Advertisement
E-Paper

সিঙ্গুরে সন্ধান মনোজ-খুনের আগ্নেয়াস্ত্রের

ধৃত সাত দুষ্কৃতীকে নিয়ে শুক্রবার রাতে তল্লাশি চালিয়ে সিঙ্গুরের ন’পাড়ার একটি কলাবাগানের মাটি খুঁড়ে ওই দু’টি সেভেন এমএম-সহ আটটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১০টি কার্তুজ উদ্ধার করে পুলিশ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:০০
সন্ধান: সাংবাদিক বৈঠক করে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দেখাচ্ছেন পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার। ছবি: তাপস ঘোষ

সন্ধান: সাংবাদিক বৈঠক করে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দেখাচ্ছেন পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার। ছবি: তাপস ঘোষ

দু’টি সেভেন এমএম রিভলভার থেকে পর পর পাঁচটি গুলি ছোড়া হয়েছিল ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায়ের মৃত্যু নিশ্চিত করতে।

ধৃত সাত দুষ্কৃতীকে নিয়ে শুক্রবার রাতে তল্লাশি চালিয়ে সিঙ্গুরের ন’পাড়ার একটি কলাবাগানের মাটি খুঁড়ে ওই দু’টি সেভেন এমএম-সহ আটটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১০টি কার্তুজ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, আটটির মধ্যে ছ’টি ছিল ওয়ান শটার। গত ২১ নভেম্বর রাতে ওই আটটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েই দুষ্কৃতীরা ভদ্রেশ্বর গেটবাজারের মুখে মনোজের পথ আগলে দাঁড়িয়ে ছিল। সেভেন এমএম দু’টি থেকেই গুলি করা হয়। আর এই গোটা ঘটনার মূল চক্রী নির্দল কাউন্সিলর রাজু সাউ, এমনটাই দাবি পুলিশের। তবে, তাঁকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি।

শনিবার সকালে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার সাংবাদিক সম্মেলন করে মনোজ খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলি দেখান। পুলিশ জানায়, খুনের রাতে সাত দুষ্কৃতী দু’টি স্কুটারে চেপে পালিয়েছিল। তল্লাশিতে সিঙ্গুরের বিদ্যুৎপল্লি থেকে সেগুলিও উদ্ধার হয়েছে। দেবু পাকড়ে নামে এক ধৃত এক দুষ্কৃতীর আত্মীয়ার বাড়ির পিছনে সেগুলি ছিল।

শুক্রবার রাতে সাত দুষ্কৃতীকে পুলিশ প্রথমে ভদ্রেশ্বরে নিয়ে আসে। ২১ নভেম্বর রাতে কী ভাবে তারা পুরো পরিকল্পনা করে মনোজকে খুন করে, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তা সবিস্তার তদন্তকারীদের জানায় ধৃতেরা। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘এই তদন্তের জাল অনেকটাই গুটিয়ে ফেলা গিয়েছে। ধৃতদের জেরায় জানা গিয়েছে, মূল চক্রী নির্দল কাউন্সিলর রাজু সাউ। আরও এক দুষ্কৃতীর নাম পাওয়া গিয়েছে। এখন ওই দু’জনকে ধরতে জোর তল্লাশি চলছে।’’

ধৃতেরা কী জানিয়েছে পুলিশকে?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মনোজের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরেই সাত দুষ্কৃতী দু’টি স্কুটারে দ্রুত সিঙ্গুরের ন’পাড়ায় চলে যায়। দুষ্কৃতীরা জানিয়েছে, কলাবাগানের মাটি খুঁড়ে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও কার্তুজ ভরে রেখে দেয়। তার পরে বিদ্যুৎপল্লিতে যায়। স্কুটার রেখে দিয়ে তারা রাজু সাউয়ের সাহায্যে সড়কপথে গাড়িতে বর্ধমানে পৌঁছয়। সেখান থেকে রাজু অন্যত্র চলে যান। দুষ্কৃতীরা ট্রেনে দুর্গাপুরে যায়। এরপরে সেখান থেকে আসানসোল হয়ে পটনা। পটনায় এক রাত কাটিয়ে মোগলসরাই। তারপরে বারাণসী গিয়ে তারা লজ ভাড়া করে। সঙ্গের টাকা কমে যাওয়ায় প্রভু চৌধুরী (বাবান) নামে তাদের এক সঙ্গী একদিনের জন্য পটনায় ফেরে। সেখান থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে সে ফের বারাণসী ফেরে। বারাণসীর লজে হানা দিয়ে দিনকয়েক আগে সাত দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরলেও বাবান পালায়।

কিন্তু ভদ্রেশ্বরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজু সাউকে কেন মূল চক্রী মনে করছেন তদন্তকারীরা?

পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, ওই ওয়ার্ডে পুকুর বোজানো বা পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজে মনোজ বাধা দেওয়ায় রাজু ক্ষুব্ধ ছিল। মনোজের আপত্তিতে রাজু চৌধুরী এবং তার ভাই রতনের (দু’জনেই ধৃত) জুটমিল থেকে রোজগারে টান পড়েছিল। দু’পক্ষেরই স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা একসঙ্গে ‘পথের কাঁটা’ সরিয়ে দিতে আসরে নামে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘রাজু সাউ মনে করেছিল, খুনের ঘটনায় রতন এবং তার ভাইয়ের নাম সামনে আসায় সে আড়ালে থেকে যাবে। পথের কাঁটা সরে যাওয়ার সুযোগ সে নেবে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।’’

এখন তদন্তকারীদের সামনে মূল প্রশ্ন চারটি। রাজু কোথায়? বাবান কোথায়? দুষ্কৃতীদের অস্ত্রশস্ত্র কোথা থেকে এল এবং পটনায় কে বাবানকে টাকা জোগাল?

পুলিশ কমিশনার মনে করছেন, ধৃতদের জেরা করে সব প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে।

Bhadreswar Miscreants Arms ভদ্রেশ্বর মনোজ উপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy