করোনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে সতর্কতার একটি ভঙ্গিমায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নবান্নে। —নিজস্ব চিত্র
সঙ্কটকালে তিনি কেন্দ্র-রাজ্য ভেদ-বিচার করতে চান না। শুক্রবার নবান্নে করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর বৈঠকে এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলির সচিব, কেন্দ্রের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং সব জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। পরে তিনি বলেন, ‘‘ভাগাভাগির প্রয়োজন নেই। আমরা একটাই পরিবার। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বার্থে যা করার করব।’’
করোনা-বৈঠকে রাজ্যে উপস্থিত সব কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্তাদেরও শামিল করা হয়। পরে কর্তাদের নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে আরও এক দফা আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সীমান্ত ও বন্দরে এক লক্ষ ৪২ হাজারের বেশি মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে রাজ্য প্রশাসন। সংক্রমণ হয়নি কারও। স্বাস্থ্যপরীক্ষা চলবে। সব মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি, জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড গড়া হয়েছে। করোনা-তথ্য জানাতে দু’টি নম্বর ঘোষণা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘এক ঘণ্টা অন্তর হাত পরিষ্কার করুন। হাঁচিকাশি হলে তা নির্দিষ্ট উপায়ে নাকমুখ আড়াল করুন। পুরসভা, পঞ্চায়েতে নির্দেশ গিয়েছে। কুইক রেসপন্স টিম তৈরি হয়েছে সব জেলা হাসপাতালে। আতঙ্কিত হবেন না।’’
চিন থেকে অনেক ওষুধ এবং চিকিৎসা-সামগ্রী আসছে না। বৈঠকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (আইবি) প্রতিনিধিকে মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, বঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামের জোগান স্বাভাবিক রাখতে কেন্দ্র যেন সহযোগিতা করে। মুখ্যমন্ত্রীও কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বেআইনি মজুত করলে সব তুলে নেব। দরকারে আমরা তা বিলি করব। অসৎ উপায়ে যারা এটা নিয়ে ব্যবসা করছে, তাদের তা করতে দেব না। মাস্ক এবং ওষুধের দাম যাতে না-বাড়ে, সে-দিকে পুলিশ ও এনফোর্সমেন্টকে নজর দিতে বলা হয়েছে।’’ ড্রাগ কন্ট্রোলের কর্তারা ওষুধ ডিলার সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, মাস্ক ও গ্লাভসের জন্য বাড়তি দাম নিলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। বেশ কয়েকটি দোকানে হানা দেয় কলকাতা পুলিশ।
নজরবন্দি
পূর্ব বর্ধমান
• চিন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বর্ধমান শহরে ফেরা ৯ জন
পশ্চিম বর্ধমান
• দিল্লি থেকে দুর্গাপুরে ফিরে জ্বর, সর্দিকাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক যুবক
বাঁকুড়া
• চিন-ফেরত পাঁচ জন
২৪ ঘণ্টা চালু কল সেন্টার, নম্বর ১৮০০৩১৩৪৪৪২২২
হেল্পলাইন ০৩৩- ২৩৪১২৬০০
দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশিক্ষণ সেরে পাঁচ স্বাস্থ্য আধিকারিক রাজ্যে ফিরলে পরিস্থিতি মোকাবিলার নতুন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে। ওই পাঁচ জনকে বলা হয়েছে: ১) কোয়ারেন্টাইনের জন্য বড় জায়গা বাছতে হবে। ২) নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা চাই আরও কিছু হাসপাতালে। ৩) প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি-বাড়ি নজরদারি চালাতে হবে। দিল্লি পরীক্ষা কেন্দ্র গড়তে চাইলে জায়গা দেওয়ার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। সহযোগিতার জন্য রেল, বন্দর, অসামরিক বিমান পরিবহণের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে আর্জি জানান তিনি। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য।
আরও পড়ুন: সতর্কতার নির্দেশিকা পাঠাল ইউজিসি
নমুনা পরীক্ষার জন্য এ দিন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে এক যুবককে ভর্তি করানো হয়। হোটেল ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণ নিতে আগরা গিয়েছিলেন সন্দেশখালির ওই যুবক। সেই হোটেলে ইটালির এক দল নাগরিক ছিলেন। জাপান, তাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ও বাংলাদেশ-যোগের কারণে পর্যবেক্ষণে থাকা তিন মহিলা এবং দু’জন পুরুষের নমুনায় করোনার প্রমাণ মেলেনি। আজ, শনিবার তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান অধ্যক্ষা অণিমা হালদার। এ দিনও কুয়েতে কাজে যোগ দিতে ফিট সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য আইডি-তে ভিড় করেন অনেকে। শংসাপত্র দিতে গিয়ে পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য ভবনে অনুযোগ করেছেন আইডি-কর্তৃপক্ষ। ফালাকাটা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে করোনা-সন্দেহে ভুটান-ফেরত এক ভারতীয়কে ভর্তি করানো হয়েছে। ভুটানে তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে এক মার্কিন নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy