Advertisement
E-Paper

নতুন প্রশ্নে টিক মেরেই ভাষা শিক্ষা

একটিও বাক্য ইংরেজিতে না লিখে ওই ভাষা পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন পরীক্ষার্থী! এমনটাই ঘটতে চলেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও ইংরেজি (কম্পালসারি) বিষয়ের পার্ট ওয়ান পরীক্ষায়।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৯

একটিও বাক্য ইংরেজিতে না লিখে ওই ভাষা পরীক্ষায় পাস করতে পারবেন পরীক্ষার্থী!

এমনটাই ঘটতে চলেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও ইংরেজি (কম্পালসারি) বিষয়ের পার্ট ওয়ান পরীক্ষায়। সম্প্রতি ওই দুই ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতিতে এই বদল এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এত দিন দু’টি বিষয়েই লিখিত পরীক্ষা হতো। সেটিই এ বার হতে চলেছে এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন) পদ্ধতিতে ওএমআর শিটে টিক দিয়ে।

আর এই সিদ্ধান্ত নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। শিক্ষাবিদদের অনেকেই মনে করছেন, এতে বিষয় দু’টিতে পাসের হার বাড়লেও ঘা খাবে শিক্ষার মানই। কারণ, এমসিকিউ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীকে বিষয়ের গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করার প্রয়োজনই পড়ে না। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তবু অঙ্ক কষতে হয়। কিন্তু ‘হিউমানিটিস’-এর মতো বিষয়ের উচ্চশিক্ষায় এমসিকিউ চালু হলে লেখার সাধারণ অভ্যাসটুকুও তৈরি হয় না। বিশ্লেষণের ক্ষমতা অর্জন তো আরই অসম্ভব।

স্কুল পেরিয়ে কলেজের গণ্ডিতে পৌঁছে বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হলেও পড়ুয়াদের মধ্যে যাতে বাংলা ও ইংরেজির চর্চা থাকে এবং তাঁরা সাবলীল ভাবে ওই দুই ভাষা লেখালেখি করতে পারেন— সেই লক্ষ্যেই ‘কম্পালসারি’ বিষয়ে ক্লাস নেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। পাসকোর্স বা অনার্স কোর্স, কলা-বিজ্ঞান-বাণিজ্য— প্রতিটি ক্ষেত্রের প্রত্যেক পড়ুয়াকেই এই দুই কম্পালসারি বিষয়ে ক্লাস করে লিখিত পরীক্ষায় বসতে হয়। মান ৫০ নম্বর। এবং তা হতো যথাক্রমে অতিসংক্ষিপ্ত, সংক্ষিপ্ত মাঝারি এবং রচনাধর্মী উত্তর লেখার আকারে। গত ডিসেম্বরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক রাজীব মুখোপাধ্যায় কলেজগুলিতে মেল পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন— এ বার থেকে আর লিখিত নয়, ওই দুই বিষয়েই এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে। আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে এ বারের পার্ট-১ পরীক্ষা।

অবশ্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম নয়, রাজ্যে উচ্চ শিক্ষায় এমসিকিউ পদ্ধতি চালুর দিকে প্রথম এগিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বিএ, বিএসসি, বিকম জেনারেল পাঠ্যক্রমে প্রায় ৮০ শতাংশই হবে এমসিকিউ। কলকাতার ওই সিদ্ধান্তে আগেই বিপদ দেখেছেন শিক্ষাবিদেরা। আইএসআই-এর অর্থনীতির শিক্ষক অভিরূপ সরকার বলেছিলেন, ‘‘একটা অঙ্ক অনেকে অনেক ভাবে করে। সাহিত্যের উত্তর বিভিন্ন পড়ুয়া বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দিতে পারে। আমরা তো শুধু উত্তর জানতে পরীক্ষা নিই না। পড়ুয়াদের চিন্তা জানতে চাই। এমসিকিউ তা পারে না।’’

পড়ুয়াদের শিক্ষার মান নিয়ে যতই প্রশ্ন উঠুক, এই সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকার হবে বলেই দাবি বর্ধমানের উপাচার্য নিমাই দাসের। তিনি বলছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকি‌উটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মেনে ওই নির্দেশ কার্যকর করা হচ্ছে। আমাদের ৮৭টি ডিগ্রি কলেজে ১ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া। এত খাতা সময়মতো দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এমসিকিউ-র ক্ষেত্রে সেই সমস্যা নেই। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’ ইতিমধ্যেই তৃতীয় বর্ষের এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিস পরীক্ষা এমসিকিউ ধাঁচে নেওয়া হয়েছে। একই যুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ষোড়শীমোহন দাঁ-রও। তিনি বলেন, ‘‘কম্পালসারি পরীক্ষার নম্বর তো মূল মার্কশিটে যোগ হয় না। আমাদের খাতা দেখার লোকও কম।’’

যে উদ্দেশ্য নিয়ে কম্পালসারিতে এই দুই বিষয় চালু হয়েছিল, তা পুরোপুরি ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলছেন, ‘‘বাংলা বা ইংরেজি দু’টিই ব্যবহারিক ভাষা। কোনও পড়ুয়ার সাফল্য নির্ভর করে, তিনি কত ভাল ভাবে তা লিখে প্রকাশ করতে পারছেন। আমি মনে করি, এটা পড়ুয়াদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক সিদ্ধান্ত হতে চলেছে। দশম শ্রেণির পরে এমসিকিউ ধাঁচের পরীক্ষা পদ্ধতি থাকাই উচিত নয়।’’

Controversy Part-I Examination Burdwan University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy