Advertisement
১১ মে ২০২৪

ঠাকুরনগরে মোদীর সভায় বিশৃঙ্খলা

শনিবার তাঁর বক্তৃতা চলাকালীন মঞ্চের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে লোক এগিয়ে আসার চেষ্টা করতেই গোলমালের সূত্রপাত।

অসহায়: গন্ডগোলের মধ্যে পড়ে গেলেন এক বৃদ্ধা। শনিবার ঠাকুরনগরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

অসহায়: গন্ডগোলের মধ্যে পড়ে গেলেন এক বৃদ্ধা। শনিবার ঠাকুরনগরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

স্যমন্তক ঘোষ ও সীমান্ত মৈত্র
ঠাকুরনগর শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০২
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা ব্যাপক বিশৃঙ্খলায় কার্যত ভেস্তে গেল। শনিবার তাঁর বক্তৃতা চলাকালীন মঞ্চের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে লোক এগিয়ে আসার চেষ্টা করতেই গোলমালের সূত্রপাত। ধাক্কাধাক্কিতে আহত মহিলা এবং শিশুদের অনেকেই। তাঁদের হাসপাতালেও নিয়ে যেতে হয়। ঘটনার পরে অনেক শিশু ও মহিলার খোঁজ মিলছিল না।

চোখের সামনে এই অবস্থা দেখেও মোদী বক্তৃতা থামাননি। পরিস্থিতি নিয়ে বলেননি একটি কথাও। মিনিট পনেরোর মধ্যেই ভাষণ শেষ করে হাত নেড়ে মঞ্চ থেকে নেমে যান। হেলিকপ্টারে তাঁর পরবর্তী গন্তব্য ছিল দুর্গাপুর। সেখানে অবশ্য তিনি ঠাকুরনগরের সভায় বিশৃঙ্খলার উল্লেখ করে বলেন, ‘‘ময়দান ছোট ছিল। দ্বিগুণ লোক হয়েছিল। মা-বোন-বাচ্চাদের কষ্ট হয়েছে। তার জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি ও ক্ষমা চাইছি।’’ এ দিনের ঘটনা ফিরিয়ে এনেছে প্রধানমন্ত্রীর মেদিনীপুরের সভার স্মৃতি। সেখানেও দর্শকাসনের সামিয়ানা ভেঙে আহত হয়েছিলেন অনেকে।

এ দিন দুপুরে ঠাকুরনগরে বিজেপি প্রভাবিত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সভায় এসেছিলেন মোদী। সঙ্ঘের প্রধান এবং সভার মুখ্য আয়োজক শান্তনু ঠাকুর শুরুতেই জানিয়ে দেন, এটি রাজনৈতিক সভা নয়। সভায় বিজেপির একাধিক কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের নেতৃত্ব উপস্থিত থাকলেও ছিল না দলীয় পতাকা। শান্তনু বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব বিল লোকসভায় পাশ করানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। সে জন্যই তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করেছি।’’

যদিও সভার শেষে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যেটুকু বলার সুযোগ পেলেন, তা পুরোপুরি রাজনৈতিক। এর নাম ধর্মসভা?’’

মতুয়া সম্প্রদায়ের ‘বড়মা’ বীণাপাণি দেবীর বাড়িতে মিনিট তিনেক থেকে মোদী মঞ্চে আসেন বেলা ১২টা ১৭ মিনিটে। সূত্রের খবর, বড়মার কাছে তাঁর স্বাস্থ্য বিষয়ে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। বয়সও জিজ্ঞেস করেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ‘বড়মা’র শতবর্ষ পালনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিতর্ক তোলা হয়েছিল, ‘বড়মা’ একশো বছরে পা দেওয়ার আগেই তাঁর শতবর্ষ পালিত হল।

এ দিন ১২টা ২৮ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করেন মোদী। তার মিনিট দু’য়েকের মধ্যেই ভিড় মঞ্চের সামনে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফাঁকা অংশের দিকে ঠেলে আসতে শুরু করে। গোড়াতেই তাল কাটে বক্তৃতার। কিছুক্ষণের মধ্যেই মঞ্চের দিকে চেয়ার ছুড়তে শুরু করেন দর্শকেরা। ১২টা ৩৮ নাগাদ প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ঢুকে পড়েন মানুষ। প্রবল চাপে ততক্ষণে অসুস্থ হতে শুরু করেছেন মহিলা ও শিশুরা। আর্ত চিৎকারের রোল ওঠে মাঠ জুড়ে। প্রধানমন্ত্রী তখনও শুনিয়ে যাচ্ছেন সাম্প্রতিক বাজেটে কৃষকদের ‘সুযোগ সুবিধা’র কথা।

নিরাপত্তা বেষ্টনীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত রক্ষীরাও ভাঙা ব্যারিকেডের ভিতর থেকে ততক্ষণে উদ্ধার করতে শুরু করেছেন আহতদের। বেষ্টনীর সবুজ গালিচায় শুয়ে পড়েন অনেকে। মোদী তখন দ্রুত শেষ করছেন নাগরিকত্ব বিলের প্রসঙ্গ। কিন্তু আর চালানো গেল না সভা। ১২টা ৪৪ মিনিটে মঞ্চ ছাড়ার আগে মাঠের দিকে হাত নাড়লেন প্রধানমন্ত্রী। সভাস্থলের উপর দিয়ে উড়ে গেল চপার। চলে গেলেন প্রথম সারির নেতারাও। মঞ্চ থেকে তখন রাজ্যস্তরের এক নেত্রী ঘোষণা করছেন, ‘‘নিজের সুরক্ষার দায়িত্ব নিজের।’’ আর মঞ্চের নীচে জলের জন্য জনতার হাহাকার।

কেন হল এমন? শান্তনুর দাবি, ‘‘ছোট ঘটনা। মাঠের আয়তনের চেয়ে লোক হয়েছিল বেশি। তাই এমনটা হয়েছে। সভার ক্ষতি হয়নি।’’ কার্যত একই কথা বলেছেন সভার অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠাকুর বাড়ির সদস্য, বনগাঁর সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের কটাক্ষ, ‘‘এমন কী হল যে, প্রধানমন্ত্রী মাঝ পথে বক্তৃতা থামিয়ে চলে গেলেন?’’

আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছিল মঞ্চের পিছনেই। তবে প্রশাসন সূত্রের খবর, বিকেলের দিকে ১১ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। যদিও কারও চোট গুরুতর নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chaos Meeting Narendra Modi Matua Mahasangha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE