Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

খনি এলাকায় জলের সঙ্কট মেটাতে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ বার পুরুলিয়ার কয়লাখনি এলাকাগুলোয় পানীয় জলের সঙ্কট কিছুটা কমার সম্ভাবনা দেখা দিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে সৌরশক্তি চালিত জলপ্রকল্প রূপায়ণে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে নির্দেশ দেন। এর পরেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ওই প্রকল্পে আরও বেশি এলাকায় পানীয় জলের সুবিধা পৌঁছে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
আদ্রা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০৩:৫৮
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ বার পুরুলিয়ার কয়লাখনি এলাকাগুলোয় পানীয় জলের সঙ্কট কিছুটা কমার সম্ভাবনা দেখা দিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে এসে সৌরশক্তি চালিত জলপ্রকল্প রূপায়ণে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে নির্দেশ দেন। এর পরেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ওই প্রকল্পে আরও বেশি এলাকায় পানীয় জলের সুবিধা পৌঁছে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ ক্ষেত্রে সৌরশক্তি চালিত জলপ্রকল্প রূপায়ণে রঘুনাথপুর মহকুমার কয়লা উত্তোলন করা হয় এমন কিছু এলাকায় বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পুরুলিয়ার নির্বাহী বাস্তুকার অঘোরদেব মণ্ডল।

চলতি আর্থিক বছরে ‘ডুয়েল ইউজ সোলার পাম্প পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম’ অর্থাৎ সৌরশক্তি চালিত জলপ্রকল্পে ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা পেয়েছে পেয়েছে জেলা। অঘোরদেববাবু বলেন, ‘‘গত আর্থিক বছরে এই স্কিমে জেলায় ৮৫টি পানীয় জলের প্রকল্প করা হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে সংখ্যাটা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনও মনে করছে যে গ্রামে পানীয়জলের চূড়ান্ত সঙ্কট রয়েছে, সেই এলাকায় সমস্যা সমাধানের এই ধরনের প্রকল্প কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবে।

“রঘুনাথপুরের কয়লাখনি জলস্তরের সমস্যা থাকায় গরমে টিউবয়েলগুলির জলস্তর দ্রুত নেমে যায়। ফলে ওই এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট নিরসনে এই প্রকল্প কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারবে।” তন্ময় চক্রবর্তী, পুরুলিয়ার জেলাশাসক

পুরুলিয়ায় তাঁর প্রশাসনিক বৈঠকে পানীয় জলের সমস্যা যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হবে, তার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের আগের দিন রবিবার নিতুড়িয়ার পাঞ্চেত বাঁধে স্থানীয় মহেশনদী গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে পানীয় জলের সঙ্কটের অভিযোগ পাওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন প্রশাসনিক বৈঠকে জেলায় পানীয় জলের সঙ্কট দূর করতে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়ার কথা। পরের দিন জেলা পরিষদের সভাগৃহের বৈঠকে রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কটের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় যে এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট রয়েছে, সেখানে জলের সংস্থান করার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দেন।

বস্তুত সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে এই ধরনের প্রকল্প পুরুলিয়ার মতো এলাকায় পানীয়জলের সঙ্কট দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মত প্রশাসনের। কিন্তু কেন পুরুলিয়ার জন্য এই প্রকল্পের গুরুত্ব দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী? জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘পুরুলিয়ায় নদী কম, তার উপরে যে ক’টি নদী রয়েছে, সেখানে জলের অভাব রয়েছে। তাই বড় মাপের জলপ্রকল্প গড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সরবরাহ কার্যত সম্ভব নয়। তা ছাড়া জাইকা প্রকল্পটি রূপায়িত হতে আরও তিন বছর দেরি রয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পটির মাধ্যমে যে সব গ্রামে পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট রয়েছে তা অনেকাংশেই লাঘব করা সম্ভব।

কী রয়েছে এই প্রকল্পে? জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটির বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই প্রকল্প থেকে দিনের বেলায় কার্যত সব সময়েই জল সরবরাহ সম্ভব। কারণ এই প্রকল্প চলে সৌরশক্তিতে। একই কারণে বিদ্যুতের খরচও নেই। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার অঘোরদেববাবু জানান, সৌরশক্তির মাধ্যমে পাম্প চালিয়ে টিউবয়েল থেকে জল তুলে পাঠানো হয় রিজার্ভারে। সেখান থেকে পাইপের সাহায্যে জল সরবরাহ করা হয় ট্যাপকলে। একটি গ্রামে চারটি ট্যাপকল তৈরি করে দিলে অনেকে জল পাবেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরো প্রক্রিয়াটিই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। বাসিন্দারা জল নেওয়ার পরে রিজার্ভার খালি হয়ে গেলেই ফের পাম্প চালু হয়ে রিজার্ভার ভরে দেবে।’’ সূর্যের আলোর উপর নির্ভরশীল হওয়ায় দিনের বেলায় এই প্রক্রিয়ায় জল সরবরাহে সমস্যা নেই। টিউবয়েলের কাছে ২০০০ লিটারের রিজার্ভার তৈরি করা হয়। তবে সারাদিন জল তোলার সুবিধা থাকায় বাসিন্দাদের জল পেতে সমস্যা হবে না।

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই জেলার কোন এলাকায় এই প্রকল্পগুলি গড়া হবে তার সমীক্ষা করতে নামতে চলেছে প্রশাসন। সমীক্ষায় দেখা হবে কোন এলাকায় মটির নীচের জলস্তর ভাল এবং নিরবিচ্ছন ভাবে সূর্যের আলো পাওয়া যাবে। অঘোরদেববাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পটি রূপায়নে গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে যে এলাকায় এই প্রকল্পগুলি করা সম্ভব সেখানেই কাজ করতে চাই।’’

এই প্রকল্পটি রূপায়িত হলে জেলার বহু এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা অনেকাংশেই লাঘব করা সম্ভব বলে মনে করছেন রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবু। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনিক বৈঠকে আমার এলাকার জলের সমস্যার কথা বলার পরেই মুখ্যমন্ত্রী জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পটি রূপায়িত করতে গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছেন যে এলাকায় পানীয়জলের সঙ্কট বেশি, সেই এলাকাগুলির তালিকা প্রশাসনের কাছে জমা করতে।”

জেলা প্রশাসনও চাইছে নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ির মতো কয়লাখনি এলাকায় কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে জলের সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব করতে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রঘুনাথপুরের কয়লাখনি এলাকায় গরমে টিউবয়েলগুলির জলস্তর দ্রুত নেমে যায়। ফলে ওই এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট নিরসনে এই প্রকল্প কার্যকরী ভূমিকা নেবে। আমরা ওই সব এলাকায় এই প্রকল্প গড়তে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE