন কমিশন। ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে সচেতনতা শিবির করে বোঝানো হয় এই সচিত্র পরিচয়পত্রের গুরুত্ব। বাগালপাড়া সে সব থেকে অনেক দূরে। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার বলছেন, “সবংয়ের এমন এলাকার কথা আমি শুনিনি। খবর নেব।”

খবর নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। তবে শুধু ভোটের আগে। গত নির্বাচনে সিপিএমের টিকিটে জিতে তৃণমূলে আসা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মাধব পাত্র বলেন, “বিডিও প্রতিনিধি পাঠিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন মাস খানেক আগে। এলাকায় নলকূপ হয়েছে। কিন্তু সচেতনতা না ফিরলে কী করে হবে?”

সবং যাঁর খাসতালুক, সেই সাংসদ মানস ভুঁইয়াও দায় এড়াচ্ছেন। তাঁর কথায়, “ওই এলাকা একসময়ে সিপিএমের দুর্গ ছিল। গত নির্বাচনেও ওই গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে ছিল। পরে তৃণমূল পেয়েছে।’’

বাগালপাড়া যদিও কিছুই পায়নি। হন্যে হয়ে খুঁজছে উন্নয়ন।

West Bengal Panchayat Elections 2018 West Bengal Panchayat Elections 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy