Advertisement
০৭ মে ২০২৪

এখন সোশ্যাল মিডিয়াই অস্ত্র গুরুঙ্গদের

যে ভাবে এ দিন সিংমারিতে গোলমাল বাধানো হয়েছে, যে ভাবে আরও একাধিক জায়গা থেকে মিছিল করতে তৈরি হয়েছিল মোর্চা, তার পিছনে পাকা মাথার পরকল্পনা থাকতে বাধ্য, মনে করছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ০৩:৪৩
Share: Save:

বিমল গুরুঙ্গ, বিনয় তামাঙ্গ কোথায় রয়েছেন, কেউ জানে না। কিন্তু যে ভাবে এ দিন সিংমারিতে গোলমাল বাধানো হয়েছে, যে ভাবে আরও একাধিক জায়গা থেকে মিছিল করতে তৈরি হয়েছিল মোর্চা, তার পিছনে পাকা মাথার পরকল্পনা থাকতে বাধ্য, মনে করছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।

এখন প্রশ্ন, তা হলে কে, কী ভাবে এই ছক কষল? আর তার কথাই বা কী করে এত কর্মীর কাছে পৌঁছে গেল?

এখানেই শেষ নয়। সিংমারির গোলমালের পরে পুলিশের গুলিতে তাঁদের কর্মীদের মৃত্যুর অভিযোগ তোলেন বিনয় তামাঙ্গ। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দ্রুত পৌঁছে যায় পাহাড় থেকে সমতল, সর্বত্র। সেখানে মৃতদেহের ছবি, গুলির ছবি— সবই ছিল। তার পরে বিকেলে গোপন আস্তানা থেকে ভিডিও পাঠানো শুরু করেন গুরুঙ্গ।

আরও পড়ুন: ডুয়ার্সে বন্‌ধের ডাক, রোখার প্রস্তুতিও তুঙ্গে

প্রথম ভিডিও-বার্তায় ডাক দেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার। রাতে দ্বিতীয় ভিডিও-তে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর তোলা অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, তাঁদের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে কোনও যোগ নেই। একই সঙ্গে তিনি জানান, রবিবার সকাল ১০টায় চকবাজার থেকে তিন নিহতের দেহ নিয়ে অন্তিমযাত্রা হবে। সেখানে পাহাড়ের সবাইকে হাজির থাকতেও ডাক দেন তিনি।

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে এ ভাবেই যাবতীয় কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে মোর্চা। সরকারি সূত্রের খবর, তাই কী ভাবে সামগ্রিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, সে জন্য স্বরাষ্ট্র দফতর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে। কারণ, নানা রটনা বাড়িয়ে বড় গোলমাল বাধানোর আশঙ্কাও করছেন গোয়েন্দারা। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে কেউ যদি পাহাড় জুড়ে লাগাতার গোলমালের ছক কষে, তা হলে বড় ধরনের হিংসার বাতাবরণ তৈরি করা সম্ভব।

গোয়েন্দারা খবর পেয়েছেন, পাহাড় থেকে সেই অশান্তি ডুয়ার্সের সমতলেও ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। পাহাড়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেক সময়ে ডুয়ার্স থেকে বাড়তি বাহিনী আনা হয়। কিন্তু ডুয়ার্সেও অশান্তি ছড়ালে সেখান থেকে বাহিনী সরানো কঠিন হয়ে পড়বে।

সরকারি এক কর্তা জানান, সব দিক মাথায় রেখেই অশান্তির উৎসমুখ বন্ধ করতে পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে রাজ্য। প্রয়োজনে কেন্দ্রের কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হবে।

শুক্রবার মাঝ রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা অবধি সব কিছু ছক কষেই হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দাদের অনেকে। যেমন, সকালে ৯টা থেকে দার্জিলিং শহর লাগোয়া ৭ জায়গা থেকে মিছিল শুরু হয়। গোড়ায় ’শখানেক লোক নিয়ে শুরু হলেও বেলা ১০টার মধ্যে প্রতি মিছিলে অংশগ্রহণকারী সংখ্যা গড়ে পাঁচ-সাতশো হয়ে যায়।

যেখানে পুলিশ সংখ্যায় তুলনামূলক কম, সেখানে কিছুক্ষণ স্লোগানের পরে হামলা হয় মিছিল থেকে। সিংমারিতে তো তিনটে মিছিল একসঙ্গে হয়ে পুলিশকে কোণঠাসা করে দেয়। সেখানে সেনা-আধা সেনা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই চকবাজারের মুখে হাজার দুয়েক মোর্চা সমর্থক মিছিল করে শহরে ঢুকতে চান। ফের আধা সেনা ও পুলিশের বিশেষ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

মোর্চার একটি সূত্রের তরফে জানানো হয়েছে, দলের নেতারা প্রতি রাতে একাধিকবার ডেরা পাল্টাচ্ছেন। এই অবস্থায় তাঁদের বড় ভরসা সোশ্যাল মিডিয়া। অতীতে দেশের নানা এলাকায় বড় মাপের অশান্তি, গোলমাল এড়াতে ইন্টারনেট ব্যবহারে সাময়িক ভাবে রাশ টানার নজির রয়েছে।

পাহাড়ে তেমন হতে পারে কি না, তা নিয়েও এখন মোর্চার অন্দরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মোর্চার এক প্রবীণ নেতা জানান, তাঁরা সব রকম পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত হচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE