লকডাউনের আগে বাড়ি ফেরার তাড়া: বহরমপুরগামী বাসে ভিড়। সোমবার বিকেলে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
এই কলকাতা বিশ্বযুদ্ধের কলকাতা নয়। এই কলকাতা এক রকম বিশ্বযুদ্ধেরও। প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিশ্বজোড়া যুদ্ধে শামিল কলকাতা, বাংলা, ভারতও।
বোমারু বিমানের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সে-কালের কলকাতার মতোই ব্যস্ততা চোখে পড়ছিল সোমবার বিকেলে, লকডাউনের একটু আগে। বিকেল ৫টার আগে বাড়ি ঢুকতে প্রাণপণ ব্যস্ততা। কিন্তু সেই শহরেই গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি ফেরার বাস-ট্রেন না-পেয়ে নিরাশ্রয় পড়ে রইল কিছু পাড়াগেঁয়ে, মফস্সলি মুখ।
রবিবার, জনতা কার্ফুর দিনেই ট্রেন চলাচল প্রায় বন্ধ রেখেছিল রেল। মাঝরাতেই হাতে গোনা শহরতলির ট্রেনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাঝপথে থাকা ভিন্ রাজ্যের কিছু দূরপাল্লার ট্রেন এ দিন ভোরে এসে পৌঁছয় হাওড়ায়। সুনসান স্টেশনে নেমে বাড়ি পৌঁছতে হিমশিম খেতে হয় ভিন্ রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের। দূরপাল্লার বাসের খোঁজে অনেকেই আতান্তরে পড়েন। কলকাতায় বেসরকারি বাস-মিনিবাস এ দিন বন্ধ থাকায় সরকারি পরিবহণ নিগমের বাসে ভিড় উপচে পড়ে। ওই যাত্রীদের বড় অংশ পরে ধর্মতলায় ভিড় করেন।
আরও পড়ুন: তালাবন্দি কলকাতায় যান উধাও, ঠাঁই নেই সরকারি বাসেও
রবিবার রাতে হাওড়া ও সাঁতরাগাছি স্টেশনের বিভিন্ন ট্রেনে আসা যাত্রীদের পরীক্ষা করা হয়। ১৪ জন যাত্রীকে ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। চার বছরের শিশুপুত্র ও স্ত্রীকে নিয়ে কেরলে কর্মরত বর্ধমানের নিমাই মণ্ডল ফেরার পথে হাওড়ায় আটকে পড়েন। তাঁর কথায় ‘‘লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে, জানতাম না। কী ভাবে ফিরব, বুঝতে পারছি না। গাড়ি ভাড়া করার মতো টাকাও সঙ্গে নেই।’’
জনতা কার্ফুর দিনে পরিবহণ নিগমের বাস চলছিল। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা যাত্রীর ভিড়ে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় ধর্মতলায় বাসস্ট্যান্ডের। এক সময় ভিড়ের চাপ ও করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে কাজ বন্ধ করে দেন নিগমের কর্মীরা। দু’বার বুকিং কাউন্টার সংলগ্ন পরিসর পরিচ্ছন্ন করতে হয়। নদিয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি যাওয়ার টিকিটের জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। সোমবারেও সকাল থেকে একই পরিস্থিতি। তবে সংক্রমণের আতঙ্কে স্বাস্থ্যকর্মীদের নজরদারিতে বুকিং কাউন্টারে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা শুরু হয়। জ্বর নিয়ে কেরলফেরত এক যাত্রীকে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।
যাত্রীদের ভিড়ে লকডাউন শুরুর কিছু আগে পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার বাস ছাড়তে হয়। উত্তরবঙ্গ পরিবহণ নিগম এ দিন ২০টিরও বেশি বাস চালিয়েছে। কলকাতায় বেসরকারি বাস-মিনিবাস নামেনি। বেসরকারি বাস সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বেলতলায় এক বৈঠকে জানানো হয়, জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ বেসরকারি বাস-মিনিবাস ব্যবহার করবে।
কলকাতায় এ দিন সরকারি এসি বাস প্রায় চলেনি। মেট্রোর অভাবে নন-এসি বাসে যাত্রীর ভিড় উপচে পড়ে। অ্যাপ-ক্যাব, ট্যাক্সি বা অটোও ছিল হাতে গোনা। সন্ধ্যার পরে তা-ও বন্ধ। রাতের শহরে দেখা গেল, ধর্মতলায় জেলামুখী বাসের গুমটি বন্ধ, অসংখ্য মানুষের ভিড়। কেরল, পুণে বা বেঙ্গালুরু থেকে আসা দিনমজুর, হোটেলকর্মী, রংমিস্ত্রিরা কী ভাবে কোথায় ফিরবেন, জানেন না। কলকাতায় পৌঁছেও বালুরঘাট, শিলিগুড়ি, মুর্শিদাবাদের গ্রামগুলি অনেক দূর বলে মনে হচ্ছে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy