Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta High Court

বদলি নয়, বদল চাই! শিক্ষা দফতরকে সরকারি স্কুলের মান উন্নত করার পরামর্শ হাই কোর্টের

পড়ুয়াদের সুবিধার্থে সমস্ত পদক্ষেপ করতে হবে শিক্ষা দফতরকে। এর জন্য রাজ্যের কোষাগারে অর্থের অভাব থাকলে, প্রয়োজনে অন্য জায়গা থেকে অর্থ জোগাড় করতে হবে রাজ্যকে।

শিক্ষা দফতরকে সরকারি স্কুলের মান উন্নত করার পরামর্শ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

শিক্ষা দফতরকে সরকারি স্কুলের মান উন্নত করার পরামর্শ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫১
Share: Save:

রাজ্যের সরকারি স্কুলে শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে স্কুলের পরিকাঠামো উন্নত করা প্রয়োজন। এ বার পড়ুয়াদের সুবিধা অসুবিধাকে গুরুত্ব দেওয়ার সময় হয়েছে। শিক্ষক বদলির এক মামলার পর্যবেক্ষণে এমনই জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর মন্তব্য, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের কথা চিন্তা না করেই অন্য স্কুলে বদলি হয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার মান উন্নয়ন করার দিকে যতটা নজর দেওয়া উচিত, তা দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষকদের আকছার বদলির পরিবর্তে স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে হবে শিক্ষা দফতরকে।’’ উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের অনেক স্কুলে পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব রয়েছে। বেশির ভাগ সরকারি স্কুলে নিরাপত্তাকর্মী নেই। কোনও কোনও স্কুলে পর্যাপ্ত শৌচালয় নেই। অনেক স্কুলে তা থাকলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। দূর করতে হবে পড়ুয়াদের এই অসুবিধাগুলি। বিচারপতি বসুর হুঁশিয়ারি, পড়ুয়াদের সুবিধার্থে সমস্ত পদক্ষেপ করতে হবে শিক্ষা দফতরকে। এর জন্য রাজ্যের কোষাগারে অর্থের অভাব থাকলে, প্রয়োজনে অন্য জায়গা থেকে অর্থ জোগাড় করতে হবে রাজ্যকে। আগামী দিনে স্কুলের পরিকাঠামো বদলের জন্য কড়া নির্দেশ দেবে আদালত।

হাওড়ার রাশপুর গার্লস হাই স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা বাসবী সামন্ত বাড়ির সামনের স্কুলে বদলি চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। স্কুলটি কেমন চলছে তা নিয়ে প্রধানশিক্ষিকা তনিমা পাত্র দাসের কাছে রিপোর্ট তলব করে হাই কোর্ট। রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশপুর গার্লস হাই স্কুলে মোট ছাত্রীর সংখ্যা ৫৮৫ জন। এর জন্য কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষক থাকার কথা। এখন সেখানে রয়েছেন ৮ জন শিক্ষক। ওই স্কুলে ৭ জন শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এই রিপোর্ট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি বসু।

হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ওই স্কুলে অঙ্ক, জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। এই শিক্ষিকা বদলি হলে সেখানে আর ইতিহাসের কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকবেন না। বিচারপতি বসুর মন্তব্য, ‘‘ভাবতে অবাক লাগে এই স্কুলের ছাত্রীদের ইতিহাস পড়াবেন কে, তা নিয়ে কেউ চিন্তিত নন। সম্প্রতি এই স্কুল থেকে চার জন শিক্ষিকা বদলি নিয়ে অন্য স্কুলে গিয়েছেন। আর তা মঞ্জুর করেছেন প্রধানশিক্ষিকা এবং শিক্ষা দফতর। এটা কি জঙ্গলের আইন? বিষয়টি নিয়ে তদন্তও হতে পারে।’’

এর পর প্রধানশিক্ষিকার কাছে ওই স্কুলের পরিকাঠামোর বিষয়ে জানতে চায় উচ্চ আদালত। দেখা যায়, পড়ুয়াদের জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ওই স্কুলে পানীয় জল এবং শৌচালয় থাকলেও অনেক সময় তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। বিচারপতি বসুর প্রশ্ন, ‘‘এত পড়ুয়া, তার উপর মেয়েদের স্কুল। এখানে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে না? কেন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হয়নি? অন্তত এই স্কুলগুলিকে বাঁচানোর চেষ্টা হোক।’’ একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘করুণ অবস্থা থেকে সরকারি স্কুলকে ফেরাতে হবে।’’

ইতিহাসের শিক্ষিকা বাসবীর বদলির আবেদন এখনই মঞ্জুর করেনি হাই কোর্ট। রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি বসু বলেন, ‘‘উৎসশ্রী পোর্টালের অব্যবহার রুখতে হবে। শিক্ষকের থেকে বেশি চিন্তা করতে হবে পড়ুয়াদের জন্য। যে সব স্কুলে পড়ুয়া নেই বা কম সেখান থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেখানে পড়ুয়া থাকবে, সেখানেই শিক্ষকরা থাকবেন।’’ এর আগে অন্য একটি স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছিল হাই কোর্ট। বিচারপতি বসু বলেছিলেন, ‘‘আমাদের ভবিষ্যৎকে তো অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অঙ্ক না শিখিয়েই বড় হচ্ছে বাচ্চারা। এ তো অশনি সঙ্কেত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE