হাওড়ার শিবপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার তদন্ত শুরু করল সিআইডি। ফাইল চিত্র।
রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে হাওড়ার শিবপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার তদন্ত শুরু করল সিআইডি। এ দিন দুপুর থেকে ৬ সদস্যের একটি তদন্তকারী দল গোটা এলাকা ঘুরেছে। ঘটনাস্থলের ছবি তোলার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন তাঁরা। ওই এলাকায় নতুন করে কোনও গোলমাল আর হয়নি। অধিকাংশ দোকানপাট খুলেছিল। যানচলাচলও ছিল স্বাভাবিক। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে অলিগলিতে পদস্থ কর্তাদের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশবাহিনী ‘রুট মার্চ’ করেছে। এরই মধ্যে এ দিন জি-২০ শীর্ষক সম্মেলনে যোগ দিতে দার্জিলিঙের রাজভবনে যাওয়ার পথে বাগডোগরা বিমানবন্দরে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। পুলিশ দেখছে। রাজভবন বিশেষ সেল তৈরি করে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। দোকানগুলি খুলছে। যা-যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, সে সব করা হয়েছে।’’ তবে পুলিশের ভূমিকায় তিনি ‘খুশি’ কি না, সে প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি রাজ্যপাল।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় পুলিশের একাংশের ভূমিকায় তিনি যে ‘ক্ষুব্ধ’ শুক্রবার সেই ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় মিলেছিল এবং সেই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছিলেন যে কাউকে ‘রেয়াত’ করা হবে না। এমনকি, গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিন হাওড়ার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যসচিব হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদী বলেন, “আমরা খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মন্ত্রী অরূপ রায়, হাওড়ার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার একাধিক বার বৈঠক করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি রাজ্য সরকার খতিয়ে দেখছে। যাঁদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেখবে রাজ্য।’’
এ দিন টহলদারির পাশাপাশি ড্রোন দিয়ে এলাকার পরিস্থিতির উপর নজরদারিও চালানো হয়। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী এবং রাজ্য পুলিশের দুই কর্তা নিশাত পারভেজ এবং রশিদ মুনির খান বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন।
সিআইডি সূত্রের খবর, সিআইডির আইজি (১) বিশাল গর্গের নেতৃত্বে ওই তদন্ত হবে। তবে এখনও বিশেষ দল গঠন করা হয়নি। এ দিন পুলিশ কমিশনারকে নিয়েই সিআইডির দল ফজিরবাজার এলাকা ও পিএম বস্তিতে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান, অগ্নিদগ্ধ গাড়ি পরিদর্শন করে। বৃহস্পতিবার কোন পথে মিছিল কী ভাবে এসেছিল, গন্ডগোলের সূত্রপাত কী ভাবে হয়েছিল, তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে বোঝার চেষ্টা করেছেন। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার কাজও শুরু হয়েছে। কাদের ইন্ধনে গোলমাল হয়েছে তা-ও দেখা হচ্ছে। তবে সে দিন মিছিলের অনুমতি ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুমতি ছাড়া মিছিল হল কী ভাবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের ঘটনায় মোট ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিবপুরের আশেপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি আছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দিনে গোলমাল পাকানোর জন্য যে ৩৮ জনকে ধরা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, মারণাস্ত্র নিয়ে হামলা, বেআইনি সমাবেশ, সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দান, সরকারি কর্মীকে মারধর, খুনের চেষ্টা, আগুন লাগানো, মহিলাদের উদ্দেশে সম্মানহানিকর মন্তব্য-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন পুলিশ হেফাজতে এবং ২৩ জন জেল হেফাজতে আছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy