মূত্রথলিতে দু-দু’বার অস্ত্রোপচারের পরে কিছুটা সুস্থ প্রদীপ দে। কিন্তু ওষুধ কিনতে গিয়ে ঘুম ছুটেছে রাজ্য সরকারের ওই অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের। কলকাতা তো বটেই, দিল্লি, মুম্বই ও বেঙ্গালুরুর বহু দোকানে ঘুরেও একটি জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন জোগাড় করতে পারেননি তাঁর পরিবার। অথচ চিকিৎসকেরা বলেছেন, ওই ইঞ্জেকশন নিয়মিত না-দিলে মূত্রথলির ক্ষতস্থান থেকে মারণরোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘গত তিন দিন ধরে বাড়ির লোকেরা দোকানে দোকানে ঘুরেছে। যেখানে আত্মীয়স্বজন আছে, তাঁদেরও খোঁজ করতে বলেছি। কিন্তু দোকানদারেরা জানিয়ে দিয়েছেন, জিএসটি-র জন্য দামী ওষুধ বিক্রি তাঁরা সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখেছেন। ফলে জীবন-মরণের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় কী?’’
প্রদীপবাবুর অসহায়তা হয়তো জানা গিয়েছে, কিন্তু তাঁর মতো অনেকেই এই পরিস্থিতির শিকার, তা হলফ করে বলা যায়। কিন্তু কেন এই টানাটানি? কলকাতায় ওষুধের পাইকারি বাজার বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি-বিদেশি সংস্থার ওষুধের স্টকিস্টরা ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়ায় পাইকারি বাজারে ওষুধের টান পড়েছে। তাই স্বাভাবিক ভাবে পাড়ার দোকানেও সব ওষুধ মিলছে না। একটি বিদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কলকাতার প্রতিনিধি বলেন, ‘‘জিএসটি চালুর পরে কোন ওষুধের দাম কত কমবে বা বাড়বে, তা এখনও সকলে হিসেব করে উঠতে পারেনি। তাই বাজারে জোগান কমেছে।’’ একই কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ওষুধ কম তুলছেন। তাঁদের বক্তব্য, কম দামে ওষুধ কিনে বেশি দামে বেচা যাবে না। বাজারে জিএসটি-র প্রভাব বুঝতে তাই কয়েক দিন অপেক্ষা করাই শ্রেয়। কার্যত তারই খেসারত দিচ্ছেন প্রদীপবাবুরা।
বাগড়ি মার্কেটের ওষুধ ব্যবসায়ী সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘আগে সাতসকালে লম্বা ফর্দ নিয়ে আসতেন খুচরো ব্যবসায়ীয়া। মাস খানেক ধরে সেই ভিড় ক্রমেই হালকা হয়েছে। কিন্তু আমাদের হাত-পা বাঁধা। স্টকিস্ট ওষুধের জোগান কমিয়ে দেওয়ায় পাইকারি ব্যবসা মার খাচ্ছে। এমনকী, রক্তচাপের জন্য অ্যামলোডিপিন গ্রুপের মতো খুব সাধারণ ওষুধও বাজারে অমিল।’’ পাইকারি ওষুধ বিক্রেতাদের সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য জানান, তাঁরা দিন পাঁচেক আগে রাজ্য সরকারের বাণিজ্যকর বিভাগে যোগাযোগ করেছিলেন। ওরাও জিএসটি নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা দেখাতে পারেনি। সুতরাং, মনে হচ্ছে এক-দু’মাস বাজার এমনই চলবে। এর মধ্যেই ওযুধের দাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনপিপিএ শনিবার জানিয়েছে, জিএসটি চালুর পরে এ দিন ৮১৪টি ওষুধের দাম তারা বেঁধে দিয়েছে। এর ক্যানসার, এইচআইভি, ডায়াবেটিস ও সংক্রমণের বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে।
কী বলছেন খুচরো ব্যবসায়ীরা? রামরাজাতলার এক ওষুধের দোকানের মালিক বলেন, ‘‘ওষুধের বাজারে জিএসটি-র কতটা প্রভাব পড়বে, তা পাইকাররাও জানেন না। ওঁরাই ঘুরিয়ে আমাদের কম ওষুধ কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন। তাই যে ওষুধ দোকানে আছে, তাই বেচছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy