Advertisement
E-Paper

বিল এত টাকার! তদন্ত চান মুখ্যমন্ত্রী

রোগ সারাতে হাসপাতালে যান মানুষ। এ বার হাসপাতালের রোগ সারানোর পালা। চিকিৎসার খরচের হিসেব ফুলিয়েফাঁপিয়ে দেখিয়ে রোগীকে ঠকানোর অভিযোগ বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে নতুন নয়। এ ব্যাপারে কলকাতার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উপর এমনিতেই চটে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪০

রোগ সারাতে হাসপাতালে যান মানুষ। এ বার হাসপাতালের রোগ সারানোর পালা।

চিকিৎসার খরচের হিসেব ফুলিয়েফাঁপিয়ে দেখিয়ে রোগীকে ঠকানোর অভিযোগ বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে নতুন নয়। এ ব্যাপারে কলকাতার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উপর এমনিতেই চটে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নের শীর্ষ সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে এ বার কিছু ভয়াবহ অভিযোগ পেয়ে পুরোদস্তুর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই বেসরকারি মালিকানায় থাকা এক শ্রেণির হাসপাতালের রোগ সারাতে কড়া ওষুধের ব্যবস্থা করবেন তিনি।

গত সপ্তাহেই কলকাতার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রচুর টাকার বিল ধরানোর অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে নতুন করে আসে। গত সোমবার বিধানসভায় এসে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মমতা। সূত্রের খবর, সেই সময়েই স্পিকার মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, বেশ কিছু বিধায়কের চিকিৎসার খরচ পরিশোধের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যে বিল এসেছে, তাতে গরমিল রয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। যেমন দেখা গিয়েছে, একটি হাসপাতাল বেড-ভাড়া বাবদ একবার ৬ হাজার টাকা চার্জ করেছে, ক’দিন বাদে আবার ওই একই বেডের ভাড়া দ্বিগুণ ধরা হয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অস্ত্রোপচার বাবদ যে খরচ দেখানো হয়েছে, তা একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না। কখনও আবার একই পরীক্ষার জন্য খরচ বিভিন্ন রকম দেখানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে স্পিকার জানান, কোনও বিধায়কের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের তরফে ১৪ লক্ষ টাকার বিল পাঠানো হয়েছে, কারও বিল ১১ লক্ষ টাকার।

প্রসঙ্গত বিধায়কদের চিকিৎসার খরচ পুরোটাই বহন করে সরকার। হাসপাতালের তরফে বিধানসভায় বিল পাঠানো হয়। সরকার তা পরিশোধ করে। সূত্রের খবর, স্পিকারের কাছ থেকে সব শুনেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এ ভাবে লোক ঠকানো যে এক শ্রেণির বেসরকারি হাসপাতালের ‘প্র্যাকটিস’ হয়ে গিয়েছে সেটা তিনিও জানেন। বিধায়ক তথা সরকারকে যদি কেউ এ ভাবে ঠকাতে পারে, তা হলে সাধারণ মানুষকে কতটা প্রতারিত হচ্ছেন, সহজেই বোধগম্য। এর তদন্ত হওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়া মাত্র, চার জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন স্পিকার। বেসরকারি হাসপাতালগুলির পাঠানো

বিল খতিয়ে দেখে তাঁদের দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তার পর সংশ্লিষ্ট সব হাসপাতালের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।

আরও পড়ুন:

চিটফান্ড তদন্তে আরও জায়গা চাইল সিবিআই

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে স্পিকার অবশ্য কিছু বলতে চাননি। তবে চার জন চিকিৎসককে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। অন্য দিকে নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, চিকিৎসার খরচ ফুলিয়েফাঁপিয়ে দেখানোর অভিযোগ পেয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি এবং পূর্ব কলকাতার একটি হাসপাতালের উপর আগে থেকেই অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক স্তরে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই বেসরকারি হাসপাতালগুলির উপর নজর রাখতে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। তা আইনি পথে হতেও পারে অথবা নজরদারির জন্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্তও নিতে পারে নবান্ন।

মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ নিয়ে এ দিন বেসরকারি হাসপাতাগুলির কাছে তাঁদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। এ ব্যাপারে অ্যাপোলো হাসপাতালের সিইও রূপালি বসু বলেন, ‘‘উনি কী বলেছেন ঠিক জানি না। আমাদের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালের বিল নিয়ে সব সময়ই প্রশ্ন ওঠে। তবে একটা কথা বুঝতে হবে যে, বেসরকারি হাসপাতালগুলি সমাজসেবা করতে আসেনি, ব্যবসা করতে এসেছে। তারা লাভের কথা ভাববেই। অবশ্য সেটা যেন অস্বাভাবিক কিছু না-হয় সেটা মাথায় রাখতে হবে।’’ রূপালির বক্তব্য, রোগীর পরিবারকে প্রতিদিন ফিনান্সিয়াল কাউন্সেলিং করতে হবে। কোন কোন পরিষেবার জন্য কী কী টাকা নেওয়া হচ্ছে সব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে হবে। আগামী দিন কী খরচ হতে পারে তার আভাসও দিতে হবে, যাতে তাঁরা তৈরি থাকতে পারেন। এটা না থাকলেই অবিশ্বাসের বাতাবরণ এবং প্রতারিত হওয়ার ধারণা জন্মাবে। শহরের আর একটি বেসরকারি হাসপাতালের মুখপাত্র আবার বলেন, কোনও হাসপাতাল বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে টাকা নিচ্ছে, তা রোগীর কাছে বেশি মনে হতেই পারে। কিন্তু দেখা যাবে, ওই পরিষেবা দিতে হাসপাতালের যে খরচ হচ্ছে সেই তুলনায় তা সঙ্গত। তা ছাড়া রোগীর পরিবারেরও বোঝা উচিত, ফুটপাথের হোটেল আর পাঁচতারা হোটেলের বিলে তফাত থাকবেই। বড় হাসপাতালে ভর্তির আগে এ ব্যাপারে সম্মতিপত্র সই করেই তাঁরা ঢোকেন। তার পর বিলের টাকা বাড়ার অভিযোগ করা যুক্তিযুক্ত নয়।

Mamata Banerjee Hospital Charge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy