Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

যত চকলেট তত লাভ, বলছে ‘চোরা’ বাজার

একশো পিস ১৮০ টাকা। দক্ষিণ শহরতলির নিষিদ্ধ বাজির বাজারে চকলেটের দাম চড়ছে চড়চড় করে। দিন চারেক আগেও একশো পিস চকলেট একশো কুড়ি বা পঁচিশে বিক্রি হয়েছে।

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

একশো পিস ১৮০ টাকা। দক্ষিণ শহরতলির নিষিদ্ধ বাজির বাজারে চকলেটের দাম চড়ছে চড়চড় করে। দিন চারেক আগেও একশো পিস চকলেট একশো কুড়ি বা পঁচিশে বিক্রি হয়েছে। ভোরবেলা বাজি কারবারিদের সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া জুড়ে দিয়েছিলেন শহরের এক খুচরো বাজি ব্যবসায়ী। তবে চকলেট ব্যবসায়ীর চোখ-মুখে উত্তেজনা নেই। একটাই কথা বারবার বলে চলেছেন, ‘দাদা সব শেষ। পুলিশ তোলপাড় করে দিয়েছে। সব বাজি ধরা পড়ে গিয়েছে। অনেক লোকসান হয়ে গিয়েছে। দাম না বাড়িয়ে পারছি না।’’

কিন্তু বাজি বাজারের অন্দরে কান পাতলে অন্য গল্প শোনা যাচ্ছে। পুলিশি অভিযানের পরে দেদার মুনাফার চকলেট ব্যবসা ফুলেফেঁপে ঢোল হয়ে উঠেছে। চকলেটের চাহিদার শেষ নেই। ভোরেও নিষিদ্ধ বাজির বাজারে চকলেটের খোঁজে ছেলে-ছোকরা, খুচরো ব্যবসায়ী থেকে পেশায় অধ্যাপকও ঘুরঘুর করছেন। গত কয়েক দিন পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। বেশ কয়েক হাজার চকলেট বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে।

এক বাজি ব্যবসায়ীর কারখানায় গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। গৃহবধূরাও দিন-রাত কাজ করছেন কারখানায়। মাথা নিচু করে যন্ত্রের মতো চকলেট বোমা তৈরি করে চলেছেন সকলে। কারখানার মালিকের কথায়, ‘‘এ বার পুলিশি অভিযান বেশ কড়া কিন্তু দাদা। তবে পরোক্ষ ভাবে ব্যবসায় লাভবান হয়েছি আমরা। পুলিশ চকলেট ধরেছে, এই দোহাই তুলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন নিষিদ্ধ বাজির কারবারিরা। বাজারে এখন চড়চড় করে দাম বেড়ে গিয়েছে চকলেটের। চকলেট তৈরি করা তো হাতিঘোড়া কিছু নয়। অত সময়ও লাগে না। শুধু একটু লোকজন বেশি করে দিলেই হাতে গরম চকলেট তৈরি হয়ে যাবে।’’

কয়েক দিন পুলিশের অভিযান চলার পরে অবশ্য প্রকাশ্য দোকানে চকলেট বিক্রি করা হচ্ছে না। তবে আতসবাজির দোকানেই চুপিচুপি চকলেটের প্যাকেট ব্যাগে ভরে দেওয়া হচ্ছে। ভোরের দিকে সে ভাবেই দেদার বিক্রি হচ্ছে চকলেট।

ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। চম্পাহাটির হারাল গ্রামে একটি আতসবাজির দোকানে স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে হাজির পেশায় অধ্যাপক। হাউই, চরকি, তুবড়ির পাশাপাশি কিনলেন একশোটি চকলেট বোমাও। বললাম, ‘‘রাস্তায় পুলিশ কিন্তু বাজির ব্যাগ খুলে তল্লাশি করছে। চকলেট ধরা পড়লে কিন্তু সব বাজিই নিয়ে নেবে।’’

একটুও বিচলিত না হয়ে অধ্যাপকের জবাব, ‘‘ধরলে ধরবে। আবার কিনে নিয়ে যাব। একটা কথা বলব আপনাকে? ছোটবেলার অভ্যাস ভাই। সব বাজি ফাটানোর পরেও যদি একটা চকলেটে আগুন দিতে না পারি, মনে হয় যেন বাজি ফাটালাম না। দুম দুম আওয়াজটা যেন একেবারে রক্তে ঢুকে গিয়েছে।’’

কয়েক দিন অবশ্য টানা অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তাতেও কোনও ক্রেতা-বিক্রেতার হেলদোল নেই। রাতভর আতসবাজির পাশাপাশি রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে চকলেট। মোটরসাইকেল, গাড়িতে করে আতসবাজির সঙ্গেই পাচার হয়ে যাচ্ছে চকলেটের প্যাকেট। গভীর রাত থেকে ভোর। রাস্তায় পুলিশের দেখা নেই। অবাধে এ পাড়া থেকে ও পাড়া, হাত বদল হয়ে যাচ্ছে শব্দবাজির।

দক্ষিণ শহরতলির একাধিক বাজি ব্যবসায়ীর কথায়, পুলিশি অভিযানের জন্য কয়েক বস্তা ভুষি ভরা চকলেট মোড়ক দিয়ে তৈরি রাখা হয়। অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা বাজি তো পুলিশ থানায় নিয়ে বছরের পর বছর ফেলেই রাখে। কোনও এক সময়ে ফাটায়। তখন কোনও আওয়াজ হয় না। তাই ভুষি ভরা চকলেটের বিষয়টি পুলিশও জানে না। কিন্তু এ বছর বেশ কিছু তাজা চকলেটও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে ওতে ব্যবসায় কোনও লোকসান নেই। দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। আর এক ব্যবসায়ী নিজের পাশের চেয়ারে রাখা কয়েকটি চকলেটের প্যাকেট দেখিয়ে বললেন, ‘‘আমিও হাত লাগিয়েছি। এ বার এত চাহিদা। শেষ দিকে পুলিশ চকলেট তুলে নেওয়ায়, এখন সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ঘরে মহিলাদের রান্নাবান্না বন্ধ। হোটেল থেকে সব খাবার আনাচ্ছি। শুধু চকলেটই এখন ঘর-সংসার। যত চকলেট তত লাভ!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire cracker Diwali Kali puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE