Advertisement
০৭ মে ২০২৪
খাদ্য সুরক্ষা আইন

কে পাবেন, সবুজ-সাদা ফর্ম বিলি নিয়ে বিতর্ক

খাদ্য সরক্ষা আইন চালু হতে চলেছে আর কয়েক মাসের মধ্যে। অথচ ইতিমধ্যেই সবুজ ও সাদা ফর্ম বিলি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। হাওড়া জেলাতেও অনেকে যেমন ফর্ম না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ফর্ম বিলিকে কেন্দ্র করে রাজনীতির অভিযোগও উঠে গিয়েছে। খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলে গরিব পরিবারগুলি ভর্তুকিতে চাল ও আটা পাবেন। এই সুবিধা একমাত্র তাঁরাই পাবেন যাঁদের নাম দু’টি তালিকাতে আছে।

নুরুল আবসার
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫৮
Share: Save:

খাদ্য সরক্ষা আইন চালু হতে চলেছে আর কয়েক মাসের মধ্যে। অথচ ইতিমধ্যেই সবুজ ও সাদা ফর্ম বিলি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। হাওড়া জেলাতেও অনেকে যেমন ফর্ম না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ফর্ম বিলিকে কেন্দ্র করে রাজনীতির অভিযোগও উঠে গিয়েছে।

খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলে গরিব পরিবারগুলি ভর্তুকিতে চাল ও আটা পাবেন। এই সুবিধা একমাত্র তাঁরাই পাবেন যাঁদের নাম দু’টি তালিকাতে আছে। যার একটি হল ২০১১ সালের কেন্দ্রীয় আর্থ সামাজিক ও জাতিগত সমীক্ষার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৈরি করা। আর দ্বিতীয়টি ওই তালিকার ভিত্তিতে তৈরি খাদ্য সুরক্ষা আইনের সুবিধা প্রাপকদের তালিকা। প্রসঙ্গত, কেন্দ্র জানিয়েছে, খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হওয়ার পর তালিকার বহির্ভূত কোনও পরিবারকেই ভর্তুকিতে খাদ্যশস্য দেওয়া হবে না।

কিন্তু তালিকা প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, বহু গরিব পরিবারের নামই নেই। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২১ জুলাই ঘোষণা করেন যে সব পরিবার তালিকায় বাদ পড়েছে তাদের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে সবুজ ফর্ম বিলি করা হবে। তা পূরণ করে গ্রামে ব্লক প্রশাসনের কাছে এবং শহরে পুরসভায় জমা দিতে হবে। প্রশাসন ও পুরসভা ওই ফর্মগুলির ভিত্তিতে পরিবারগুলির আর্থ-সামাজিক অবস্থার তদন্ত করবে। যদি দেখা যায় কোনও পরিবার খাদ্য সুরক্ষা আইন মোতাবেক খাদ্যশস্য পাওয়ার যোগ্য তা হলে সেই পরিবারের নাম তালিকায় ঠাঁই পাবে। অন্য দিকে তালিকায় না থেকেও যাঁরা ভর্তুকিতে রেশনের জিনিস পেতে চান তাঁদের জন্য সাদা ফর্ম পূরণের কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্য সরকার ভর্তুকি দিয়ে ওই সব পরিবারকে খাদ্যশস্য দেবে।

কিন্তু গোল বেধেছে মূলত সবুজ ফর্ম বিলি নিয়েই। দু’টি ফর্মই বিলি শুরু হয়েছে ১ অগস্ট থেকে। জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ অগস্ট। রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রে খবর, ফর্ম জমার পরে ব্লক প্রশাসনের তরফে সমীক্ষা করে কোন পরিবার তালিকায় ঢুকবে, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হবে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে সাদা ও সবুজ ফর্ম বিলি এবং পূরণ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলিতে গিয়ে ফর্ম মিলছে না। ফর্ম বিলি নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার বাগনানের বাকসিহাট পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধানকে দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে রাখা হয়। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, প্রধান পঞ্চায়েত সদস্যদের মাধ্যমে ফর্ম বিলি না করে নিজেই সব কুক্ষিগত করে রেখেছেন। প্রধানের পাল্টা অভিযোগ, পঞ্চায়েতটি সিপিএম শাসিত হওয়ায় তাঁকে যথেষ্ট ফর্ম দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি কংগ্রেস শাসিত পাঁচারুল পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, প্রধান এবং পঞ্চায়েতের কর্মীরা যখন ফর্ম জমা নেওয়ার কাজ করছিলেন তখন তৃণমূলের লোকজন এসে টেবিল চেয়ার উল্টে দিয়ে প্রক্রিয়া ভন্ডুল করে দেয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

উলুবেড়িয়া পুরএলাকায় বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএম কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সব ফর্ম তৃণমূলের কাউন্সিলর এবং নেতারা কুক্ষিগত করেছেন। বিরোধী কাউন্সিলরদের এলাকায় গিয়ে তাঁরাই ফর্ম বিলি এবং পূরণ করছেন। এমনকী প্রতিবাদ করায় একটি পরিবারের সদস্যদের তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলেও বিজেপি কাউন্সিলর প্রার্থনা পণ্ডিতের অভিযোগ। কংগ্রেস কাউন্সিলর উত্তম ধাড়া অভিযোগ করেন, নিজের এলাকায় ফর্ম বিলি করতে গেলে তৃণমূল নেতারা তাঁকে শাসাচ্ছেন। তৃণমূলের হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি পুলক রায়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ফর্ম বিলি এবং পূরণ করা নিয়ে বিরোধীরা দলবাজি করায় মানুষ প্রতিবাদ করছেন। তৃণমূলের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।’’

তা হলে বিতর্ক কেন?

রাজ্য খাদ্য ও সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্র জানিয়েছে রাজ্যে ৬ কোটি ১ লক্ষ মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাভুক্ত হবেন। কিন্তু রেশন ডিলারদের কাছে প্রাপকদের যে সংখ্যা এসেছে তা হল ৫ কোটি ২৩ লক্ষ। ফলে এখনও ৭৭ লক্ষ মানুষ এর আওতাভুক্ত হতে পারেন। তাঁদের জন্য সবুজ ফর্ম বিলি করা হচ্ছে। অন্যদিকে মোট জনসংখ্যার ৩ কোটি ২১ লক্ষ মানুষের জন্য বিলি হচ্ছে সাদা ফর্ম, যাঁরা খাদ্য সুরক্ষা আইনের মধ্যে আসবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্য সরকার এঁদের ভর্তুকিতে খাদ্যশস্য দেবেন। কিন্তু তার পরিমাণ কত, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। ফলে সাদা ফর্ম-এর তুলনায় সবুজ ফর্মের চাহিদা উঠেছে তুঙ্গে ওঠায় ফর্মে টান পড়েছে।

জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানান, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও কেন সবুজ ফর্ম বা কেন সাদা ফর্ম সে বিষয়ে তৃণমূল স্তরে বোঝানোর ঘাটতি রয়েছে। ফলে বিভ্রান্তি বাড়ছে।’’ জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা বিডিও, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করেছি। প্রয়োজনে মানুষকে আরও বোঝানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE