কোনও সমস্যা বা অভিযোগ নিয়ে সরকারি অফিসে গেলে সুরাহা পেতে জুতোর সুখতলা ক্ষয়ে যায়। আমজনতার অভিজ্ঞতা এটাই। এই অভিযোগের ব্যাপারে প্রায় সকলেই একমত যে, সরকারি কর্মীদের নড়াচড়া করতেই দিন কাবার!
সরকার মানেই আঠারো মাসে বছর— আবহমান কালের এই বদনাম ঘোচাতে কোমর বাঁধছে নবান্ন। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকার ঠিক করেছে, সময় মেনে জনসাধারণের অভাব-অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরকেই। তবে সেই কাজে কতটা অগ্রগতি হল, অভিযোগকারী সুরাহা পেলেন কি না— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেটা দেখবে নতুন তৈরি ‘জনপরিষেবা অধিকার কমিশন’। নবান্নের এক কর্তা জানান, ওই কমিশনের হাতে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই তাদের মতামত বা সুপারিশ সরাসরি চলে যাবে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে। তবে প্রয়োজনে তাঁরাও সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে জানান কমিশনের অন্যতম সদস্য, অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ।
নবান্নের এক কর্তা জানান, ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন বা এনটিপিসি-র প্রাক্তন সিএমডি অরূপ রায়চৌধুরীকে চেয়ারম্যান এবং রুদ্রনীলবাবুকে সদস্য করে তিন সদস্যের ওই কমিশন তৈরি হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে। খাদ্য ভবনের ছ’তলায় তাদের অফিস। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পরে এই ১০ মাসে কমিশনের কাজ বিশেষ এগোয়নি। জন-অভিযোগের সুরাহা করার পরিকল্পনা রূপায়ণে এত দিনে তেড়েফুঁড়ে নামতে চাইছে নবান্ন। কমিশনের কাজে গতি আনতে গত সপ্তাহেই এক ডব্লিউবিসিএস অফিসারকে সেখানকার সচিব-পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
ঠিক হয়েছে, আপাতত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পঞ্চায়েত, পুরসভা, খাদ্য, সেচ, কৃষি, বন, পশুপালন, বিদ্যুৎ, পূর্ত ও সড়ক, ক্রীড়ার মতো ২০টি দফতরের উপরে নজরদারি চালাবে ওই কমিশন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ওই দফতরগুলির নিত্য যোগাযোগ। তাই ওই সব দফতরকেই বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রশাসনের এক কর্তা। রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। অভাব-অভিযোগ জানানোর জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম রয়েছে। দফতরের মতো কমিশনের কাছেও প্রতিটি ফর্মের প্রতিলিপি থাকবে, যাতে তারাও অভাব বা অভিযোগ জানতে পারে।’’
নবান্নের সূত্রের খবর, কমিশনকে পঞ্চায়েত দফতর ও কলকাতা পুরসভার উপরে বিশেষ নজর দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শাসক দল মনে করে, সড়ক, বিদ্যুৎ, সেচ, খাদ্যের মতো কয়েকটি দফতরের কাজে গত পাঁচ বছরে ‘সাফল্য’ এসেছে। সেই জন্যই রাজ্যের মানুষ মমতাকে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এনেছেন। এ বার উন্নয়নের ধারবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগের সুরাহার দিকেও বিশেষ নজর দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই কমিশনকে সক্রিয় করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy