Advertisement
০৫ মে ২০২৪
বিশেষ ক্ষমতায় সিদ্ধান্ত বদল

রাজ্যের ক্ষোভ সামলে ঘরেই সঙ্কটে সুরঞ্জন

সরকারি নির্দেশ মেনে চলা হবে বলে জানিয়ে দিয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে রাস্তা এড়ানোর বার্তা দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৬
Share: Save:

সরকারি নির্দেশ মেনে চলা হবে বলে জানিয়ে দিয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে রাস্তা এড়ানোর বার্তা দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। কিন্তু তিন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ব্যাপারে পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে পড়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারের বদলে তাঁর নতুন সংঘাত শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনর্নিয়োগ রদের সরকারি ঘোষণার পরেও যাদবপুরের কর্মসমিতি সদ্য অবসরপ্রাপ্ত তিন শিক্ষককে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার টাকা না-দিলেও তাঁদের বেতনের ভার বিশ্ববিদ্যালয়ই নেবে বলে জানিয়ে দেয় তারা। তাতেই ক্ষিপ্ত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, যাদবপুরের ওই সিদ্ধান্ত মানা যাবে না। পুনর্নিয়োগ নয়, ক্লাস-পিছু দক্ষিণা দিয়ে ওই তিন জনকে অতিথি-শিক্ষক করা যেতে পারে।

সরকারের কঠোর মনোভাবের আঁচ পেয়ে উপাচার্য জানিয়ে দেন, নির্দেশ মেনে নেওয়া হচ্ছে। তার পরেই কর্তৃপক্ষ ওই তিন শিক্ষককে চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, ‘প্রফেসর ইন রেসিডেন্স’ নয়, অতিথি-শিক্ষক হিসেবে তাঁদের রাখতে চান তাঁরা।

কর্তৃপক্ষ এ ভাবে কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত বদল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)। শুক্রবার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে জুটার প্রতিনিধিরা জানান, অবসরের পরে ওই তিন শিক্ষককে ‘প্রফেসর ইন রেসিডেন্স’ হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কর্মসমিতি। তাই পরবর্তী সিদ্ধান্তও নিতে হবে কর্মসমিতির বৈঠকেই।

সুরঞ্জনবাবু জানিয়ে দেন, এই সব ক্ষেত্রে শিক্ষা আইনের ১০/৬ ধারা অনুযায়ী উপাচার্য জরুরি পরিস্থিতিতে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। তিনি সেটাই করেছেন। শিক্ষা শিবিরের মতে, সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথ থেকে সরে আসতে উপাচার্য কতটা মরিয়া, এ ক্ষেত্রে আইনি ক্ষমতা প্রয়োগই তার প্রমাণ। পুনর্নিয়োগ রদের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বেশি সরব যাদবপুরের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। এখন খোদ উপাচার্যই কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত পাল্টে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে তারা। নিজের প্রতিষ্ঠানে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন সুরঞ্জনবাবু। জুটার সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘ওই তিন শিক্ষকের বিষয়ে কর্মসমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত যদি পরিবর্তন করতে হয়, তা হলে তো আবার কর্মসমিতিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’

উপাচার্যের বক্তব্য, কর্মসমিতির কোনও সিদ্ধান্ত বদলাতে হলে ১২০ দিন সময় দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। ‘‘সরকারের নির্দেশ ফেলে রাখতে চাইনি। তাই ১০/৬ প্রয়োগ করেছি,’’ বলেন সুরঞ্জনবাবু।

যে-তিন শিক্ষককে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ঘিরে এই টানাপড়েন, বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরা তাঁদের বেতন জোগানোর কথা বলায় সরকারের ক্ষোভ বেড়ে গিয়েছিল। নির্দেশ মানা হবে বলে জানিয়ে উপাচার্য সেই ক্ষোভ সামাল দিতে চেয়েছেন। অতিথি-শিক্ষক করতে চেয়ে তিন শিক্ষকের কাছে তড়িঘড়ি চিঠি পাঠানোটা সেই ক্ষোভে দ্বিতীয় দফার প্রলেপ। কিন্তু আইনি পথে কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত বদলানোয় জুটা যে-ভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে, নিজের প্রতিষ্ঠানে সেই বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা উপাচার্য কী ভাবে করেন, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suranjan Das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE