Advertisement
২১ মে ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, হাসপাতালের জবাবদিহি

আপনাদের বিরুদ্ধে বিল নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ অভিযোগটা আপনাদের বিরুদ্ধে করেছে। চল্লিশ-পয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা বিল! পাঁচতারা হোটেলেও এত খরচ হয় না।

টাউন হলের অনুষ্ঠানে চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা। বুধবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

টাউন হলের অনুষ্ঠানে চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা। বুধবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪১
Share: Save:

অ্যাপোলো হাসপাতাল

মুখ্যমন্ত্রী: আপনাদের বিরুদ্ধে বিল নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ অভিযোগটা আপনাদের বিরুদ্ধে করেছে। চল্লিশ-পয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা বিল! পাঁচতারা হোটেলেও এত খরচ হয় না।

প্রতিনিধি: ইমারজেন্সি থেকে রোগী না-ফেরানোর এবং বিলে স্বচ্ছতার চেষ্টা সব সময় করি। আমরা অনেক জিনিস নিয়ে এসেছি। যেমন রোবটিক সার্জারি, আধুনিক স্ক্যান মেশিন, রেডিওথেরাপি মেশিন, যা পূর্ব ভারতে খুব কম জায়গায় আছে। আমরা জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল। তাই কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাই খরচ বেড়ে যায়। বিলের ব্যাপারটা দেখব। ইমার্জেন্সি থেকে কখনও ফেরত পাঠাই না। চাহিদা বেশি তাই বে়ড পেতে সময় লাগে। প্রচুর হাসপাতাল থেকে আমাদের হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় পাঠানো হয়। ফলে চিকিৎসার খরচ বেড়ে যায়।

মুখ্যমন্ত্রী: মেশিন তো ব্যবসার জন্য কেনে। যে কোনও ব্যবসা প্রথম এক-দু’বছর ক্ষতিতেই চালাতে হয়। তার পর পরিস্থিতি ঠিক হয়। প্রথম দিন থেকেই যদি মনে করি সোনার হাঁসটাকে কেটে ফেলব, তা হলে তো সোনার ডিম হবে না। লোকে আপনাদের ভরসা করে। বাজেট হোটেলের মতো বাজেট হাসপাতাল করেন না কেন? কত মেশিন কেনেন, যে এত বিল!

প্রতিনিধি: আমরা মেডিক্যাল কলেজ করছি। কথা দিচ্ছি সেখানে বাজেট হাসপাতাল করব।

মুখ্যমন্ত্রী: আমার চিফ সেক্রেটারি কিছু বলবে।

মুখ্যসচিব: রিপোর্ট বলছে, মোট শয্যার ১০ শতাংশ রোগীকে আপনারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেবেন এবং ২০ শতাংশ দেবেন ওপিডিতে যাদের বার্ষিক আয় ছ’হাজারের কম। এটা আপনারা করেন?

প্রতিনিধি: রিপোর্টে যে বিষয়টি ওপিডি ও শয্যা নিয়ে আছে, তা বার্ষিক ছ’হাজারের কম আয়ের লোককে...

মুখ্যমন্ত্রী: বছরে ছ’হাজারের কম আয়!

প্রতিনিধি: হ্যাঁ ম্যাডাম!

মুখ্যমন্ত্রী: এটা তো তিরিশ বছর আগের আইন। কি বলছেন আপনি! এই জন্যই বলেছেন পুলিশ নিয়ে গেলে বিনামূল্যে করে দেন। আপনাকে তো ১০ শতাংশ দিতে হবে। সেটা দিচ্ছেন কোথায়! একজন ভিখিরির কত আয় জানেন! সরকারি নিয়ম মানা হচ্ছে না।

বেলভিউ

মুখ্যমন্ত্রী: যে ভাবে চিকিৎসা করছেন তাতে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। অনেক সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়ক, সরকারি কর্মী আপনাদের হাসাপাতালে যান। বাড়তি খরচ থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আপনাদের নার্সিং সার্ভিসও ভাল নয়।

প্রতিনিধি: খরচের ব্যাপারে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে। তবে ম্যাডাম প্রতি বছর বেলভিউ থেকে প্রচুর নার্স সরকারি হাসপাতালে চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এর জন্য নার্সিং-এ সমস্যা হচ্ছে। আমাদের নার্সদের যাতে না নেওয়া হয়, সেটা দেখুন।

মুখ্যমন্ত্রী: আপনাদের নার্স যদি অন্য কোথাও চলে যায়, তার জন্য সরকার দায়ী নয়। কেউ ঠিক করে দিতে পারে না যে, নার্সরা কোথায় চাকরি করবেন। আপনারা মাইনে দিন ভাল করে নার্সদের। তা হলেই ওঁরা থাকবেন। আর আপনাদের আইসিইউতে ইনফেকশন রেট খুব বেশি। এক জন রোগী যাওয়ার পর ভাল করে ক্লিন না করেই অন্য রোগীকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেন্ট্রালাইজড এসি হওয়ায় ইনফেকশন ছড়াচ্ছে। রোগী সুস্থ হতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। টন্ডন সাহেব এগুলো দেখুন।

সিএমআরআই

মুখ্যমন্ত্রী: সে দিন যে ঘটনা ঘটেছে (সম্প্রতি ভাঙচুর-কাণ্ড) সেটা ঠিক হয়নি। পুলিশ অ্যাকশন নিয়েছে, আরও নেবে। কিন্তু আপনাদের বিল যা-তা হচ্ছে। (এর পর মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলার ইঙ্গিত করেন) আর ক্যাশলেস করছেন না আপনারা।

মুখ্যসচিব: মেডিক্যাল রিপোর্ট দিচ্ছেন না আপনারা।

প্রতিনিধি: এ বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমরা বহু দিন ইমার্জেন্সি এবং ওপিডিতে নিখরচায় পরিষেবা দিচ্ছি। তবে বিলের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে এ বিষয়ে দ্বিমত
নেই। কথা দিচ্ছি, আর এ অভিযোগ উঠবে না।

বিএম বিড়লা

মুখ্যমন্ত্রী: আপনাদের ফেয়ার প্রাইস ডায়গোনস্টিক সেন্টার আছে?

প্রতিনিধি: না ম্যাডাম। আমাদের নিজস্ব একটা আছে।

মুখ্যমন্ত্রী: আমাদের এই স্কিমটা আছে। আপনারা এটা করতে পারেন।

আমরি

প্রতিনিধি: আমাদের আরও স্বচ্ছতা দরকার এ বিষয়ে আমরা সহমত। আমরা একটা ‘ফিক্সড প্যাকেজ’ শুরু করেছি সম্প্রতি। বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। এতে প্যাকেজের দামের ওপর এক টাকাও বেশি নেওয়া হবে না।

মুখ্যমন্ত্রী: রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও বেশি টাকা নেবেন না? ওই টাকাতেই হয়ে যাবে তো? তার পর এক রকম টাকা বলে ভর্তি করবেন, আর নেবেন আর এক রকম।

প্রতিনিধি: কোনও বেশি টাকা নেওয়া হবে না ম্যাডাম। আর আমাদের একটা পেশেন্টস ওয়েলফেয়ার স্কিমও আছে বিপিএল-দের জন্য

মুখ্যমন্ত্রী: ওটা আজকের সময়ের স্কিম নয়। ও সব এখন চলে না। স্কিম পরিবর্তন করতে হবে আপনাদের

রুবি হাসপাতাল

মুখ্যমন্ত্রী: এ বার রুবি। মানে যেখানে মানুষ স্যাটাস্যাট চলে যায় আর বিল বেড়ে যায়।

প্রতিনিধি: আমরা ম্যাডাম রোড ট্র্যাফিক অ্যাক্সিডেন্ট বিনা পয়সায় চিকিৎসা করছি।

মুখ্যমন্ত্রী: কিন্তু রুবির চার্জ খুব বেশি। বিল বাড়ানো নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ আসছে। রোগীরা হাসপাতাল থেকে ঠিকঠাক রেকর্ডও পাচ্ছেন না।

প্রতিনিধি: আমাদের গ্রিভ্যান্স হ্যান্ডলিং সেল রয়েছে। ক্যানসারের চিকিৎসাও সুলভে করছি।

মুখ্যমন্ত্রী: রুবি রোগীদের রেকর্ড দিচ্ছে না। আমাদের সার্ভে রিপোর্ট বলছে। অভিযোগ করছেন রোগীরা। ই-প্রেসকিপশন, ই-রেকর্ড চালু করতে হবে আপনাদের।

মিটিংয়ে মমতা

মেডিকা

মুখ্যমন্ত্রী: ল্যান্ড নিয়েছেন আমাদের থেকে নিখরচায়?

প্রতিনিধি: না ম্যাডাম। টাকা দিয়ে কিনেছি।

মুখ্যমন্ত্রী: লিজ, লিজ নিয়েছেন।

প্রতিনিধি: হ্যাঁ ম্যাডাম। ইনস্টলমেন্টে।

মুখ্যমন্ত্রী: অনেক টাকা আপনাদের। অনেক ইনকাম করছেন। তা হলে ইনস্টলমেন্ট কেন?

প্রতিনিধি: থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম, থ্যাঙ্ক ইউ।

মুখ্যমন্ত্রী: কিডনি চক্র বন্ধ হয়েছে আপনাদের?

প্রতিনিধি: কোনও দিন ছিলই না ম্যাডাম!

মুখ্যমন্ত্রী: ছিল তো। কেন্দ্র কাগজ পাঠিয়েছে আমাদের। কোর্টের ফিক্সড ল ছিল না বলে পার পেয়ে গিয়েছেন। ফারদার যেন না হয় এই সব চক্র। (স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,
আপনি বলুন)

স্বাস্থ্য অধিকর্তা: এটা এখনও সাব জুডিজ় ম্যাটার। উত্তরপ্রদেশ থেকে একটা অভিযোগ এসেছিল। সিআইডিকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়েছিল। ওরা একটা কিছু পেয়েছিল। আমরা মামলা করি মেডিকার বিরুদ্ধে। মেডিকা হাইকোর্টে যায়। বিষয়টি
এখন বিচারাধীন।

মুখ্যমন্ত্রী: পুলিশকে একটা ল করতে হবে। রাজীব (পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার) একটু দ্যাখো। একটা কথা মাথায় রাখুন, শিশু পাচার চক্র, কিডনি পাচার চক্র এই সব আমি করতে দেব না

আরও পড়ুন: হাসপাতাল নিয়ে কড়া মমতা, অসৎ ব্যবসা চালু থাকলে লাইসেন্স রদ

ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস

মুখ্যমন্ত্রী: আপনাদের সব নিউরো সার্জারি আর নিউরো মেডিসিনের ডাক্তার রয়েছেন। আমাদের একটু সাহায্য করতে পারেন। আমাদের নিউরোর ডাক্তারের খুব সমস্যা। আমরা বাঙুর আর রামরিখ মিলিয়ে দিয়েছি। তাও ডাক্তারের সমস্যা। আপনাদের ডাক্তারবাবুরা কি আমাদের হাসপাতালে দিনে ১-২ ঘণ্টা পরিষেবা দিতে পারবেন?

প্রতিনিধি: নিশ্চয়ই ম্যাডাম। আর ম্যাডাম আমাদের বেড চার্জ সব চেয়ে কম। সাধারণ বেড ৮০০ টাকা

মুখ্যমন্ত্রী: ৮০০! এটা কম হল? সরকার আপনাদের অনেক হেল্প করেছে। এ বার পাবলিককে হেল্প করুন। কম দামে জমি পেয়েছেন আপনারা, আমি জানি টুকটাক।

কেপিসি

মুখ্যমন্ত্রী: লোক মরে গেলেও ছাড়েন না আপনারা। এক জন নামী আর্টিস্টের বডি আটকে
রেখেছিলেন। মরে গেলে আর কার কাছ থেকে নেবেন?

প্রতিনিধি: ইয়েস ম্যাডাম।
এটা এক বার হয়েছিল। তার পর
আর কোনওদিন হয়নি। কথা দিচ্ছি হবেও না!

মুখ্যমন্ত্রী: আপনারা হাসপাতালের এলাকাটা একটু পরিষ্কার রাখুন প্লিজ। গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন রাখা খুব দরকার। আমাদের পিজি হাসপাতাল কী রকম হয়েছে দেখেছেন তো?

প্রতিনিধি: হ্যাঁ ম্যাডাম। আমরা পরিচ্ছন্ন রেখেছি। আপনি দয়া করে একদিন আসুন।

ভাগীরথী নেওটিয়া

মুখ্যমন্ত্রী: চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে আপনাদের বিরুদ্ধে। আর খুব কস্টলি। আমাদের সার্ভেতে উঠে এসেছে (স্বাস্থ্য সচিব রাজেন্দ্র শুক্ল-র দিকে তাকিয়ে) শুক্ল সাহেব আপনি বলুন।

স্বাস্থ্যসচিব: ১৫ জুলাই ২০১৪-র কেস। এক জন মায়ের মৃত্যু হয়েছিল। বাড়ির লোকের অভিযোগ ছিল, বার বার হাসপাতালকে বলা সত্ত্বেও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেননি। তখন তাঁরা আমাদের জানান, পুলিশে অভিযোগ করেন। স্বাস্থ্য দফতর তদন্ত করে গাফিলতি পায়। কিন্তু আমরা হাসপাতালে যোগাযোগ করলে ওরা আমাদের পর্যন্ত পাত্তা দেয়নি।

মুখ্যমন্ত্রী: প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব আমরা ৯০ শতাংশে নিয়ে গিয়েছি। বহু হাসপাতাল এখনও আমাদের রিপোর্ট দেয় না। এটা দিতে হবে। নবজাতক মৃত্যুকে আমি এ রাজ্যে শূন্যে আনতে চাই। আপনারা বিষয়টিকে নজর দিন।

প্রতিনিধি: ইয়েস ম্যাডাম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nursing home CM Complaint
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE