Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ভালবাসার দিনে পাহাড়কে মমতার উপহার কালিম্পং জেলা

প্রেম দিবসের সঙ্গে তিনি মিলিয়ে দিলেন কালিম্পংকে। বললেন, ‘‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে এখন থেকে কালিম্পং দিবসও!’’ বাজির শব্দে তখন কান পাতা দায়।

রিটার্ন গিফট! মুখ্যমন্ত্রীকে অর্কিড উপহার মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে। কালিম্পঙে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

রিটার্ন গিফট! মুখ্যমন্ত্রীকে অর্কিড উপহার মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে। কালিম্পঙে ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।

কিশোর সাহা
কালিম্পং শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১০
Share: Save:

প্রেম দিবসের সঙ্গে তিনি মিলিয়ে দিলেন কালিম্পংকে। বললেন, ‘‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে এখন থেকে কালিম্পং দিবসও!’’ বাজির শব্দে তখন কান পাতা দায়।

এখানেই থামলেন না মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়কে নতুন জেলা উপহার দেওয়ার দিনে তিনি তাকে ‘আমার নতুন সন্তান’ (মাই নিউ বেবি) বলেও উল্লেখ করলেন। বললেন ‘ড্রিম গার্ল’। তাঁর কথায়, ‘‘কালিম্পঙের বাসিন্দাদের চোখে আমি অনেক স্বপ্ন দেখেছি। সেগুলি পূরণ করব।’’ যা শুনতে শুনতে মঞ্চে পিছনের সারিতে বসা হরকা বাহাদুর ছেত্রীর মুখের হাসি চওড়া হল। তিনিই প্রথম কালিম্পংকে আলাদা জেলা করার আর্জি নিয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরবারে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্যের ২১তম জেলা হল কালিম্পং।

মুখ্যমন্ত্রী ততক্ষণে ঘোষণা করেছেন, কালিম্পং থেকে জালেপ লা-র পথ সারিয়ে তোলার জন্য রাজ্য দেবে ২২০ কোটি টাকা। ওই পথই আগে ‘সিল্ক রুট’ বলে পরিচিত ছিল। বাণিজ্য চলত চিনের সঙ্গে। মমতা জানালেন, এই পথের সংস্কার হলে বাণিজ্য সহজতর হবে। জানিয়ে দিলেন, কালিম্পঙের তীব্র জলকষ্ট মেটাতে দেওয়া হবে আরও ৫০ কোটি টাকা। বললেন, কেউ তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এগিয়ে আসতে চাইলে তাকে সাহায্য করবে রাজ্য। কালিম্পঙে পর্যটনের উন্নতি ও প্রসার ঘটাতেও সাহায্য করা হবে।

কালিম্পং মেলা গ্রাউন্ডে তো বটেই, শহর জুড়ে তখন আতসবাজি ফাটতে শুরু করেছে। ড্রাম আর বাঁশির শব্দে হুল্লোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘দল হিসেবে এখানকার কোনও ভোটে আমরা জিতিনি। আমাদের কাউন্সিলর, পঞ্চায়েতও নেই। আগামী দিনে আমরা একসঙ্গে আরও কাজ করতে চাই।’’

আরও পড়ুন:

পড়ুয়াদের পুরস্কারের মঞ্চেই ক্ষোভের লাভা শিক্ষামন্ত্রীর

পাহাড়ের অনেকেই মনে করছেন, এই ভাবে জেলা ঘোষণার দিনই রাজনৈতিক ভাবে কালিম্পংকে পাশে চাইলেন মমতা। শীঘ্রই পাহাড়ে ভোট পর্ব শুরু হবে। প্রথমে পাহাড়ের চারটি পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা। তা মিটলে পঞ্চায়েত এবং তার পরে জিটিএ-এর ভোট হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে মোর্চা ছেড়ে বেরিয়ে জন আন্দোলন পার্টি গড়ে পাহাড়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করেছেন হরকা বাহাদুর। গত বিধানসভা ভোটে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করেন। সেই ভোটে হরকা হেরেছেন ঠিকই, কিন্তু মোর্চার জয়ের ব্যবধান কমে এসেছে ১১ হাজারে। মোট ভোটের প্রায় ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল হরকার দল। বিধানসভা ভোটের নিরিখে চার পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে মোর্চাকে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছে এই জোট। গত মাসে কলেজ ভোটেও মোর্চাকে টক্কর দিয়েছে তৃণমূল এবং জন আন্দোলন পার্টি।

এ দিন মঞ্চে বসেই হরকা শুনেছেন মমতার বক্তৃতা। হাত তুলে ‘ভি’ চিহ্নও দেখিয়েছেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘এটা কালিম্পঙের জয়। মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পঙের জন্য ভালবাসা উজার করে দিয়েছেন। আমরাও মুখ্যমন্ত্রীকে উজার করে ভালবাসা ফিরিয়ে দেব।’’ হরকার সঙ্গে তৃণমূলের জোট যে পাকাপোক্ত হবে, এই কথায় তার ইঙ্গিতও দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।

মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এ দিন মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন। মোর্চার নাম মুখে না আনলেও তাঁদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘আগ মৎ জ্বালাইয়ে।’’ পাহাড়ে অশান্তির কোনও চেষ্টা রাজ্য সরকার বরদাস্ত করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দু’বার তাগদা বাংলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা দু’বার সেটি বানিয়েছি। আর আগুন জ্বালাবেন না। সাচ্চা পাহাড়িরা আগুন জ্বালায় না। আগুন জ্বালালে আমরা পাল্টা আগুন লাগাব না। তবে ও সব আর বরদাস্তও করা হবে না।’’

কালিম্পং জেলা ঘোষণাকে আগেই স্বাগত জানিয়েছিল মোর্চা। তবে এ দিনই নতুন করে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন বিমল গুরুঙ্গ। এ দিন গোর্খা ভবনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ছিল। বৈঠকের পরে গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘বিদর্ভকে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন রাজ্যের মর্যাদা দিচ্ছে। তেমন হলে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে নতুন করে আন্দোলন হবে।’’ সঙ্গে গুরুঙ্গের কটাক্ষ, ‘‘১৫টি কেন, পাহাড়ে ৩০টি বোর্ড হলেও ভোট আমরাই জিতব।’’

গুরুঙ্গের মতোই নতুন জেলা গঠনের সমালোচনা করেছেন সিপিএম বিধায়ক তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যও। বলেছেন, ‘‘কালিম্পং জেলা গঠনে রাজনীতিটাই বড় হয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তা হলে তো অনেকে আলাদা জেলা, এমনকী আলাদা রাজ্যও চাইবেন। তাঁদের দাবির ক্ষেত্রে তো তা হলে অন্যায় কিছু দেখছি না।’’

রাজনীতির সংক্ষিপ্ত বার্তার আগে-পরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জুড়ে ছিল উন্নয়নের কথা। কেন নতুন জেলা করা হল তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মঞ্চ থেকে। বলেন, নতুন জেলা হলে প্রশাসনিক কাজে সুবিধে হবে। জেলার কোথায় কী পরিকাঠামো তৈরি হবে তার সিদ্ধান্ত চটজলদি নেওয়া সম্ভব হবে। বরাদ্দও মিলবে বেশি। সব থেকে বড় কথা, পর্যটকেরা এ বার বলবেন, ‘কালিম্পঙে যাচ্ছি’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Kalimpong District
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE