Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আজ পুনর্নির্বাচন, সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন বিরোধীদের

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আজ, সোমবার রাজ্যের ৩৬টি বুথে পুরভোটের পুনর্নির্বাচন হবে। শনিবার রাজ্যের ৯১টি পুরসভার ভোটে রাজ্যের নানা জায়গায় ভোট লুঠ এবং রিগিংয়ের অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। তা খতিয়ে দেখে রবিবার কমিশন এই পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও কমিশনের এই পদক্ষেপকেও প্রশ্নাতীত বলে মনে করছে না বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, যে সব বুথে সম্পূর্ণ ভোট লুঠ হয়ে যাওয়ায় সব বিরোধী দলই পুনর্নির্বাচন চেয়েছিল, সেগুলি ওই ৩৬-এর তালিকায় নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৮
Share: Save:

রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আজ, সোমবার রাজ্যের ৩৬টি বুথে পুরভোটের পুনর্নির্বাচন হবে। শনিবার রাজ্যের ৯১টি পুরসভার ভোটে রাজ্যের নানা জায়গায় ভোট লুঠ এবং রিগিংয়ের অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। তা খতিয়ে দেখে রবিবার কমিশন এই পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও কমিশনের এই পদক্ষেপকেও প্রশ্নাতীত বলে মনে করছে না বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, যে সব বুথে সম্পূর্ণ ভোট লুঠ হয়ে যাওয়ায় সব বিরোধী দলই পুনর্নির্বাচন চেয়েছিল, সেগুলি ওই ৩৬-এর তালিকায় নেই। এই প্রেক্ষিতে বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে কি শনিবার যে সব বুথে তৃণমূল বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি, সেগুলিতে তাদের সামনে আরও একটা সুযোগ এনে দেওয়ার জন্যই কমিশনের এই সিদ্ধান্ত?

কমিশন জানায়, ৩৬টির মধ্যে শিলিগুড়ির একটি বুথে পুনর্নির্বাচনের কারণ ভোটযন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়া। তা হলে কি বিরোধীদের রিগিংয়ের অভিযোগ আংশিক মেনে নিয়েই বাকি ৩৫টিতে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বলেন, ‘‘এর উত্তর সরাসরি দেওয়া সম্ভব নয়। আপনারা বুঝে নিন!’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বুথ দখল, ভাঙচুর, ইভিএম নিয়ে পালানো—নানা অভিযোগ বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছিল। সেগুলো এবং জেলাশাসক, রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার—এঁদের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ ৬টি বুথে ওয়েবক্যামের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। সেগুলিতেও পুনর্নির্বাচন হচ্ছে বলে কমিশন জানিয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের বক্তব্য, যে সব বুথে ওয়েবক্যামের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলিতে তারা না চাইলেও কমিশনের পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়ার কথা। সুতরাং, বিরোধীদের দাবি মেনে ওই ৬টি বুথে পুনর্নির্বাচন হচ্ছে, এই যুক্তি ধোপে টেঁকে না। বিরোধীদের দাবি মানতে হলে ভোট লুঠ হওয়া বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিতে হত।

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘যা-ই ঘটুক, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন বলবে সব শান্তিপূর্ণ। শনিবারের ভোটে সব মিলিয়ে ৩৯৫টি বুথে আমরা বিধিসম্মত ভাবে পুনর্নির্বাচন চেয়েছি। তা ছাড়া রাজনৈতিক ভাবে প্রচার করে আরও অন্তত ৭৫০ বুথে পুনর্নির্বাচন চাওয়া হয়েছে। অথচ, পুনর্নির্বাচন করা হচ্ছে বেছে বেছে। যেখানে ভোট লুঠ হয়নি, সেখানেও ফের ভোট হবে! অর্থাৎ যেখানে টিএমসি দাঁত ফোটাতে পারেনি, সেখানে আবার সুযোগ দিয়েছে।’’ বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘কমিশনের এই পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত আর একটা প্রহসন। যেখানে ভোটের সময়সীমা ফুরনোর বহু আগেই সব ভোট পড়ে গিয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে সম্পূর্ণ ভোট লুঠ করে নেওয়া হয়েছে, সেখানে পুনর্নির্বাচন হচ্ছে না। অথচ অন্য বুথে ফের ভোট হবে। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে?’’ শমীকবাবু যে কেন্দ্রের বিধায়ক, সেখানেও গোটা বুথের সব ভোট লুঠ করে নেওয়ার ভুরি ভুরি নজির আছে বলে তাঁর দাবি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘কমিশন মাত্র ৩৬টি বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভোটে বড় কোনও গোলমাল হয়নি।’’

বিরোধীদের তোলা সন্ত্রাস এবং রিগিংয়ের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে কমিশনার বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমি বা কমিশন চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে আসার কিছু পাইনি।’’ কিন্তু পুনর্নির্বাচন তো ওই অভিযোগের আংশিক হলেও সত্যতা প্রমাণ করছে? কমিশনার বলেন, ‘‘নির্বাচন আইনের ৬২ ও ৬৩ ধারা অনুযায়ী ফের ভোট হচ্ছে। আর কিছু বলব না।’’ কমিশনের হিসাবে শনিবারের ভোটে হতাহতের সংখ্যা কত জানতে চাওয়া হলে কমিশনার বলেন, ‘‘পুলিশের কাছ থেকে এর রিপোর্ট পাইনি।’’ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল কি? কমিশনার বলেন, ‘‘না। ভোটের পর দিনই পুলিশ হতাহতের সঠিক হিসাব কী করে জানাবে?’’ কাটোয়ায় ভোট চলাকালীন মৃত্যু প্রসঙ্গে কমিশনের মত জানতে চাওয়া হলে সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে পুলিসের রিপোর্ট পাইনি।’’

আজ পুনর্নির্বাচনেও যদি শনিবারের রিগিং, সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি হয়? সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘ভোটাররা যেন নির্ভয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের অধিকার প্রয়োগ করেন। এই মনোভাবই গণতন্ত্রকে ধরে রাখতে সাহায্য করবে। সম্মিলিত মানুষকে সবাই ভয় পায়। যদি ইতিহাস পড়ে থাকেন, দেখবেন বলপ্রয়োগ বা অভিযোগ নয়, মানুষই শেষ কথা বলছে।’’ কিন্তু ভোটারদের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে কি? কমিশনার বলেন, ‘‘এ নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। যে বাহিনী আছে, সেটা তো পুনর্নির্বাচনে থাকবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE