• পটভূমি দিল্লি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ দেশে বেড়াতে এসে ধর্ষিত হন এক মার্কিন মহিলা। সেই ঘটনা নিয়ে রাজধানীতে যে-তুমুল আলোড়ন হয়, একমাত্র নির্ভয়া কাণ্ডের সঙ্গেই তার তুলনা চলে।
• পটভূমি জয়পুর। ১৯ বছরের এক জাপানি তরুণীকে তিন জনের একটি দল ধর্ষণ করে। অপরাধীদের মধ্যে তরুণীর গাইডও ছিল।
• পটভূমি কলকাতা। গত বছরের মাঝামাঝি এ রাজ্যে বেড়াতে এসেছিলেন এক জাপানি তরুণী। সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলে ওঠেন তিনি। সারা বাংলা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য এক জন গাইডের সাহায্য নেন ওই তরুণীও। পরে ওই বিদেশিনি অভিযোগ করেন, রাজগির ও দিঘায় নিয়ে গিয়ে ওই গাইড এবং তার চার বন্ধু তাঁকে ধর্ষণ করেছে। পাঁচ জনই ধরা পড়েছে। তাদের বিচার চলছে।
কলকাতা, জয়পুর, দিল্লির এই তিনটি ঘটনা বিদেশি পর্যটক নিগ্রহের কালো ছবিটার অতি সামান্য অংশ মাত্র। ভারতে বেড়াতে এসে নানা ভাবে বিভিন্ন দেশের পর্যটক, বিশেষ করে মহিলা পর্যটকদের হেনস্থা ও যৌন অপরাধের শিকার হওয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রের পরিসংখ্যান উদ্বেগ বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট।
সব থেকে লজ্জার কথা, এমন ঘটনার বাড়াবাড়ি দেখে বেশ কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের ভারতে এসে স্বাধীন ভাবে ঘোরাঘুরি করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ভারত পর্যটনে বেরোনো বিদেশিনিদের পোশাক সম্পর্কে সতর্ক হতে বলা হয়েছে ওই সব নির্দেশিকায়। এই সব নির্দেশ নানা দেশের তরফে তাদের নাগরিকদের উদ্দেশে জারি করা হয়েছে ঠিকই। তবে তাতে বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভারতের ভাবমূর্তি অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের কর্তারা। এতে অতিথিকে দেবতা ভাবার আদর্শ মলিন তো হচ্ছেই। সেই সঙ্গে ওই সব জঘন্য ঘটনার প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পেও। তাই এই চিত্র পাল্টাতে উদ্যোগী হয়েছে পর্যটন মন্ত্রক।
কেমন সেই উদ্যোগ?
বিদেশি পর্যটকদের উপরে হামলা এবং তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা রুখতে কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানাচ্ছেন সেখানকার কর্তারা। সম্প্রতি সংসদে তার উল্লেখ করে সেই সব সিদ্ধান্ত রূপায়ণের ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী মহেশ শর্মা। ওই সব ব্যবস্থার মধ্যে আছে:
• পর্যটকদের জন্য চালু করা হচ্ছে একটি হেল্পলাইন। যার নাম দেওয়া হচ্ছে ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া হেল্পলাইন’।
• বিদেশি পর্যটকদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটেও সব সময় এক জন পরামর্শদাতা মোতায়েন থাকবেন।
• বিদেশি পর্যটকদের সুরক্ষার ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে।
• পর্যটকদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে বলে প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্র-শাসিত রাজ্যের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা তৈরি করছে কেন্দ্র।
পর্যটন মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারগুলির জন্য তৈরি নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে, ভ্রমণ শুরু করার আগেই পর্যটকদের সুবিধার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাতে হবে ভ্রমণার্থীদের। এ ব্যাপারে হাওয়া অফিস থেকে তিন-চার ঘণ্টা অন্তর আবহাওয়ার পূর্বাভাস ওয়েবসাইটে তুলে দিতে হবে। কোথাও বেড়াতে গিয়ে কেউ আটকে গেলে তৎক্ষণাৎ তাঁকে বা তাঁদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে একযোগে কাজ করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য ও কেন্দ্র। পর্যটকদের জন্য হোটেল, তাঁদের যাতায়াতের জন্য যানবাহন এবং কোনও রকম অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস থাকলে তার ‘অপারেটরদের’-ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধার জন্য তাঁরাও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এ রাজ্যে পর্যটনের ছবি, বিশেষ করে বিদেশি সমাগমের ছবি উজ্জ্বলতর হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি হিসেব দেন, এ বছর রাজ্যে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ২০১১-’১২ সালে সংখ্যাটা ছিল প্রায় ১০ লক্ষ।
গোটা দেশেই মহিলাদের উপরে অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। এ রাজ্যে বিদেশিনিদের নিরাপত্তার হাল কী?
‘‘হাল ভাল বলেই তো পর্যটক বাড়ছে,’’ জবাব ব্রাত্যবাবুর। তিনি জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য রাজ্যে ‘পর্যটক পুলিশ’ চালু করার পরিকল্পনাও করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy