Advertisement
E-Paper

স্যার এ ভাবে মার খাওয়াবেন, ভাবতেই পারেননি ছাত্রছাত্রীরা

মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। উপড়ে গিয়েছে পায়ের নখ। গালে, হাতে, পায়ে কালশিটে। ফুলে ওঠা কপাল। ঠোঁটের কোণ ফেটে রক্ত ঝরছে। দাঁত ভেঙে গিয়েছে বেশ কয়েক জনের। অনেকেরই কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন না কেউ। বরং তাঁরা চাইছেন, কত দ্রুত হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হাজির হওয়া যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২০
হাসপাতালে আহত ছাত্র প্রসেনজিৎ মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে আহত ছাত্র প্রসেনজিৎ মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র।

মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। উপড়ে গিয়েছে পায়ের নখ। গালে, হাতে, পায়ে কালশিটে। ফুলে ওঠা কপাল। ঠোঁটের কোণ ফেটে রক্ত ঝরছে। দাঁত ভেঙে গিয়েছে বেশ কয়েক জনের। অনেকেরই কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন না কেউ। বরং তাঁরা চাইছেন, কত দ্রুত হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হাজির হওয়া যায়। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সকলের মুখেই একটাই কথা, “স্যার পুলিশ ডেকে এ ভাবে আমাদের মার খাওয়াবেন, এটা ভাবতেই পারছি না!”

মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু পড়ুয়াকে আনা হয়েছিল কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে কয়েক জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাত জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। এঁরা হলেন বিশ্বরূপ প্রামাণিক, অগ্নীশ্বর চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ মণ্ডল, সুমন সামন্ত, শিবম ঘোষ, কৃশাণুু মান্না এবং অমর্ত্য জানা। পাঁচ জন বন্ডে সই করে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেও কেপিসি-তে ভর্তি রয়েছেন শিবম এবং প্রসেনজিৎ।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিবমের মাথায় চোট লেগেছে। এ দিন সকালে তাঁর সিটি স্ক্যান করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাতে বড় কোনও জটিলতার আভাস পাওয়া যায়নি। তবে মাথার অনেকটা অংশ ফুলে রয়েছে। সেখানে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। আঘাত রয়েছে ঘাড়ে এবং গলাতেও। শিবম অভিযোগ করেছেন, রাত গভীর হওয়ার পরে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর যখন খালি হয়ে যাচ্ছিল, তখনই পুলিশ এবং বহিরাগতরা এসে তাণ্ডব শুরু করে। পুলিশ ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে, বুট দিয়ে মাড়িয়ে, পাঁজাকোলা করে ছুড়ে ফেলেছে ছাত্রছাত্রীদের।

আহতরা জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে যারা রাতে তাঁদের উপরে চড়াও হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই চেনা মুখ। এক আহত ছাত্রের কথায়, “ওরা সবাই তৃণমূলের কর্মী। এর আগেও নানা ভাবে আমাদের হুমকি দিয়েছে। মারধরের ভয় দেখিয়েছে। কাল রাতে আমার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ওদেরই এক জন বলছিল, “বড্ড বাড় বেড়েছিলি। এ বার দ্যাখ কী হয়!”

মাস দুয়েক আগে একটা অস্ত্রোপচার হয়েছিল প্রসেনজিৎ মণ্ডলের। তাঁর কথায়, “পুলিশ যখন আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ক্রমাগত লাথি মারছিল, তখন কয়েক মুহূর্ত আমার জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফিরলে শুনতে পাচ্ছিলাম বন্ধুদের চিৎকার। আমার সহপাঠিনীদেরও ওরা রেয়াত করছিল না। বিশ্রী ভাবে ধাক্কা মারা হচ্ছিল। কিছু লোক এক জনকে তো প্রায় কোলে তুলে বাইরে নিয়ে গেল। তারা পুলিশ কি না, আমার জানা নেই।”

কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দর্শনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর কথায়, “শুনেছি বছর দশেক আগে এ ভাবেই এক বার যাদবপুরের ছাত্রদের উপরে লাঠি চালিয়েছিল পুলিশ। দুই সরকারে যে কোনও পার্থক্য নেই, আরও এক বার তা প্রমাণ হল।”

যোধপুর পার্কের অরবিন্দ সেবাকেন্দ্রেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কয়েক জন আহত পড়ুয়াকে। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বেরনোর পরে খোঁড়াচ্ছিলেন অনেকে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না কেউ কেউ। এঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন জেলা থেকে শহরে পড়তে এসেছেন। স্বপ্নভঙ্গ হল? “একেবারেই না।” ঠোঁটের রক্ত মুছে এক ছাত্রী বললেন, “যাদবপুরে আন্দোলনের যে ঐতিহ্য আছে, সেটা জেনেই এসেছি। কিন্তু যিনি আমাদের অভিভাবক, তিনিই পুলিশ ডেকে অত্যাচার করবেন এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। এই কলঙ্ক গোটা বাংলার।”

jadavpur university vice chancellor clash molestation prasenjit mondal kolkata news latest news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy