—ফাইল চিত্র
টানা দশ দিন ধরে পাহাড়ি পথে মহড়া দিয়েছিল রাষ্ট্রপতির কনভয়ের গাড়িগুলি। কুয়াশার আশঙ্কায় রোদ ঝলমলে দিনেও মহড়ার সময় গাড়ির গতি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পাকদণ্ডি রাস্তার কোন বাঁকে কত গতি হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করা ছিল। সঙ্কীর্ণ রাস্তার কোথায় রেলিং রয়েছে, কোথায় নেই তারও নকশা করে অফিসার এবং নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির মুখ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টার নির্দেশ মতো সে সবের পরেও কেন এবং কী ভাবে শুক্রবার দার্জিলিং থেকে বাগডোগরা ফেরার পথে রাষ্ট্রপতির কনভয়ের ‘এসকর্ট ওয়ান’ খাদে গড়িয়ে গেল, তা খতিয়ে দেখতে শনিবার দার্জিলিঙের সোনাদায় পৌঁছে গেল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর বিশেষ দল।
শনিবার সকালে দলের সদস্যদের কয়েকজন দুর্ঘটনাস্থলে সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন। ছবি তুলেছেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত এসইউভি গাড়িটির ফরেন্সিক পরীক্ষাও হবে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দলের থেকে পাওয়া খবর, প্রাথমিক তদন্ত এবং খোঁজখবরে জানা গিয়েছে দুর্ঘটনার পেছনে গাড়ির কোনও যান্ত্রিক ক্রুটি ছিল না। সে কারণেই ইতিমধ্যেই দার্জিলিঙের রাস্তায় ভবিষ্যতে ‘ভিভিআইপি’ যাতায়াত নিয়ে জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে সর্তক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। দার্জিলিঙে সারা বছর কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের ভিভিআইপি-দের যাতায়াত লেগে থাকে। তবে পাহাড়ি রাস্তা ক্রমেই সঙ্কীর্ণ হয়ে আসছে বলে
অভিযোগ। রাস্তার দু’দিকে জবরদখলও বাড়ছে। সে সব নিয়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও, জেলা প্রশাসনের কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, তার জন্য আরও সর্তকতা নেওয়া হচ্ছে।’’
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দলের দাবি, যেখানে দুর্ঘটনা হয়েছিল সেখানে তুলনামূলক কম কুয়াশা ছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘সোনোদা এবং টুঙের মাঝামাঝি এলাকায় দৃশ্যমানতা খুব একটা খারাপ ছিল না। রাস্তা একটু ঢালু ছিল। যদিও সেই ঢাল ছিল রাস্তার বাঁ দিকে অর্থাৎ খাদের উল্টো দিকে। সব মাথায় রেখেই দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
দার্জিলিং জেলা পুলিশের তরফেও তদন্ত করে কারণ খতিয়ে দেখার চেষ্টা হচ্ছে। যেহেতু রাষ্ট্রপতির কনভয়ের পরের গাড়িটিই দুর্ঘটনায় পড়েছে তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও উদ্বিগ্ন। প্রতিভা পাতিল রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন একবার শিলিগুড়ির রাস্তায়
কনভয়ে অন্য গাড়ি ঢুকে পড়েছিল, সে ঘটনারও তদন্ত করেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সে বার কনভয় পৌঁছে যাওয়ার পরেও বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতির ‘লাগেজ ভ্যান’ পৌঁছতে দেরি হয়। তার তদন্তও চলেছিল কয়েক বছর ধরে।
এই দুর্ঘটনায় অশনি সঙ্কেত দেখছে পর্যটন মহলও। বর্ষার সময়েও দার্জিলিং ভ্রমণে উৎসাহ দিতে তৈরি হয়েছে ‘মনসুন প্যাকেজ’। তার মাঝে এই ধরনের দুর্ঘটনা বিরূপ বার্তা দিতে পারে বলে আশঙ্কায় ট্যুর অপারেটররা। উত্তরবঙ্গের ট্যুর অপারেটরদের অন্যতম
বৃহৎ সংগঠন এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘দখলদার উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্ত করা এবং পথের ধারে রেলিং দেওয়া দরকার।’’ জিটিএ-র ডেপুটি চিফ রমেশ আলের কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy