মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।
দেখনদারির বাজেট। পশ্চিমবঙ্গকে নকল করার বাজেট। রূপায়ণ হবে না, এমন এক বাজেট।
এই বলেই আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় বাজেট সম্পর্কে নিজের মতামত জানানোর জন্য সাংবাদিক সম্মেলন ডাকতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সে ভাবে দেখা যায় না। কিন্তু এ বারের সাধারণ বাজেট শেষ হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিধানসভা চত্বরের মিডিয়া সেন্টারে হাজির হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। এবং জানালেন, এই বাজেট আসলে দেশবাসীর সঙ্গে একটা বড়সড় প্রতারণা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা আসলে একটা এক্সপায়ারি বাজেট।’’ তাঁর ব্যাখ্যা— মোদী সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছে, সরকার আর এক মাস রয়েছে, সুতরাং এই বাজেটে যে সব ঘোষণা শোনা গিয়েছে, তার রূপায়ণ হবে না। রূপায়ণ হবে না জেনেও এমন ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশবাসীর সঙ্গে মোদী সরকার ছলনা করছে বলেও অভিযোগ তৃণমূল চেয়ারপার্সনের।
আরও পড়ুন: ৫ লাখ পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড়, তার উপরে আগের মতোই হিসাব
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন ঠিক কী রকম, তা কেউ জানে না— বাজেটের পরে এই মন্তব্যই করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি ফের বলেছেন, ‘‘দেশে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা চলছে।’’ বাজেটে কৃষকদের জন্য যে সব ঘোষণা রয়েছে, তার প্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘গত চার বছরে এই রকম বাজেট আর একটাও করেনি কেন? কেন গত চার বছরে কৃষকদের জন্য আর একটা লাইনও ঘোষণা করেনি?’’ কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘কিসান সম্মান নিধি’ নামে যে প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে এ বারের বাজেটে, সেটিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের ‘নকল’ বলে দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার সরকারকে দেখে ওই প্রকল্প চালু করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আজকে কৃষকদের জন্য যা ঘোষণা করেছে, তা আমরা কৃষকদের জন্য আগেই ঘোষণা করেছি। এটা আমাদের কৃষকবন্ধুর ফোটোকপি।’’
শুধু কৃষকবন্ধু নয়, কেন্দ্রের আরও অনেক প্রকল্পই পশ্চিমবঙ্গকে নকল করে ঘোষিত হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন দাবি করেছেন। তবে বাজেটে যা ঘোষিত হয়েছে, তার রূপায়ণ আদৌ সম্ভব কি না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সে প্রশ্নও তুলেছেন। তাঁর শ্লেষাত্মক জিজ্ঞাসা, ‘‘কারও মৃত্যু হওয়ার পরে যদি ডাক্তার আসে, তা হলে কি আর কোনও লাভ হয়?’’ তিনি বলেছেন, ‘‘এক মাস সময় রয়েছে এঁদের হাতে। এই বাজেট রূপায়ণের সময় এঁদের হাতে নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই রকম একটা বাজেট করার কোনও নৈতিক অধিকারই এই সরকারের নেই।’’ তৃণমূল চেয়ারপার্সন এ দিন জোর দিয়ে দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার আর ফিরবে না, তাই বাজেটের ঘোষণাগুলিও এই সরকারের পক্ষে রূপায়ণ করা সম্ভব নয়। যে সব প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে, নতুন সরকার এসে যদি সেগুলি বহাল রাখতে না চায়, তা হলে এ সবের রূপায়ণ হবে কী ভাবে? প্রশ্ন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এই বাজেট দেখানোর জন্য যতটা, কাজে করে দেখানোর জন্য ততটা নয়।’’
আরও পড়ুন: রোজ ১৭ টাকা কৃষকদের অপমান, বাজেট নিয়ে মোদীকে তোপ রাহুলের
তফসিলি জাতি ও উপজাতির বিকাশ-সহ নানা ক্ষেত্রে কেন বরাদ্দ কমানো হয়েছে, এ দিন সে প্রশ্নও তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোটবন্দি, জিএসটি, ৫৯ সেকেন্ডে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা, রাফাল— এই সবই এক একটা কেলেঙ্কারি বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেন। কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণাকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘কালো টাকা উদ্ধার করে সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে বলেছিল। আমি তো ভেবেছিলাম, আজই বোধহয় ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেবে। দিল না তো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy