এ যেন কুমীর ডাঙা খেলা! জলে আছো, না ডাঙায়?
পা কোথায়? কংগ্রেসে? না তৃণমূলে?
এমনই অবস্থা জনা পাঁচ-ছয় কংগ্রেস বিধায়ককে নিয়ে!
তৃণমূল শিবির থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, কংগ্রেসের ঘর ভেঙে, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে আরও একাধিক বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। তাঁদের নামও বার বার সংবাদমাধ্যমে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিধানসভার দোতলায় পিএসি দফতরে বসে মানস ভুঁইয়া হুঙ্কার ছাড়ছেন— অধীর-দুর্গ আবার ভাঙছে!
কিন্তু যাঁদের নিয়ে এত চর্চা, তাঁরা সবাই সোমবার কংগ্রেস পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ দিলেন। সংবাদমাধ্যম তাঁদের নামে মিথ্যা কথা বলছে বলেও অভিযোগ তুললেন। তা-ই নয়, যখন মালদহের রতুয়ার বিধায়ক বর্ষীয়ান সমর মুখোপাধ্যায় বললেন— যাঁরা দল ছেড়ে গিয়েছেন, তাঁদের এক জনের বিধায়ক পদও যদি আমরা বাতিল করতে পারি, তা হলে আর কেউ দল ছাড়ার সাহস পাবে না, তখন সবাই এক বাক্যে সমরবাবুকে সমর্থনও করলেন!
কিন্তু তলায় তলায় সন্দেহের বাতাবরণটা রয়েই যাচ্ছে। কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ৪৪ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯। তৃণমূল শিবির থেকে বলা হচ্ছে, সংখ্যাটা ২৯ হলেই আব্দুল মান্নানের বিরোধী দলনেতাদের পদ যাবে! দলে ভাঙন রুখে বিধায়কদের এককাট্টা রাখতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন পরিষদীয় দলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অধীরবাবুর জেলার অপূর্ব সরকার, প্রতিমা রজক, মইনুল হক, শাওনি সিংহ রায়, আশিস মার্জিতও ছিলেন। এই পাঁচ বিধায়ককে নিয়েই কিছু দিন ধরে চর্চা চলছে তৃণমূলের অন্দরে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মালদহের মোথাবাড়ির বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনও। তাঁকে নিয়েও তৃণমূল শিবির আশাবাদী। কিন্তু দলকে এঁরা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, তাঁদের কংগ্রেস ছাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। সবই রটনা। তৃণমূল শিবির থেকে যোগাযোগের প্রসঙ্গ একমাত্র স্বীকার করেছেন অপুর্ববাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমায় তৃণমূল শিবির থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রস্তাব রয়েছে। কিন্তু আমি দল ছাড়ছি না। প্রদেশ সভাপতিকে সে কথা জানিয়েছি।’’
দলের অন্দরে সন্দেহের যে বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে, বৈঠকে অধীরবাবুর কথাতেও তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, কই আব্দুল মান্নানের নাম নিয়ে তো কোনও আলোচনা হচ্ছে না। নিশ্চয়ই কারও কারও আচরণে এমন কিছু মনে হচ্ছে, যাতে সংবাদমাধ্যম মনে করছে, এঁরা দলত্যাগ করতে পারেন। এমন আচরণ বন্ধ করতে হবে। এলাকায় মানুষের মধ্যে গিয়ে বিধায়ককে আস্থা অর্জন করতে হবে। বোঝাতে হবে, তিনি কংগ্রেসে থেকেই মানুষের জন্য কাজ করতে চান।
বিধানসভার বাইরে অধীরবাবু প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন, ‘‘ভয় এবং প্রলোভন দেখিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দলে টানার চেষ্টা করছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী সততার প্রতীক হলে তাঁর উচিত দলত্যাগী বিধায়কদের অবিলম্বে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলের প্রতীকে পুনরায় ভোটে লড়ার নির্দেশ দেওয়া।’’ যে পাঁচ বিধায়ক দলত্যাগ করেছেন, তাঁদের প্রসঙ্গ এনে স্পিকারের উদ্দেশে অধীরবাবু বলেন, ‘‘আপনি আপনার অধিকার প্রয়োগ করে দ্রুত এঁদের বিধায়ক-পদ খারিজ করুন।’’ স্পিকারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমি সময় মতোই দলত্যাগ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। কারও কথায় নেব না!’’
বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশন ডিসেম্বরে। তার আগে আরও উইকেট পড়ে না থাকে, চর্চা থাকছেই!