এক দিকে রোজ ভ্যালি, অন্য দিকে সারদা। দু’দিক দিয়ে দিল্লি চাইছে সাঁড়াশির মতো চেপে ধরতে! সিবিআইয়ের ব্যস্ততা তুঙ্গে। সূত্রের খবর, অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের সিংহভাগ এই জানুয়ারিতেই গুটিয়ে আনার নির্দেশ চলে গিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির কাছে। তাই ঠান্ডা ঘরে চলে যাওয়া সারদা মিডিয়ার মামলা তিন বছর বাদে ফের খুঁড়ে বার করল সিবিআই।
দীর্ঘ দিন চুপ থাকার পরে শুক্রবার তাপস পাল ও মঙ্গলবার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, এর পরে কে? সূত্রের ইঙ্গিত, তদন্তকারীরা লম্বা তালিকা নিয়ে বসে রয়েছেন। একের পর এক ‘প্রভাবশালী’কে ডেকে জেরা করা হবে। গ্রেফতারও করা হতে পারে। ‘‘সারদা, রোজ ভ্যালি ছাড়াও ২৬টি লগ্নিসংস্থার বেআইনি কাজকর্ম নিয়ে তদন্ত চলছে। তাতে অনেক রাঘব- বোয়ালের নাম উঠে আসছে।’’— বলেন এক সিবিআই-কর্তা।
তিন বছরে সিবিআইয়ের তরফে সারদা সংক্রান্ত দু’টি মামলার কথা বলা হয়েছে। সারদা রিয়েলটি ও সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। সারদার মিডিয়া ডিভিশনের মাথায় থাকলেও কুণাল ঘোষকে গ্রেফতার করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল এই দু’টি মামলাতেই। কিন্তু মঙ্গলবার সারদা মিডিয়া সংক্রান্ত যে মামলার চার্জশিট আদালতে জমা পড়ল, সেখানে কুণালের নাম নেই! আছে শুধু সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও তাঁর ছায়াসঙ্গিনী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের নাম। কোন পরিকল্পনা মগজে রেখে এই চার্জশিট, সে জল্পনা পুলিশমহল থেকে রাজনীতিকদের অন্দরে।
সিবিআই সূত্রের খবর: ২০১৩-য় বিধাননগর কমিশনারেটের দায়ের করা মামলার (১০২/২০১৩) ভিত্তিতে সিবিআই সারদা মিডিয়ার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল। তাতে নিম্ন আদালতে সুদীপ্ত সেনের তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। সেই ইস্তক মামলাটি নিয়ে উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। এ দিন হঠাৎ বিধাননগর আদালতে পেশ করা সিবিআই-চার্জশিটে সুদীপ্ত ও দেবযানীর বিরুদ্ধে জালিয়াতি (ধারা ৪২০), বিশ্বাসভঙ্গ (৪০৬) এবং আর্থিক জালিয়াতিতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার (৪০৯) অভিযোগ আনা হয়েছে। দেবযানীর কৌঁসুলি অনির্বাণ গুহঠাকুরতার অবশ্য দাবি, তদন্ত না-করেই চার্জশিট হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই মামলায় এ দিনই দেবযানীর জামিন চাওয়া হয়েছিল। কোর্ট তা মঞ্জুর করেছে।’’ তবে সুদীপ্ত জামিন পাননি। তিনি জেলে। অন্য মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে দেবযানীর ঠিকানাও আপাতত জেল। সারদা-কাণ্ডে মোট সাতটি মামলা দায়ের করেছে সিবিআই।
ঘটনা হল, আপাতদৃষ্টিতে এই মুহূর্তে রোজ ভ্যালি ঘিরেই সিবিআই বেশি তৎপর। মাত্র চার দিনের ফারাকে শাসকদলের দুই সাংসদকে গ্রেফতার করে ভুবনেশ্বরে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রশ্ন উঠেছে, রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি থাকলেও ধৃত দুই সাংসদ কেন ভুবনেশ্বরে?
গৌতম কুণ্ডুর কৌঁসুলি বিপ্লব গোস্বামীর ব্যাখ্যা, ‘‘গৌতমকে গ্রেফতার করেছিল অন্য এক কেন্দ্রীয় সংস্থা— এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই মামলাতেই গৌতম এখন কলকাতার জেলে। তাই সিবিআই ওঁকে ভুবনেশ্বর নিয়ে গিয়ে জেরা করে কলকাতাতেই ফিরিয়ে দিয়েছে।’’ অন্য দিকে সিবিআই রোজ ভ্যালি সংক্রান্ত মামলা রুজু করেছে ভুবনেশ্বর, ত্রিপুরা, অসম ও ঝাড়খণ্ডে। ভুবনেশ্বরের মামলাতেই দুই সাংসদ গ্রেফতার হয়েছেন। তাই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy