Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

কাজল-বার্তা মুখ্যমন্ত্রীরও

প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল আসন হাতছাড়া হওয়ার পর থেকেই। আর তাতেই সাম্প্রতিক অতীতে প্রকাশ্যে বারবার তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম থেকে অনুব্রত মণ্ডল, দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা।

দয়াল সেনগুপ্ত
বোলপুর শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:২২
Share: Save:

প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল আসন হাতছাড়া হওয়ার পর থেকেই। আর তাতেই সাম্প্রতিক অতীতে প্রকাশ্যে বারবার তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম থেকে অনুব্রত মণ্ডল, দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা। সরাসরি নাম না নিলেও এ বার একই সুর শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও।

বৃহস্পতিবার বোলপুরে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানুরের ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়কে যে বার্তা দিলেন, তাকে নানুরের দাপুটে নেতা কাজল শেখকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া হিসাবেই দেখছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এ দিনের রূদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত একাধিক পুলিশ আধিকারিক ও তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী পার্থসারথর কাছে জানতে চান নানুরের অবস্থা কী? ওসি জানান, এখন শান্ত। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, ‘‘কিছু দিন আগেও তো ওখানে খুব গণ্ডগোল হচ্ছিল। বাইরের লোকেরা এসে গোলমাল পাকাচ্ছিল। কেউ ঝামেলা করতে চাইলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও। আমি কী বলছি, আশা করি বুঝেছো।’’ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে ‘ছাড়’ পান ওসি।

ঘটনা হল, গত বিধানসভা ভোটে নানুর কেন্দ্রে গদাধর হাজরার হারের নেপথ্যে কাজল শেখকেই দায়ী করেছেন তৃণমূলের নেতারা। ভোট মিটতেই তাই এলাকায় কাজলকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলীয় নেতৃত্ব। কাজলের দখলে থাকা নানুর পঞ্চায়েত সমিতি ছিনিয়ে নিয়েছে গদাধর অনুগামীরা। কাজলকে গ্রেফতার করার দাবিতে সরব হয়েছেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও। নানুরের বাসাপাড়ায় শহিদ দিসবের সমাবেশে যোগ দিতে জেলা পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিমও কাজলকে নাম না করে ‘মিরজাফর’ বলেও তোপ দেগেছিলেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে কাজল শেখের বিরুদ্ধে অভিযান আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছেন দলের নেতারা। তবে শুধু নানুর নয়, সমস্ত ওসি-আইসি-র প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর পরিষ্কার নির্দেশ— ‘যে কোনও অন্যায়কে কড়া হতে দমন করুন’।

তবে, সার্বিক ভাবে বীরভূমে উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে বরাবরের মতো এ বারও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের পরে মমতা বলেন, ‘‘সব দিক থেকেই এই জেলার পারফর্মেন্স খুব ভাল। অনেকগুলি বিষয়ে যেমন একশো দিনের কাজ, খাদ্যসাথী প্রকল্প, মিড-ডে মিল, কিসান ক্রেডিড কার্ডের মতো প্রকল্পগুলিতে ১০০ শতাংশ কাজ হয়েছে।’’

বস্তুত, এ দিনের বৈঠকে আগাগোড়া খোশমেজাজেই ছিলেন দিদি। কাউকেই সে ভাবে কোনও বিষয়ে বকুনি খেতে হয়নি। বরং কাজ ভাল করার জন্য ধন্যবাদ পান জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী। যদিও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের কোথায় কী হয়েছে না হয়েছে, সেটা সবিস্তারে জেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বাইরে বিডিও এবং সভাপতিদের কাছে একশো দিনের কাজ, জলধর জলভর প্রকল্প, পুকুর সংস্কার-সহ নানা বিষয়ে কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। কোথায় কোথায় প্রাথমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রয়োজন, সেটাও জেনে নেন। আধিকারিক এবং বিধায়কদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘অন্যান্য বৈঠকে যেভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়, তা এ বার হয়নি। এ যেন উপর উপর চোখ বোলানো। যেভাবে তৈরি হয়ে এসেছিলাম, পরীক্ষার প্রশ্ন তার থেকে ঢের সহজ ছিল!’’ ভালয় ভালয় সব মিটে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও।

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সরাসরি: ‘মাছ ধরতে শেখানো উচিত’, আক্রমণ দেবজিতের

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kajal Sekh administrative meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE