ন্যায় বিচার মিলবে না, এই আশঙ্কায় আলিপুর জেলা আদালত থেকে মন্ত্রী মদন মিত্রের জামিন সংক্রান্ত মামলা সরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে সিবিআই। যার জেরে ফের পিছিয়ে গেল মন্ত্রীর জামিন-আর্জির শুনানি। সোমবারই আলিপুর জেলা কোর্টে সেই শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
হাইকোর্টে এমন আবেদনের পিছনে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো ঠিক কী কারণ দেখিয়েছে?
সূত্রের খবর, সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত ইস্টবেঙ্গল ক্লাব-কর্তা দেবব্রত (নিতু) সরকারের জামিন নাকচ করতে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে জেনেও আলিপুরের জেলা বিচারক তাঁর জামিনের শর্ত লঘু করেছেন। এটা সিবিআইয়ের মনঃপূত হয়নি। উপরন্তু আলিপুরের জেলা বিচারক যে ভাবে মদন মিত্রের জামিন-শুনানির তারিখ ১৩ মে থেকে ১১ মে’তে এগিয়ে এনেছেন, এবং মন্ত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করেছেন, তা দেখেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের আস্থা ধাক্কা খেয়েছে বলে ব্যুরো-সূত্রের ইঙ্গিত।
মামলা স্থানান্তরের জন্য গত শুক্রবার হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই। এ দিন সকালে হাইকোর্ট বসতেই বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি কে রাঘবচারিলু বলেন, তাঁদের আর্জির দ্রুত শুনানি হোক। বিচারপতি বাগ জানিয়ে দেন, আজ, মঙ্গলবার তিনি মামলাটি শুনবেন।
পাশাপাশি এ দিনই আলিপুর জেলা আদালতের বিচারক সমরেশপ্রসাদ চৌধুরীর এজলাসে মদন মিত্রের জামিন-মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। সেই মতো বেলা বারোটা নাগাদ সেখানে হাজির হন মদনবাবুর কৌঁসুলি মিলন মুখোপাধ্যায়-সহ অন্য আইনজীবীরা। সিবিআইয়ের কৌঁসুলি পার্থসারথি দত্ত আদালতকে জানান, সিবিআই মামলাটি অন্যত্র সরানোর জন্য হাইকোর্টে গিয়েছে। হাইকোর্ট জানিয়েও দিয়েছে, মঙ্গলবার শুনানি হবে। এমতাবস্থায় নিম্ন আদালতে মন্ত্রীর জামিন-মামলার শুনানি বাঞ্ছনীয় নয় বলে তিনি সওয়াল করেন।
মন্ত্রীর কৌঁসুলি মিলনবাবু পাল্টা সওয়ালে বলেন, মামলাটি অন্যত্র সরানোর পিছনে সিবিআই যা যুক্তি দিচ্ছে, সব ভিত্তিহীন। সিবিআই বিচার-ব্যবস্থাকে হাতের পুতুলে পরিণত করতে চাইছে বলে অভিযোগ তুলে মিলনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এক জন জেলা বিচারকের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার এক্তিয়ার কি সিবিআইয়ের আদৌ আছে?’’ তাঁর দাবি, মামলা স্থানান্তরের আবেদনের প্রত্যয়িত কপিও অভিযুক্তকে দেওয়া হয়নি, যা কিনা ফৌজদারি কার্যবিধির নিয়মবিরুদ্ধ।
দু’পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারক চৌধুরী অবশ্য জানিয়ে দেন, মন্ত্রীর জামিন-আর্জি স্থানান্তরের মামলাটি যখন মঙ্গলবার হাইকোর্টে শুনানির জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে, তখন তিনি
এখনই ওই মামলা শুনবেন না। শুনবেন আগামী ১৩ মে। সারদা-কাণ্ডে অন্য অভিযুক্ত সন্ধির অগ্রবালের জামিন-মামলাটিরও শুনানি ওই দিন আলিপুর জেলা আদালতে হওয়ার কথা।
আজ হাইকোর্টে কী ভাবে সওয়াল করা যায়, তা নিয়ে সিবিআইয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোরকদমে। সিবিআই-কর্তাদের বক্তব্য: আলিপুরে মদন মিত্রের মামলার শুনানি চলাকালীন শাসকদলের ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা যে ভাবে দিনের পর দিন এজলাসের ভিতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন, স্লোগান দিয়েছেন, বিচারককে হুমকি দিয়েছেন, এমনকী এজলাসে বসে মন্ত্রীও যে ভাবে নির্দ্বিধায় মোবাইলে কথা বলেছেন— তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, এখানে ন্যায় বিচার পাওয়া কার্যত অসম্ভব। সে কথাই সিবিআইয়ের কৌঁসুলিরা আজ হাইকোর্টকে বলবেন।
এ হেন অভিযোগ শুনে মদনবাবুর ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা কী বলছেন?
মদনবাবুর আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘হাইকোর্টে মামলা উঠলে আইনত মোকাবিলা করব।’’ আর এক আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এজলাসে আইনজীবীদের গোলমাল পাকানোর কোনও উদাহরণ সিবিআই তাদের আবেদনে পেশ করেনি।’’
এ দিকে ফের জামিন-মামলা পিছিয়ে যাওয়ায় মদনবাবু যারপরনাই হতাশ। ইতিমধ্যে নানা কারণে একাধিক বার তাঁর জামিন-মামলা পিছিয়ে গিয়েছে। শেষমেশ সোমবার মামলা উঠবে, এই আশায় রবিবার বিকেল থেকে মন্ত্রী বেশ খোশমেজাজে ছিলেন বলে ঘনিষ্ঠ-সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু এ দিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ যখন খবর আসে যে, মামলা আবার পিছিয়ে গিয়েছে, তিনি খুবই হতাশ হয়ে পড়েন। ‘‘১২ ডিসেম্বর দাদা গ্রেফতার হয়েছিলেন। আজ দেড়শো দিন পূর্ণ হল। আমরা আশায় ছিলাম, জামিন হয়ে যাবে। না-হওয়ায় দাদা খুবই ভেঙে পড়েছেন।’’— এ দিন বলেন মদন-ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা।
এবং তাঁর আশঙ্কা, নতুন পরিস্থিতিতে মন্ত্রীর জামিন মেলার সম্ভাবনা হয়তো আরও পিছিয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy