Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
second world war

শতায়ু সেনার স্মৃতিতে উজ্জ্বল বিশ্বযুদ্ধ-নেহরু

১৯৪২ সালে ক্ষিতীশচন্দ্র যোগ দেন তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন মাঝপথে। শতবর্ষেও তাঁর সে স্মৃতি অমলিন।

ক্ষিতীশচন্দ্র চন্দ। তখন ও এখন।

ক্ষিতীশচন্দ্র চন্দ। তখন ও এখন। ফাইল ছবি ও নিজস্ব চিত্র।

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৮
Share: Save:

‘‘তখন তো একেবারে স্ট্যান্ডিং অর্ডার (স্থায়ী নির্দেশ) ছিল। যে-কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয়ে থাকতে হবে। সব সময় মাথার উপরে উড়ত যুদ্ধবিমান।’’— ধীরে ধীরে কথা ক’টি বললেন যিনি, ১ ফেব্রুয়ারি একশো বছর পূর্ণ হবে তাঁর। ক্ষিতীশচন্দ্র চন্দ। ১৯৪২ সালে যোগ দেন তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন মাঝপথে। শতবর্ষেও তাঁর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি অমলিন।

তবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার কোনও ইচ্ছে নাকি আগে থেকে ছিল না ক্ষিতীশবাবুর। পুত্রবধূ শুভ্রাদেবী জানান, ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকার কাছের নরসিংদি থেকে কলকাতায় আসেন ক্ষিতীশবাবু। আচমকা পিতৃবিয়োগ হওয়ায় আর্থিক কারণে মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। যোগ দেন সেনাবাহিনীতে, হাবিলদারের পদে। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। প্রশিক্ষণের জন্য ক্ষিতীশবাবু প্রথমে যান উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে। পরে পরীক্ষা দিয়ে স্টেনোগ্রাফার হন। সেনাবাহিনীর এক ব্রিগেডিয়ারের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। শুভ্রাদেবী জানান, শ্বশুরমশাই তাঁদের আগে বলেছিলেন, সৈনিকদের মধ্যে যাঁরা ইংরেজি ভাল বুঝতেন, তাঁদের ওই সব পদে নিযুক্ত করা হত।

তার পরে এক সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেমেছে। স্বাধীন হয়েছে দেশ। ১৯৫৮ সালে ক্ষিতীশবাবু মস্কোয় এক ব্রিগেডিয়ারের ব্যক্তিগত সচিব হন। স্মৃতি হাতড়ে এখনও বিড়বিড় করে বলেন, তখন সোভিয়েত রাশিয়ায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন কেপিএস মেনন। এই কাজের সূত্রে ক্ষিতীশবাবু প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান নিকোলাই বুলগানিন, নিকিতা ক্রুশ্চভের সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেই সব স্মৃতি এখনও অ্যালবাম-বন্দি। ছবি দেখে বলে দিতে পারেন, কে কোন জন।

দেশে ফিরে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে তাঁর পোস্টিং ছিল। ১০০ বছর বয়সে স্মৃতি অনেকটাই অটুট। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছোট নাতনি ঐশী জানান, তিন-চার বছর আগেও বাড়ির সব কিছুতেই যোগ দিয়েছেন। এখন আর পারেন না, তবে তাঁর ঘরে গিয়ে অন্যেরা গল্পগুজব করলে যারপরনাই খুশি হন। একেবারে নিকট-অতীত ভুলে গেলেও ঢাকার নরসিংদির বাড়ির স্মৃতি অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি এখনও তরতাজা। বাড়ির অ্যালবামে মস্কোয় থাকার ছবি বার করে দেখালে এখনও বলে দিতে পারেন, ঠিক কোথায় ছবিটি তোলা হয়েছিল। ছবিতে কে কে রয়েছেন। এখনও যৌথ পরিবারে বটগাছের মতো তাঁর উপস্থিতি। কানে শুনতে একটু সমস্যা হয়।

পরিবারের সদস্যেরা এখন ক্ষিতীশবাবুর শতবর্ষ উদ্‌যাপনের পরিকল্পনায় ব্যস্ত। ছোট ছেলে গৌতমবাবু জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ‘ওয়ার ভেটারেন’ বাঙালি বেঁচে আছেন মাত্র দু'-এক জন। ফোর্ট উইলিয়াম থেকেও তাঁদের জানানো হয়েছে, শতায়ু এই সেনাকে ১ ফেব্রুয়ারি সংবর্ধনা জানানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

second world war jawaharlal nehru Indian Army
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE