Advertisement
E-Paper

নপরাজিতের এক্তিয়ার নিয়ে মামলা পুলিশেরই

দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। তার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে গেলেন দু’জনেই। রাজ্য পুলিশের ইন্সপেক্টর ও এএসআই পদাধিকারী দুই অফিসারের যুক্তি: রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে এই মুহূর্তে স্থায়ী চেয়ারম্যান নেই। যিনি আছেন, তিনিও প্রাক্তন বিচারপতি নন। উপরন্তু তিন সদস্যের জায়গায় আছেন দু’জন। এমতাবস্থায় শাস্তি-সুপারিশের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁদের প্রশ্ন, এমন সুপারিশ করার এক্তিয়ার কি এই কমিশনের আদৌ আছে?

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০৩:৩৭
নপরাজিত মুখোপাধ্যায়

নপরাজিত মুখোপাধ্যায়

দুই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। তার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে গেলেন দু’জনেই। রাজ্য পুলিশের ইন্সপেক্টর ও এএসআই পদাধিকারী দুই অফিসারের যুক্তি: রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে এই মুহূর্তে স্থায়ী চেয়ারম্যান নেই। যিনি আছেন, তিনিও প্রাক্তন বিচারপতি নন। উপরন্তু তিন সদস্যের জায়গায় আছেন দু’জন। এমতাবস্থায় শাস্তি-সুপারিশের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁদের প্রশ্ন, এমন সুপারিশ করার এক্তিয়ার কি এই কমিশনের আদৌ আছে?

বিধি মোতাবেক, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সুপ্রিম কোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ইস্তফা দেওয়ার পরে রাজ্য পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই ইস্তক মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত নপরাজিতবাবুই কমিশনের অস্থায়ী চেয়ারম্যান হয়ে কাজ চালাচ্ছেন।

এবং প্রাক্তন পুলিশকর্তার নেতৃত্বাধীন কমিশন রাজ্যের পুলিশ বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর হতে পারবে, তা নিয়ে গোড়া থেকেই সংশয় ও বিতর্ক ছিল। এ বার রাজ্য পুলিশের দুই অফিসারের শাস্তির সুপারিশ করেও তারা নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল। ঠিক কী হয়েছিল?

কমিশন-সূত্রের খবর: ঘটনাটা গত বছরের মার্চের। গাড়ি নিয়ে আলিপুরদুয়ারে বেড়াতে গিয়েছিলেন মাটিগাড়ার তিন যুবক— প্রদীপ ঘোষ, মনোরঞ্জন কবিরাজ ও টোটোন ঘোষ। তাঁদের অভিযোগ, ফেরার পথে ঘোকসাডাঙা থানার আইসি দীপোজ্জ্বল ভৌমিক ও এএসআই গোবিন্দ দাস তাঁদের হেনস্থা করেন। জবরদস্তি বিশ হাজার টাকা তো নেনই, এমনকী মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ওঁদের এক দিন থানায় আটকে রাখতেও কসুর করেননি!

গত বছরের ১৯ মার্চ তিন যুবক
কমিশনে অভিযোগ করেছিলেন। তদন্ত সেরে চলতি বছরের ৯ মার্চ কমিশন দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চালু ও ২৪ হাজার টাকা জরিমানার সুপারিশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ২৪ হাজারের মধ্যে ১৪ হাজার টাকা কাটা হবে আইসি দীপোজ্জ্বলবাবুর বেতন থেকে।

একেই চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়েছেন দুই পুলিশ অফিসার। ওঁদের কৌঁসুলি তনুজা বসাকের যুক্তি: কমিশনের চেয়ারম্যানই হোন, বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সেই ব্যক্তিকে নিদেনপক্ষে কোনও হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হতে হবে। আর এই শর্ত পূরণ না-হওয়া পর্যন্ত কমিশনের কোনও সুপারিশ বৈধ হতে পারে না। ‘‘এ ছাড়া দুই সদস্য নিয়ে কমিশন শাস্তির সুপারিশ করেছে। এতে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া লঙ্ঘিত হয়েছে।’’— মন্তব্য তনুজাদেবীর।

বস্তুত রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন স্থায়ী চেয়ারম্যানের পদ খালি পড়ে থাকায় ইতিমধ্যে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। মাস পাঁচেক আগে শিশির মঞ্চে এক অনুষ্ঠানে স্বয়ং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেছিলেন, কমিশনের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অটুট রাখা একান্ত জরুরি। যে জন্য কমিশনে স্থায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগের উপরে তিনি জোর দেন।

তার পরেও রাজ্য সরকারের তরফে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোকবাবুর পর্যবেক্ষণ, ‘‘সদস্য বা স্থায়ী চেয়ারম্যানের পদ খালি থাকা আপাত ভাবে সমস্যাদায়ক হয়তো নয়। তবে এটা প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পরিকাঠামো ও গঠনের পথে অন্তরায়। আদালত প্রশ্ন তুলতেই পারে।’’ আইনজীবী তথা লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, কোনও প্রাক্তন পুলিশকর্মী মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বা কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান হতে পারেন না। ‘‘এটা সুবিচারের পরিপন্থী।’— বলছেন তিনি। অন্য দিকে অশোকবাবুর আমলে কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন যিনি, সেই নারায়ণচন্দ্র শীল মানেন না যে, কমিশনের বর্তমান সুপারিশ অবৈধ। তাঁর দাবি, ‘‘তিন সদস্যের দু’জন থাকলেই সুপারিশ বৈধ। আইনের ধারা অন্তত তেমনই বলে।’’

আদালত কী বলবে, আপাতত তার প্রতীক্ষা। দুই পুলিশ অফিসারের রুজু করা মামলার শুনানি ৯ জুন হাইকোর্টে শুরু হওয়ার কথা। এ সম্পর্কে নপরাজিতবাবুর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়।
এটুকু শুধু বলা যায়, আমাদের সুপারিশের বৈধতা ও এক্তিয়ার রয়েছে। সব কিছু যথাসময়ে আমরা আদালতকে জানাব।’’

Naparajit Mukhopadhyay Parijat Bandyopadhyay police High court Anuja Basak
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy