যে ‘পোস্ট’ নিয়ে বিতর্ক।
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধানের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে জল্পনা চলছিলই বিভিন্ন মহলে। শনিবার দিল্লি থেকে উপ-পুরপ্রধান দিলীপ আগরওয়ালের একটি ফেসবুক পোস্টে আরও তীব্র হল সেই জল্পনা। রবিবার বাঁকুড়ায় ফিরে কোনও রাখঢাক না করেই পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন দিলীপবাবু।
শনিবার নিজের ফেসবুক পেজে উপপুরপ্রধান লেখেন, ‘বাঁকুড়ার জন্য অনেক কিছু করার আছে, কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্য পারছি না। সবাই বুঝতে পারছেন’। ওই পোস্টটির উপর মন্তব্য করেন অনেকে। কেউ কেউ দিলীপবাবুকে ‘সিস্টেমে থেকেই সিস্টেমকে সাফ’ করার পরামর্শ দেন। কেউ কেউ আবার দিল্লিতে গিয়ে উপ-পুরপ্রধানের ‘মন বদলে গেল’ কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন।
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের প্রতিক্রিয়া, “একটি কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য পুরসভার তরফেই উপপুরপ্রধানকে দিল্লি পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে উনি কেন এমন পোস্ট করলেন তা বুঝে উঠতে পারছি না।” দিলীপবাবু অবশ্য সাফ দাবি করেন, “আমি দলের বিরুদ্ধে কিছু লিখিনি। কিছু সমস্যা রয়েছে, যার ফলে কাজে বাধা পাচ্ছি।”
পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে কাজে সহযোগিতা না করার অভিযোগ তুলেছেন দিলাপবাবু। তিনি বলেন, “কী কী উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে তার খবর পাচ্ছি না। কাজের টেন্ডার কী ভাবে করা হচ্ছে, তাও জানানো হচ্ছে না। পুরপ্রধান নিজের মত করে বৈঠক ডাকছেন। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কারও মতামতই নিচ্ছেন না।” দিলীপবাবুর আরও অভিযোগ, “শহরের কোনও সমস্যার সমাধান করতে আমি উদ্যোগী হলেও পুরপ্রধানের সহযোগিতা মিলছে না। এর ফলে বহু প্রকল্পের কাজই আটকে রয়েছে।”
রাস্তা থেকে জবরদখলকারীদের সরিয়ে দেওয়া থেকে প্লাস্টিক বিরোধী অভিযান— অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রনী ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে দিলীপবাবুকে। উপপ্রধানের অনুগামীদের একাংশের অভিযোগ, শহরকে নতুন করে সাজাতে নেমে নানান সমস্যার মধ্যে পড়লেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিলীপবাবু সফল হয়েছিলেন। কিন্তু পুরপ্রধানের উদ্যোগের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁকে মাঝপথে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। দিলীপবাবু বলেন, “পুরপ্রধানের সঙ্গে সমস্যার কথা দলের জেলা সভাপতিকে একাধিকবার লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু সমস্যা মেটাতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
মহাপ্রসাদবাবু অবশ্য উপপুরপ্রধানের অভিযোগগুলি ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।। তিনি বলেন, “বৈঠক ডাকতে গেলে সকলের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। বৈঠকের খবর জানানো হয়েছে কি না সেটাই আসল কথা।’’ পুরপ্রধান এ-ও দাবি করেন, ‘‘পুরসভার অর্থদফতরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের দ্বায়িত্ব দিলীপকে দেওয়া হয়েছে। ওনাকে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। এতদিন কোনও সমস্যা জানাননি তিনি।’’ পুরবোর্ডের মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হতে যখন মাত্র এক বছর বাকি, তখন কেন উপপুরপ্রধান এই সব অভিযোগ তুলছেন তা বোধগম্য হচ্ছে না হলে জানিয়েছেন পুরপ্রধান। জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “দিলীপ ছাড়া আর কোনও কাউন্সিলার মহাপ্রসাদের কাজ নিয়ে কোনও অভিযোগ তুলছেন না। দিলীপ আমাকে একবার সমস্যার কথা মৌখিক ভাবে জানিয়েছিল। যদি ওর সত্যিই কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে আমাকে লিখিত ভাবে জানাক। ব্যবস্থা নেব।”
গত পুরবোর্ডেও বাঁকুড়ার তৎকালীন পুরপ্রধান তথা বর্তমানে বিধায়ক শম্পা দরিপার সঙ্গে ওই বোর্ডের উপ-পুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদারের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। শম্পাদেবীর বিরুদ্ধে অলকাদেবী ও কাউন্সিলারদের একাংশের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের জেরে পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। পরে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে অবস্থা সামাল দেওয়া গিয়েছিল।
শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, শহরে অনেক সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে পুরসভায় যাতে অচলাবস্থা তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে সময় থাকতেই হস্তক্ষেপ করুন তৃণমূলের জেলা নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy