Advertisement
০৭ মে ২০২৪

যুবরাজের মন্তব্যে ঝড়, অভিযোগ পুলিশেও

শাসক দলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোখ ছিঁড়ে নেওয়া এবং হাত কেটে নেওয়ার হুমকিতে রাজ্য জুড়েই তাদের উপরে হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে বিরোধী শিবির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

শাসক দলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোখ ছিঁড়ে নেওয়া এবং হাত কেটে নেওয়ার হুমকিতে রাজ্য জুড়েই তাদের উপরে হামলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে বিরোধী শিবির। মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে জোড়াসাঁকো থানায় বিজেপির সম্পাদক কমল বেরিওয়াল এবং বসিরহাট থানায় বিজেপি নেতা শুভ্রজিৎ ভট্টাচার্য এই মর্মে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আজ, বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে অভিষেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।

রাহুলবাবুর দাবি, ‘‘সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আইনের রাষ্ট্রে এ রকম বলা যায় না। অথচ অভিষেক সাংসদ হয়ে তা-ই বলেছেন। তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।’’ দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল হতাশা থেকেই এ সব বলছে। যে মানুষ তাদের ক্ষমতায় এনেছিলেন, তারাই ২০১৬-য় এর সমীচীন জবাব দেবেন।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘গণতন্ত্রে চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত নেওয়ার কথা কেউ বলে না। কারও কোনও কিছুতে আপত্তি থাকলে তা গণতান্ত্রিক পথেই করতে হয়।’’

বসিরহাটে সোমবার ২১শে জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের প্রস্তুতি উপলক্ষে এক সভায় অভিষেক কারও নাম না করেই বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে বাংলার মানুষকে চোখ দেখালে আমরা চোখ ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দিতে পারি। হাত দেখালে হাত কেটে নিতে পারি।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘কিন্তু মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলে।’’ অভিষেকের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে তাই দাবি করা হচ্ছে, দলের যুব সভাপতি আদৌ হাত কেটে নেওয়া বা চোখ উপড়ে নেওয়ার হুমকি দেননি। অভিষেক-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, ‘‘উনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কী করা যায় না, সেটাই বলেছেন। এর জন্য তাঁকে অনুব্রত মণ্ডল বা মনিরুল ইসলামদের সঙ্গে এক বন্ধনীতে ফেলা যায় না!’’

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কেউ অবশ্য অভিষেক-প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খোলেননি। ব্যতিক্রম বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিশ আলি। বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য খ্যাত ইদ্রিশ এ দিন দলের যুব সভাপতির পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘সিপিএম যখন নন্দীগ্রাম, বানতলা, সাঁইবাড়ি, সিঙ্গুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণ, খুন, ছেলের রক্ত মাকে খাওয়ানোর মতো ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটিয়েছে, তখন তো কেউ কিছু বলেনি! অভিষেকের কথায় তা হলে এখন কেন এত হইচই?’’

কয়েক দিন আগেই বাঁকু়ড়ার এক যুব নেতা থানায় চড়াও হওয়ায় বা রানিগঞ্জের এক ছাত্রনেতা পুলিশকে হুমকি দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। রানিগঞ্জের ছাত্রনেতাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। যদিও পরে সরকারি আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে তাঁর জামিন হয়ে যায়। অভিষেকের বেফাঁস কথার পরে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, দু’ধরনের নেতাদের জন্য কেন দু’রকমের নীতি চালু থাকবে? সাধারণ কর্মীদের কাউকে কাউকে শাস্তি দিয়ে ভাবমূর্তি উদ্ধারের চেষ্টা হবে আর প্রভাবশালী কেউ হলে নেতারা চুপ করে থাকবেন? শাসক দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘যুব সভাপতি যা বলেছেন, একেবারেই ঠিক বলেননি। কিন্তু স্বয়ং দলনেত্রীর নির্দেশ ছাড়া এই নিয়ে কে মুখ খুলবে?’’

বিরোধীরাও নিশানা করছেন তৃণমূল নেত্রীকেই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন বলেছেন, ‘‘ওঁর (অভিষেক) এমন কথার জন্য ওঁর অভিভাবকেরাই দায়ী!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘মমতা যে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষ রোপণ করেছেন, এ তারই বিষফল!’’ আর রাহুলবাবুর কটাক্ষ, ‘‘অভিষেক যা বলেছেন, তৃণমূলের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক। তাপস পাল যখন ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিলেন, তখন দল তাঁর পাশেই ছিল।’’ অভিষেক শিবির অবশ্য রাহুলবাবুদের উদ্দেশে পাল্টা বলছে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি পুলিশকে বলেছিলেন তৃণমূলকে পেটাতে। তার জন্য রাহুলবাবুর বিরুদ্ধেও থানায় অভিযোগ হয়েছে। রাহুল দমতে নারাজ। তিনি ফের বলেন, ‘‘আগে বলেছিলাম, পুলিশকে পেটালে পুলিশেরও তৃণমূলকে পেটানো উচিত। এখন বলছি, পুলিশের এমন ভাবে পেটাই করা উচিত যাতে কখনও তৃণমূল তাদের গায়ে হাত দিতে সাহস না পায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE