ভগ্নদশা: নাইয়ারাট গ্রামীণ হাসপাতাল।—নিজস্ব সংবাদদাতা
দৃশ্য ১: পাঁচ জন প্রসূতি অপেক্ষায়। দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হল লেবার রুমে। কিছুক্ষণ পরেই আরও এক মহিলার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হল। কিন্তু জায়গার অভাবে তাঁকে লেবার রুমে ঢোকানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রসূতির পরিবারের বচসা বেধে গেল।
দৃশ্য ২: হাসপাতালের পিছনে বড় বাবলা গাছের নীচে রোগীর লম্বা লাইন। একটি গুদাম ঘরের মধ্যে বসে চিকিৎসক রোগী দেখছেন। রোদের মধ্যে ভ্যানে শোয়ানো এক রোগী।
দৃশ্য ৩: দেখলে মনে হবে পোড়ো বাড়ি। দেওয়াল জুড়ে আগাছা। ভেঙে পড়েছে কার্নিস। তারমধ্যে জনা কয়েক রোগী দাঁড়িয়ে। চোখের চিকিৎসা চলছে এই ভাঙাচোরা বাড়িতে।
মন্দিরবাজার ব্লকের নাইয়ারাট গ্রামীণ হাসপাতালে এই পরিকাঠামোতেই চলছে পরিষেবা। ১৯৮০ সালে প্রায় ২০ বিঘা জমির উপরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হয়। সে সময়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ১৬টি আবাসন নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে ২০১২ সালে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। ওই হাসপাতালের অধীনে রয়েছে ২৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
ব্লকে ১০টি পঞ্চায়েত। জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। এলাকার বাসিন্দাদের ওই গ্রামীণ হাসপাতালের উপরেই নির্ভর করতে হয়। জনসংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু পুরনো হাসপাতাল সংস্কার করা হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন। ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতি দিন প্রায় সাড়ে চারশোর রোগী আসেন।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে ভবন সংস্কারের কাজ শুরু হয়। স্বাস্থ্য দফতরের থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়। ভবনের নির্মাণ কাজ সময় মতো শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। চিকিৎসকেরা বাধ্য হয়ে গাছ তলায় বসেও রোগী দেখেন। তাঁরা জানান, এই পরিস্থিতিতে রোগী দেখতে অসুবিধা হয়। তার মধ্যে পান থেকে চুন খসলেই রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে ঝামেলা বাধছে।
হাসপাতালের বিএমওএইচ দেবব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘ঠিকাদারদের গাফিলতির জন্য ভবনের কাজ শেষ হচ্ছে না। অসুবিধার মধ্যেই হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে।’’
স্বাস্থ্যকর্মীরা জানালেন, ওই হাসপাতালে ১৬টি আবাসন আছে। কিন্তু তার অবস্থাও খারাপ। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে। তারমধ্যেই বাধ্য হয়ে তাঁদের থাকতে হয়। বিএমওএইচ নিজেও ওই আবাসনে থাকেন।
হাসপাতালে কোনও সীমানা পাঁচিল নেই। দুষ্কৃতীদের আনাগোনা চলে বলে অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, সন্ধে ঘনালে হাসপাতাল চত্বরে মদের আসরও বসে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সব থেকে খারাপ অবস্থা লেবার রুমের। সেখানে দু’টি শয্যায় রোগী সামাল দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শুধু তাই নয়, ওই লেবার রুমে ভাল পর্দা না থাকায় প্রসূতিদের অসুবিধা হচ্ছে। এক প্রসূতির কথায়, ‘‘রাস্তার পাশে লেবার রুম। ভাল পর্দা নেই। লজ্জায় পড়তে হয়।’’
এ সবের জন্য সমস্যায় পড়েছেন আশাকর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি প্রশাসনিক সভায় নির্দেশ দিয়েছেন, হাসপাতালে প্রসব করাতে হবে। কিন্তু আশাকর্মীরা জানান, হাসপাতালের এই অবস্থা সকলেই জানতে পেরে গিয়েছেন। এখন আর কেউ এখানে আসতে চাইছেন না। বাড়িতেই প্রসব করাতে চাইছেন মহিলারা।
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন ওই হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ বসু। তিনি বলেন, ‘‘এত ছোট ঘরে সত্যিই সমস্যা হচ্ছে।’’ দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘প্রসূতিদের জন্য নতুন ঘর তৈরি হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy