মায়ানমারের দিক থেকে চোরাপথে মাদক ও সোনা হামেশাই ভারতে আসে। সেই মাদক বা সোনা নেওয়ার জন্যই শুক্রবার বিমানে বিপুল পরিমাণ ডলার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কি না, সেটা যাচাই করা দরকার। আবার সীমান্ত পেরিয়ে আসা অবৈধ অস্ত্রের দাম মেটানোর জন্যও ওই ডলার পাচারের চেষ্টা চালানো হয়ে থাকতে পারে বলে শুল্ক দফতরের সন্দেহ। সে-ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টির পিছনে জঙ্গি চক্রের তৎপরতার আশঙ্কাও ষোলো আনা। সবিস্তার তদন্তের জন্য বিষয়টি আজ, সোমবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছে শুল্ক দফতর।
কলকাতা থেকে প্রায় এক কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার বিদেশি মুদ্রা মায়ানমারে পাচার করা হচ্ছিল অভিনব পন্থায়। গত শুক্রবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে দু’লক্ষ ৪৭ হাজার মার্কিন ডলার-সহ ধরা পড়ে যান জেলখানথাঙ্গা নামে মিজোরামের এক বাসিন্দা। জেট এয়ারওয়েজের বিমানে আইজল যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। নির্দিষ্ট সময়ের আনেক আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছে যান তিনি। তাঁর হাতে ছিল একটি বড় এবং একটি ছোট বাক্স। বড় ব্যাগটি বিমানের পেটে পাঠিয়ে দেবেন বলে টার্মিনালে ঢুকেই সেটির এক্স-রে করাতে যান তিনি। তখনই দেখা যায়, ব্যাগের ভিতরে দু’-একটি নয়, কনডেন্সড মিল্কের বেশ কয়েকটি কৌটো রয়েছে। দেখেই সন্দেহ হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। এত দুধের কৌটো কেন?
নিরাপত্তা বাহিনী এবং শুল্ক অফিসারেরা এসে ব্যাগ খুলে তল্লাশি চালাতেই চোখ কপালে ওঠে! দেখা যায়, কনডেন্সড মিল্কের কৌটো কেটে প্রথমে প্লাস্টিক দিয়ে মোড়া হয়েছে। মার্কিন ডলারের নোট গোল করে সেখানে রেখে উপরে আবার দেওয়া হয়েছে প্লাস্টিকের আচ্ছাদন। এই ধরনের প্রায় ১০টি টিনের কৌটোর ভিতরে পাওয়া যায় দু’লক্ষ ৪৭ হাজার ডলার মূল্যের নোট। ভারতীয় মুদ্রায় ওই মার্কিন ডলারের মূল্য এক কোটি ৬৫ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা।
আদালতের নির্দেশে জেলখানথাঙ্গা এখন জেলে। শুল্ক অফিসারদের জেরার মুখে জেলখানথাঙ্গা জানান, তাঁর বাড়ি মিজোরামের চম্পাই নামের একটি জায়গায়। এলাকাটি প্রায় মায়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা। তাঁর দাবি অনুযায়ী ওই বিপুল অর্থ পতঙ্গ নামে এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। পতঙ্গ মায়ানমারের বাসিন্দা। সীমান্ত ঘেঁষা কালে নামে একটি জায়গায় ওই ডলার হাতবদল করার কথা ছিল বলে জানান জেলখানথাঙ্গা।
শুল্ক অফিসারদের বক্তব্য, সীমান্ত পেরিয়ে মায়ানমারের দিক থেকে চোরাপথে মাদক ও সোনা আসে ভারতে। হতে পারে, সেই সোনা ও মাদকের বদলেই এই ডলার পতঙ্গের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসা অস্ত্রের দাম মেটাতেও ওই বিদেশি অর্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে জেলখানথাঙ্গা এবং পতঙ্গের যোগসাজশের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর অফিসারেরাই এই সব বিষয়ে সবিস্তার তথ্য জোগাড় করেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর নেটওয়ার্কও অনেক বেশি। সেই জন্যই বিষয়টি আর নিজেদের হাতে না-রেখে পুরো ঘটনার তদন্তভার তাদের হাতে তুলে দিতে চাইছে শুল্ক দফতর।
ওই দফতর সূত্রের খবর, বুধবার বিধান সরণির একটি হোটেলে উঠেছিলেন জেলখানথাঙ্গা। সেখানেই এক ব্যক্তি তাঁর হাতে ওই ডলার তুলে দেন বলে জেরার মুখে জানিয়েছেন তিনি। সেই লোকটিরও খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy