Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বাজির আড়ালে বোমা নিয়ে গোলা কোর্টের

পটকা-বাজির আড়ালে তৈরি হচ্ছে মানুষ মারার দেশি বোমা। এই মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

পটকা-বাজির আড়ালে তৈরি হচ্ছে মানুষ মারার দেশি বোমা। এই মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে গত বছর মে মাসে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে আট নাবালক-সহ ১২জন নিহত হয়। আইবি রিপোর্টে জানায়, ওখানে দেশি বোমাও তৈরি হতো। তার পরও গত বছরই নারায়ণগড়ে, আর এ বছর বজবজে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

এত দিন এ নিয়ে ছিল অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, পুলিশি রিপোর্ট। কিন্তু এ বার রাজ্যের গাফিলতির কথা বলল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

বিচারপতি এসপি ওয়াংদি ও বিশেষজ্ঞ সদস্য পি সি মিশ্রকে নিয়ে গড়া জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় ডিভিশন বেঞ্চের মতে, আতসবাজি তৈরির বহু কারখানা বেআইনি ভাবে চলছে। নজরদারি চালিয়ে এগুলি বন্ধ করার কথা যাঁদের তাঁদের গাফিলতি ও অপদার্থতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

রাজ্যে বেআইনি পটকা-বাজি তৈরির আড়ালে মারণ-বোমা তৈরি বন্ধ করতে গত অক্টোবরে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হন পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। সেই মামলাতেই গত ২ মে পরিবেশ আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘প্রশাসনের উদাসীনতার কথা আমরা বহু দিন ধরেই বলছি। এ বার আদালতও বলল।’’

জাতীয় পরিবেশ আদালতের কথায়, ‘‘দেশি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাগুলির কথা বিবেচনা করে রাজ্য সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ করতে হবে যাতে বেআইনি বাজি কারখানা চলতে না পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘ সীমান্তের কথা মাথায় রেখে এই ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

পরিবেশ আদালত এই নির্দেশ যে দিন দিয়েছে ঘটনাচক্রে সে দিনই বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মালদহের বৈষ্ণবনগর এলাকার ঘেরা মহব্বতপুর গ্রামে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে চার জন নিহত হন। তার পরে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক প্রয়োজনীয় সাবধানতা ছাড়াই নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে দু‌র্ঘটনায় নিহত হন সিআইডি-র দু’জন।

বাজি কারখানাগুলির উপরে কড়া নজর রাখার কথা মূলত পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মতো সংস্থার। তাই এই বিষয়ে নজরদারিতে গাফিলতির কথা বলতে গিয়ে আদালত পুলিশ ও পর্ষদের অপদার্থতার বিষয়টিই বুঝিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘পরিবেশ আদালত যে রকম নির্দেশ দিয়েছে, বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করে দিতে আমরা তেমনই ব্যবস্থা নেব।’’ পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের বক্তব্য, ‘‘পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা ঠিক করতে আগামী সপ্তাহে পর্ষদ বৈঠকে বসবে।’’

গত বছর ১৬ অক্টোবর জাতীয় পরিবেশ আদালত রাজ্যের বেআইনি বাজি প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তার পরে কিছুই হয়নি। এমনকী পরিবেশ আদালত বেআইনি বাজি কারখানার সংখ্যা, তাদের নাম-ঠিকানা জমা দিতে বললেও পর্ষদ ও পুলিশের দেওয়া এক-এক রকম হিসেব থেকে বিভ্রান্তি ছড়ায়। আবার আর এক রকম হিসেব দেয় বাজি উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের সংস্থা।

সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলছেন, ‘‘পরিবেশ আদালতের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’’ কিন্তু তাঁর দাবি, ‘‘কাটোয়ায় আতসবাজি কারখানার আড়ালে ৪০০ কারিগরকে নিয়ে মারণ-বোমা তৈরি করছেন লালগোলার এক বাসিন্দা। পুলিশ-প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।’’

পরিবেশ আদালত জানিয়েছে, বাজি কারখানার অনুমতি প্রথমে দেবে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অর্গানাইজেশন (পেসো)। তার পরে অনুমোদন লাগবে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। সেই অনুমোদনের কথা জানাতে হবে পুলিশকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bombs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE