Advertisement
E-Paper

অভিসন্ধি নেই, সংসদের মাথায় বসে বললেন পার্থ

শিক্ষামন্ত্রীকেই চেয়ারম্যান করে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা সংসদ ঢেলে সাজার বিল পাশ হয়ে গেল বিধানসভায়। দফাওয়াড়ি বাজেট অধিবেশনে সোমবার বিলটি পেশ হওয়ার পরেই শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি এবং কিছু পরিমার্জন আনার প্রস্তাব ভোটাভুটির মাধ্যমে খারিজ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত তা পাশ হয়ে গিয়েছে এ দিনই। বিলের বিরোধিতায় ওয়াকআউট করেন বাম বিধায়কেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৩:৫৪

শিক্ষামন্ত্রীকেই চেয়ারম্যান করে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা সংসদ ঢেলে সাজার বিল পাশ হয়ে গেল বিধানসভায়।
দফাওয়াড়ি বাজেট অধিবেশনে সোমবার বিলটি পেশ হওয়ার পরেই শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি এবং কিছু পরিমার্জন আনার প্রস্তাব ভোটাভুটির মাধ্যমে খারিজ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত তা পাশ হয়ে গিয়েছে এ দিনই। বিলের বিরোধিতায় ওয়াকআউট করেন বাম বিধায়কেরা।

সরকার পক্ষের যুক্তি, রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান বা রুসা-কে গুরুত্ব দিয়েই উচ্চ শিক্ষা সংসদ ঢেলে সাজা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করার পাশাপাশি শিক্ষা দফতরের কোনও সচিব পর্যায়ের আধিকারিককে ভাইস চেয়ারম্যান (প্রশাসন) এবং সার্চ কমিটির সুপারিশ করার কোনও শিক্ষাবিদকে ভাইস চেয়ারম্যান (শিক্ষা) হিসাবে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে বিলে। স্নাতক, স্নাতকোত্তরে ভর্তির জন্য অভিন্ন প্রবেশিকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপরে নজরদারি, মূল্যায়ন ইত্যাদি দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে সংসদকে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, মন্ত্রিত্ব সামলে তাঁর পক্ষে প্রতিদিন সংসদের যাবতীয় কাজ দেখা সম্ভব হবে না। ভাইস চেয়ারম্যান পদে-থাকা ওই শিক্ষাবিদের উপরেই মূল দায়িত্ব থাকবে। এই বিলের সুবাদে শিক্ষায় দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না বলেও শিক্ষামন্ত্রীর দাবি।

বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং এসইউসি বিধায়কেরা অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ, শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয় অনুপ্রবেশের প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন। যে রুসা-কে ঢাল করে শিক্ষামন্ত্রী বিলটির সমর্থনে বরাবর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপরেখা মেনেই যে সংসদের চেয়ারম্যান পদে মন্ত্রীকে বসানো যায় না, তা-ও উল্লেখ করেন তাঁরা। কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব আলোচনার জন্য বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। চেয়ারম্যান পদে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর বদলে কোনও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বা বিদ্বজ্জনকে বসানো এবং তিন সদস্যের সার্চ কমিটির মাধ্যমে চেয়ারম্যান বাছাইয়ের জন্য বিলটিতে পরিমার্জন আনার প্রস্তাব দেন সিপিএম বিধায়ক এস এম সাদি। কোনও প্রস্তাবই গৃহীত হয়নি।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকার বিল পাশ করিয়ে নিলেও বিরোধীদের আশঙ্কা, এর ফলে শিক্ষাক্ষেত্রের স্বাধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ আরও বাড়বে। উচ্চ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিচালনার যুক্তি দেখিয়ে সংসদ ঢেলে সাজার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার ক্ষুণ্ণ হবে বলেই যুক্তি দেন এসইউসি বিধায়ক তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তরুণকান্তি নস্কর। বিল অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ভর্তির জন্য অভিন্ন প্রবেশিকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উচ্চ শিক্ষা সংসদকে। কী ভাবে ছাত্রভর্তি হবে, তা যদি উচ্চ শিক্ষা সংসদের বকলমে সরকারই করে, তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির থাকার দরকার কী, সে প্রশ্ন তোলেন তরুণবাবু। পরে নিজের ঘরে পার্থবাবু অবশ্য জানান, পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অভিন্ন প্রবেশিকার আর্জি জানালে তবেই তাতে অনুমোদন দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না।

ডিএসপি-র বিধায়ক প্রবোধ সিংহ বিল-বিতর্কে অভিযোগ করেন, সংসদকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারের বাইরে রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার বজায় রাখার যে উদ্দেশ্য রুসা-য় উল্লেখ করা হয়েছে, তা মানা হচ্ছে না। বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন সরকার ও দলের মধ্যে যে সূক্ষ্ম বিভাজন আছে, তা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিধানসভার বাইরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও বলেন, ‘‘নীতিগত ভাবে আমরা এই বিলের বিরুদ্ধে। এই সরকার অনিয়ম হলে হস্তক্ষেপ করে না। অনিয়ম যাতে হতে পারে, তার জন্য হস্তক্ষেপ করে!’’

অভিযোগ উড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, রুসা-র রূপরেখা মেনে উচ্চ শিক্ষা সংসদ ঢেলে সাজতে হবে। রুসা প্রকল্পের টাকাও আসবে সংসদের মাধ্যমে। তাই এই সংসদে সরকারের ভূমিকা রাখা ছাড়া উপায় নেই। গুজরাত, কর্নাটক, কেরল ইত্যাদি রাজ্যেও সংসদের চেয়ারম্যান পদে শিক্ষামন্ত্রীকেই রাখা হয়েছে বলে পার্থবাবুর দাবি। শিক্ষাবিদ হলেই কেউ যে রাজনীতির ছোঁয়াচের বাইরে থাকবেন, তার নিশ্চয়তাই বা কোথায়, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রীর যুক্তি, নতুন প্রকল্প রুসা-র হাল প্রথম থেকেই শক্ত হাতে ধরতে হবে। কিন্তু শক্ত হাতে ধরার জন্য শিক্ষামন্ত্রীকেই কেন সংসদের মাথায় বসাতে হবে, সে ব্যাখ্যা মেলেনি উচ্চ শিক্ষা দফতরের কর্তাদের কথাতেও। এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘রুসায় বলা হয়েছে উচ্চ শিক্ষা সংসদের গুরুত্ব বাড়িয়ে ঢেলে সাজতে হবে।’’ যদিও শিক্ষামন্ত্রী বিল পাশের পরে বলেছেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোনও অভিলাষ নেই। যে হেতু বর্তমানে সংসদের ব্যাপ্তি ও দায়িত্ব বাড়ানো হয়েছে, তাই কিছু পরিবর্তন আনতে হল। রাজনৈতিক অভিসন্ধি এর মধ্যে নেই।’’

Assembly Bill passed congress left front Partha Chatterjee suryakanta misra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy