Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
ওষুধ-বাজারে বিভ্রান্তিও

ব্যানড হয়ে যাওয়া ওষুধ স্থগিতাদেশ নিয়ে আবার ফিরে এল বাজারে

বিক্রি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ হয়েছিল সাত দিন আগে। আদালত সেই নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ জারি করায় বাজারে আবার ফিরে এল একাধিক কম্বিনেশন ড্রাগ। এর কোনওটা জ্বর, সর্দি-কাশির, কোনওটা ত্বক- সংক্রমণের ওষুধ। অন্তত সোমবার পর্যন্ত সেগুলি আগের মতোই বিকোতে পারবে। সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি।

সোমা মুখোপাধ্যায় ও পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

বিক্রি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ হয়েছিল সাত দিন আগে। আদালত সেই নিষেধাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ জারি করায় বাজারে আবার ফিরে এল একাধিক কম্বিনেশন ড্রাগ। এর কোনওটা জ্বর, সর্দি-কাশির, কোনওটা ত্বক- সংক্রমণের ওষুধ। অন্তত সোমবার পর্যন্ত সেগুলি আগের মতোই বিকোতে পারবে। সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি।

কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধ-সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে চারটি ওষুধ সংস্থা দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার আদালত নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে দিলেও ডাক্তারেরা সংশ্লিষ্ট ওষুধগুলো প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারবেন কি না কিংবা মানুষ তা খেতে পারবেন কি না, সে সম্পর্কে বিভ্রান্তি তুঙ্গে। ওষুধ বিক্রেতা থেকে চিকিৎসক— সব মহলেই যথেষ্ট সংশয়। ‘‘এক বার ব্যানড হয়ে যাওয়া ওষুধ পরে বেচতে গেলে হাজারটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। জবাব দিতে পারব না।’’— মন্তব্য এক ফার্মাসি-মালিকের। তাঁর কথায়, ‘‘কেন হঠাৎ নিষিদ্ধ হল, খাওয়া নিরাপদ কিনা, খদ্দেররা এ সব শুধোবেন। আমরা নিজেরাই জানি না। ওঁদের কী বলব?’’

ড্রাগ কন্ট্রোলের খবর: মানবশরীরে কম্বিনেশন ড্রাগ, অর্থাৎ একাধিক রাসায়নিক গঠনযুক্ত ওষুধের মিশ্রণের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। বছর কয়েক আগে এমন ওষুধ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যুগ্ম সংসদীয় কমিটি। ড্রাগ কন্ট্রোল কী ভাবে সেগুলিকে অনুমোদন দিল, কমিটি তার রিপোর্টও তলব করে। তবু কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল নড়েচড়ে বসেনি। যে কারণে সংসদীয় কমিটি ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তাদের ডেকে ভর্ৎসনাও করেছে বলে মন্ত্রক জানিয়েছে।

তার পরেই বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেষমেশ গত ১০ মার্চ

কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘোষণা করে, দেশ জুড়ে বিভিন্ন ওষুধের ৩৪৪ ধরনের ‘কম্বিনেশন’ বা ‘মিশ্রণ’ নিষিদ্ধ হল।

এর দরুণ বাজারে পাঁচ হাজারের বেশি ব্র্যান্ড নামের ওষুধের বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়ে প্রায় ৩৮০০ কোটি টাকা। ড্রাগ কন্ট্রোলের তথ্যানুযায়ী, চালু একটা কাশির ওষুধই মজুত রয়েছে অন্তত আড়াইশো কোটি টাকার।

কোর্টের নির্দেশে সেটি সহ ১৫ ধরনের কম্বিনেশন ড্রাগ আপাতত নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে রেহাই পেয়েছে। দিল্লি হাইকোর্টে মামলাকারী কোম্পানিগুলির আবেদন ছিল, এত বছর ধরে ওষুধগুলো বিক্রি হচ্ছে দেখেও সরকার তাদের কাছে কিছু জানতে চায়নি। আচমকা এ-হেন সিদ্ধান্তে তাদের কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা সঙ্কটে পড়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও চেয়েছে আবেদনকারীরা।

ওষুধের স্টকিস্ট ও দোকান-মালিকদের যুক্তি প্রায় এক। পশ্চিমবঙ্গের ওষুধ-ব্যবসায়ী সংগঠন ‘ফার্মাসিউটিক্যাল ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’-এর সহ সভাপতি অলোক দে বলেন, ‘‘তিনশো চুয়াল্লিশটা কম্বিনেশন ব্যান করার মানে পাঁচ হাজার ওষুধ বাজার থেকে উঠে যাওয়া। প্রায় চার হাজার কোটির ব্যবসা মার খাওয়া।’’ অলোকবাবুর দাবি, মাঝারি মাপের এক-এক জন স্টকিস্ট নিষিদ্ধ-তালিকার অন্তত তিন হাজার ওষুধ মজুত রেখেছেন। ‘‘উনি কী করবেন? ওঁকে তো কয়েক মাস সময় দিতে হবে। আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা কি সরকার করবে?’’— প্রশ্ন অলোকবাবুদের।

এমতাবস্থায় এ দিন দিল্লি হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ— বছরের পর বছর বাজারে চালু থাকা ফিক্সড ডোজ কম্বিনেশনের হরেক ওষুধ এক কথায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি স্থগিত না-করার কারণ নেই। মামলার পরবর্তী শুনানি ২১ মার্চ। তত দিন ওষুধগুলো বিক্রি হতে পারে।

পুরো বিষয়টিকে ঘিরে বিতর্কও দানা বেঁধেছে। একাধিক জনস্বাস্থ্য সংগঠনের প্রশ্ন— বিশেষজ্ঞ কমিটি যাকে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে, সেই ওষুধ খেয়ে কেউ অসুস্থ হলে দায় কে নেবে? ফার্মোকোলজির অধ্যাপক স্বপন জানার প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ দেশের ওষুধ-বাজারে যে কী চরম অনাচার চলছে, এতেই তার প্রমাণ।’’

ড্রাগ কন্ট্রোলের কী বক্তব্য?

কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল জ্ঞানেন্দ্র সিংহ এখনই মন্তব্য করতে চাননি। তবে পশ্চিমবঙ্গের ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘দিল্লির লিখিত নির্দেশ পাওয়ামাত্র আমরা ওই সব ওষুধের বিক্রি বন্ধে উদ্যোগী হয়েছিলাম। এ বার স্থগিতাদেশের খবর এল। আমাদের কিছু করার নেই।’’

ওষুধগুলো আপাতত রাজ্যে আগের মতোই বিক্রি হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন চিন্তামণিবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

combination drug stay order
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE