Advertisement
০৬ মে ২০২৪

গোর্খাল্যান্ড নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে অহলুওয়ালিয়া

পাহাড়ে গিয়ে ফের পৃথক গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে সওয়াল করে দলের অস্বস্তি বাড়ালেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। শনিবার কালিম্পঙে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘পঞ্জাবিরা পঞ্জাবের কথা বলতে পারেন। বাঙালিরা বলতে পারেন আমরা বাংলার। একই ভাবে বিহার, কেরল, তামিলনাডুর লোক বলতে পারেন তাঁরা ওই সব প্রদেশের বাসিন্দা। গোর্খারা কবে বলবেন ‘আমি গোর্খাল্যান্ডের’? যে স্বপ্ন লক্ষ-কোটি মানুষ দেখছেন, তা পূরণ হওয়া উচিত।’’

কালিম্পঙে জিটিএ-র স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া।—নিজস্ব চিত্র।

কালিম্পঙে জিটিএ-র স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের অনুষ্ঠানে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া।—নিজস্ব চিত্র।

রেজা প্রধান
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৫
Share: Save:

পাহাড়ে গিয়ে ফের পৃথক গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে সওয়াল করে দলের অস্বস্তি বাড়ালেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। শনিবার কালিম্পঙে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘পঞ্জাবিরা পঞ্জাবের কথা বলতে পারেন। বাঙালিরা বলতে পারেন আমরা বাংলার। একই ভাবে বিহার, কেরল, তামিলনাডুর লোক বলতে পারেন তাঁরা ওই সব প্রদেশের বাসিন্দা। গোর্খারা কবে বলবেন ‘আমি গোর্খাল্যান্ডের’? যে স্বপ্ন লক্ষ-কোটি মানুষ দেখছেন, তা পূরণ হওয়া উচিত।’’ মন্তব্য জানাজানি হতেই শুরু হয় বিতর্ক। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল থেকে শুরু করে, বিরোধী সিপিএম, এমনকী, পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এ প্রশ্নে এক হাত নিয়েছে বিজেপি-কে। প্রায় সবারই দাবি, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই এই মন্তব্য করেছেন মোর্চার জোটসঙ্গী বিজেপি সাংসদ। বিরোধীদের অনেকেরই কটাক্ষ, ‘‘এ যেন চাঁদ সওদাগরের বাঁ হাতে মনসা পুজো! করতে হয় করা, বলতে হয় বলা।’’ সরকারি অনুষ্ঠানকে অহলুওয়ালিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করাতেও সমালোচনার সুর চড়েছে।

দার্জিলিঙের সাংসদের এই মন্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক’ বলে মনে করছে শাসক দলও। শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে পড়াশোনা করেও তিনি তো অহলুওয়ালিয়াই আছেন দেখছি। বাংলা তো তাঁকে জায়গা দিয়েছে, কিন্তু তিনি এমন সাম্প্রদায়িক ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করে স্বাধীনতা দিবসে দেশের সংবিধানের অবমাননা করেছেন। সব জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে বাংলা মিলেমিশে আছে। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা ভারতবাসী।’’ এ নিয়ে পার্থবাবুর হুঁশিয়ারি, ‘‘রাজনৈতিক মতলবে এমন প্ররোচনা তৈরি করে বাংলায় অশান্তি তৈরির চেষ্টা করবেন না!’’

শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘উনি পাহাড়ে এক রকম, শিলিগুড়িতে এক রকম, কলকাতায় এক রকম, দিল্লিতে এক রকম কথা বলেন। পৃথক রাজ্য নিয়ে পাহাড়ের মানুষের আলাদা আবেগ রয়েছে। কিন্তু সে আবেগকে সম্মান জানিয়েও বলছি, ওই দাবি বাস্তবসম্মত নয়। নির্বাচন এলেই সেই আবেগকে উস্কে দেওয়াটা দায়িত্বশীল দলের কাছে কাম্য নয়।’’ তাঁর অভিযোগ, পাহাড়ের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেই এ কথা বলেছেন বিজেপি সাংসদ। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এটা চালাকির রাজনীতি। এতে আন্তরিকতা নেই।’’ অশোকবাবুর সঙ্গে তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের বিজেপি-সমালোচনার সুর কার্যত এক। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু বার জানিয়ে দিয়েছেন বাংলা ভাগ করতে দেবেন না। দার্জিলিং এ রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করে লাভ হবে না।’’ দার্জিলিং পাহাড়ের প্রথম সারির তৃণমূল নেতা বিন্নি শর্মার দাবি, মোর্চার সমর্থনে সাংসদ হয়েছেন বলেই জোট রাজনীতির দায় বহন করতে গিয়ে অহলুওয়ালিয়া এমন মন্তব্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্বাধীনতা দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানকে রাজনীতির মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করাটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও অহলুওয়ালিয়ার ওই মন্তব্যে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়ানো ছাড়া আর কোনও লাভ হবে না বলে মনে করছেন।

সাংসদের মন্তব্য নিয়ে মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে দার্জিলিঙে এক অনুষ্ঠানে মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গের কথায় বিজেপি সাংসদের মন্তব্যের ছায়া দেখছেন পাহাড়ে মোর্চার বিরোধীরা। গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘আমরা ২০১৮ সালের স্বাধীনতা দিবস পাহাড়ে তিন দিন ধরে পালন করব। বিশাল মাপের উৎসব হবে।’’ কেন আলাদা করে এই উল্লেখ? গুরুঙ্গের বক্তব্য, ‘‘যথা সময়ে তা জানানো হবে।’’ গোর্খা লিগ, সিপিআরএমের মতো মোর্চা বিরোধী দলের নেতাদের অনুমান, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকতে থাকতে ২০১৮ সালের মধ্যে গোর্খাল্যান্ডের দাবি পূরণের দিকে কিছুটা এগোনোর আশা করছে মোর্চা। গুরুঙ্গের মন্তব্যে সেই ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে। আবার জিএনএলএফের মতো কোনও কোনও দলের দাবি, গোর্খাল্যান্ডের দাবি আদায়ের জন্য অহলুওয়ালিয়া সংসদে গিয়ে ধর্নায় বসলে তাঁরা ওই বক্তব্য বিশ্বাস করবেন।

গোর্খাল্যান্ড প্রশ্নে বিজেপির ‘অস্বস্তি’ নতুন নয়। গত লোকসভা ভোটে বিজেপি-র ইস্তাহারে প্রথমে গোর্খাল্যান্ডের কথা ছিল না। জোট-সঙ্গী মোর্চার মধ্যে ক্ষোভের আঁচ পেয়ে পরে সেই দাবি ‘খতিয়ে দেখার’ আশ্বাসের কথা যোগ করেছিলেন। নীতিগত ভাবে বিজেপি ছোট রাজ্যের পক্ষপাতী হলেও বিজেপি-র রাজ্য শাখা বাংলা ভাগের বিরোধী। ফলে, অহলুওয়ালিয়ার এ দিনের মন্তব্যে কি নতুন করে তাদের অস্বস্তি বা়ড়ল না? দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু বলেন, ‘‘সাংসদের সঙ্গে কথা বলার পরে মন্তব্য করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE