Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দিনভর বিভ্রান্তি বিমান থেকে রেলেও

শুক্রবার মাঝ রাত পর্যন্ত পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট দিয়ে বিমানের টিকিট কাটা যাবে, জানিয়ে দিয়েছে সমস্ত বিমান সংস্থা। দূরপাল্লার যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ট্রেনের ভিতরে খাবার বা অন্য কোনও পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট আপাতত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলও।

হাওড়া স্টেশনে প্রি-পেড ট্যাক্সি কাউন্টারে নোটিস। বুধবার। — দীপঙ্কর মজুমদার

হাওড়া স্টেশনে প্রি-পেড ট্যাক্সি কাউন্টারে নোটিস। বুধবার। — দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩০
Share: Save:

শুক্রবার মাঝ রাত পর্যন্ত পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট দিয়ে বিমানের টিকিট কাটা যাবে, জানিয়ে দিয়েছে সমস্ত বিমান সংস্থা। দূরপাল্লার যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ট্রেনের ভিতরে খাবার বা অন্য কোনও পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট আপাতত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলও।

তবে শর্ত আছে। বিমানযাত্রীর সঙ্গে যদি অতিরিক্ত মালপত্র থাকে এবং তার জন্য নিয়ম মতো যাত্রীকে যদি টাকা দিতে হয়, তখন কিন্তু ওই বড় নোট নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইন্ডিগো। এমনকী, বিমানের ভিতরে যে খাবার কিনে খেতে হয় সেখানেও পাঁচশো ও হাজারের নোট গ্রহণ করবে না এই বিমান সংস্থা।

তবে এই নোট-নির্দেশ নিয়ে বিমান সংস্থাগুলির মধ্যে মতবিরোধও দেখা দিয়েছে। স্পাইসজেট জানিয়েছে, খাবার ও অতিরিক্ত মালপত্রের ক্ষেত্রেও তারা ওই দু’ধরনের নোট নেবে। তবে, যেমন শুক্রবার মাঝ রাত পর্যন্ত টিকিট কাটার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তেমন খাবার ও অতিরিক্ত মালপত্রের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা পাওয়া যাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

একই ভাবে এয়ার ইন্ডিয়া ও জেট এয়ারওয়েজও ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত ওই নোট ব্যবহার করে তাদের টিকিট যেমন কাটা যাবে, তেমনই অতিরিক্ত মালপত্র বা অন্য সুবিধার ক্ষেত্রেও ওই নোট ব্যবহার করা যাবে। জেট জানিয়েছে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত শুধু টিকিট কাটার ক্ষেত্রেই ওই দু’ধরনের নোট ব্যবহারের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। বাকি লেনদেনের ক্ষেত্রে ওই দুই ধরনের নোট নেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে যাত্রীরা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে।

বুধবার রাতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরে কলকাতা বিমানবন্দরের প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথে পাঁচশো টাকার নোট নেওয়া হয়েছে। ট্যাক্সি বুথের এক কর্মীর কথায়, ‘‘বেশির ভাগ যাত্রীই খুচরো টাকা দিয়ে ট্যাক্সি বুক করেছেন। কিন্তু, প্রায় ৩৫০-৪০০ টাকা যেখানে ভাড়া, যেখানে দেখা গিয়েছে যাত্রীর কাছে ছোট নোট নেই, আমরা পাঁচশোর নোট নিয়েছি।’’ অনেক বিদেশিরাও এ ভাবে ৫০০ টাকার নোট দিয়ে ট্যাক্সি বুক করেছেন বলে জানা গিয়েছে। ভলভো বাসের ক্ষেত্রেও যে যাত্রীর কাছে খুচরো থাকছে না, তাঁর কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে ভলভোর এক কন্ডাক্টর জানিয়েছেন।

তবে প্রি-পেড বুথের বাইরে ট্যাক্সি ভাড়া করতে গিয়ে কিন্তু দিনভর নাকাল হয়েছেন যাত্রীরা। অভিযোগ, বেশির ভাগ ট্যাক্সিচালকই বলে দিয়েছেন, ‘খুচরো হবে না।’ পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট নেবেন না তাঁরা। অনেক ক্ষেত্রেই ট্যাক্সি করে গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে পাঁচশোর নোট বার করে বিপদে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকে আবার স্টেশনে নেমে ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরে, বাড়ি থেকে টাকা এনে ভাড়া মিটিয়েছেন। ঝামেলা এড়াতে সকাল সকালই বেশ কিছু গ্রাহকের কাছে এসএমএস পাঠিয়ে দিয়েছে কিছু অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সি বুকিং সংস্থা। তারা জানিয়েছে, ‘‘পাঁচশো বা হাজারের নোট চলবে না। অনুগ্রহ করে খুচরো টাকা সঙ্গে রাখুন।’’

অন্য দিকে ট্রেনের পরিষেবার বিষয়টিও শুধু সেই ক’টি ট্রেনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে, যেগুলি প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের ঘোষণার আগেই ছেড়েছে এবং এখনও দৌড়চ্ছে। শুধু সে সব ট্রেনেই খাবার কেনার জন্য বড় নোট ব্যবহার করা যাবে। ইতিমধ্যে ট্রেনগুলির প্যান্ট্রিকারে এই মর্মে নির্দেশ পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল কতৃর্পক্ষ।

মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর পরেই অনেক মানুষ হাওড়া, শিয়ালদহ-সহ বিভিন্ন স্টেশনে গিয়ে বিভিন্ন লোকাল ট্রেনের জন্য স্বল্প দূরত্বের (প্রথম ধাপ) টিকিট নেওয়ার জন্য পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট দিতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে ভিড় বাড়তে থাকায় রেলের পক্ষ থেকেও খুচরো দিতে অস্বীকার করা হয়। পরে আস্তে আস্তে ভিড় কমে যায়। তবে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বুধবার ভোর থেকেই আবারও সেই একই চিত্র দেখা যায়। রেল সূত্রের খবর, ক্রেতারা সবাই পাঁচশো বা হাজার টাকার বিনিময়ে ১০, ১৫ টাকার টিকিট কাটতে চান। কিছু পরে রেলের পক্ষ থেকে রীতিমতো ঘোষণা করে জানিয়ে দেওয়া হয়, সামান্য মূল্যের টিকিটের জন্য অত খুচরো টাকা দেওয়া যাবে না।

তবে কিছুটা জটিল পরিস্থিতি হয় দূরপাল্লার ট্রেনের আসন সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে। অনেকে বাতানুকূল প্রথম শ্রেণির টিকিটই এক সঙ্গে ৬টা করে অথবা বিভিন্ন ট্রেনে ব্লক বুকিং করতে চেয়ে পাঁচশো বা হাজার টাকার নোটে এক সঙ্গে ৬০ হাজার, ৭০ হাজার বা তারও বেশি টাকা জমা দিতে চেষ্টা করেন। ওই সব ক্ষেত্রে কাউন্টারের কর্মীরা প্রত্যেকের সরকারি পরিচয় পত্র দেখতে চাইলে অনেকে ফিরে যান। পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট দিলে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হয়েছে শহরতলির কাউন্টারগুলিতেও।

একই ঘটনা ঘটেছে মেট্রোর স্টেশনগুলিতে। কেউ কেউ এ দিন সামান্য দূরত্বের টিকিটও কাটতে চেয়েছেন পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট ভাঙিয়ে। সকালের দিকে কিছুক্ষণ ডামাডোল চললেও পরে মেট্রোতে অত খুচরো করে দেওয়া যাবে না বলে ঘোষণা করা হয়। তবে মঙ্গলবার রেলের আয় অনেকটাই কমেছে বলে রেল কর্তাদের বক্তব্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Railway station Airport Passenger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE