কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য আচরণবিধি তৈরি করবে রাজ্য সরকার। শনিবার নবান্নে এ খবর জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
কেন আচরণবিধি তৈরি করতে চাইছে সরকার তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘সরকারি কর্মীদের জন্য আচরণবিধি রয়েছে। শিক্ষকদেরও বেতন দেয় রাজ্য। তা হলে তাঁদের জন্য আচরণবিধি থাকবে না কেন?’’ পার্থবাবু মনে করেন, শিক্ষকদের জন্য ইউজিসি-র একটি আচরণবিধি থাকলেও কার্যত সেটা কেউ মেনে চলেন না। ক্ষমতায় আসার চার বছর পরে কেন আচরণবিধি তৈরির কথা বলছেন শিক্ষামন্ত্রী? এ প্রশ্নে চাপানউতোর শুরু হয়েছে শিক্ষক মহলে। এক পক্ষের মতে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষক এখনও শাসক-বিরোধী মনোভাবাপন্ন। আগামী বছর ভোটের আগে তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতে পারেন বলেও খবর। তাই তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে আচরণবিধি তৈরির কথা বলেছেন পার্থবাবু। অন্য পক্ষের মত, বহু কলেজেই শিক্ষকেরা ঠিক মতো ক্লাস করেন না বলে অভিযোগ আসছে। তাই হাত গুটিয়ে বসে না থেকে কিছু একটা করতে চাইছে রাজ্য।
মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘আচরণবিধি তৈরির আগে শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আমি নিজে কথা বলব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শিক্ষকদের জন্য নানা নিয়ম চালু রয়েছে! কাউকে হাজিরা খাতায় সই করতে হয়, কাউকে হয় না। অনেকে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজিরা না দিয়ে মিটিং-মিছিল করেন। টেলিভিশনের টক-শোতে বসেন।’’ এ সব চলতে পারে না বলে হুঁশিয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর। পার্থবাবুর এই ঘোষণার সমালোচনা করেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন’ (ওয়েবকুটা)। তাদের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘আচরণবিধি বলতে শিক্ষামন্ত্রী কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে আচরণবিধি তৈরি করতে গিয়ে যদি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়, তা হলে আমরা অবশ্যই তার বিরোধিতা করব।’’
এমন সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েও পার্থবাবুর মত, স্কুল শিক্ষকদের একটি নিয়মের মধ্যে চলতে হয়। ফলে তাঁদের মধ্যে নিয়মভাঙার প্রবণতা কম। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ বেপরোয়া ভাবে চলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের আচরণবিধি মানতে হয়। নির্দিষ্ট দিন উপস্থিত না থাকলে তাদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয় না। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ দিনের পর দিন ক্লাসে না গিয়েও দিব্যি বেতন নিচ্ছেন।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও অন্নদাতা সরকার। অথচ তাদের কোনও ক্ষমতা নেই। এটা চলতে পারে না।’’
কিন্তু আচরণবিধি চালু করলে তা ইউজিসি-র দেওয়া স্বশাসনের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে না? শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস, কোনও স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করা হবে না। প্রয়োজনে ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy