Advertisement
২৩ মে ২০২৪

গৃহযুদ্ধে সন্ধি খুঁজতে কোর্টের ভরসা সন্ন্যাসী

পাকেচক্রে সেটি স্বামী-স্ত্রীর গৃহযুদ্ধে এসে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, সংসারে শান্তি ফেরাতে ছেলে-বৌমাকে সরাসরি রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজের দ্বারস্থ হতে বললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া!

কলকাতা হাই কোর্ট।

কলকাতা হাই কোর্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

আদতে শাশুড়ি-বৌমা কাজিয়ার মামলা। পাকেচক্রে সেটি স্বামী-স্ত্রীর গৃহযুদ্ধে এসে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, সংসারে শান্তি ফেরাতে ছেলে-বৌমাকে সরাসরি রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজের দ্বারস্থ হতে বললেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া!

বেলারানি সরকার নামে ব্যারাকপুরের এক স্বামীহারা বৃদ্ধার ছেলে এবং তাঁর স্ত্রীকে শুক্রবার এজলাসে ডেকে বুঝিয়েসুজিয়ে সংসারে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন বিচারপতি। সুরাহা হয়নি। ছেলে-বৌমার উদ্দেশে এক সময় বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনারা তো দেখছি দু’জনেই সমান! দু’জনেরই যত অভিযোগ পরস্পরের বিরুদ্ধে। আপনাদের একটা মেয়ে আছে। সে মাধ্যমিক দেবে। তার কথা একটি বার ভাববেন না?’’ শেষে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনাদের ওখানকার রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজের কাছে যান। তিনি যদি আপনাদের দু’জনকে বুঝিয়ে (কাউন্সেলিং) কিছু করতে পারেন। আমি মহারাজকে বলে দেব।’’

বেলাদেবীর অভিযোগ, মূলত বৌমা তাঁকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না। বিচারপতি পাথেরিয়ার কাছে ওই মহিলার আবেদন, তিনি যাতে নিজের বাড়িতে শান্তিতে থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। মামলায় তিনি যুক্ত করেছিলেন টিটাগড় থানার পুলিশকেও। ৯ অগস্ট সেই মামলার প্রথম শুনানিতে বিচারপতি অসহায়তার সুরে মন্তব্য করেন, ‘‘শাশুড়ি-বৌমার ঝঞ্ঝাট ‘ঘর ঘর কি কহানি’। এই ঝঞ্ঝাটই সব নষ্টের গোড়া! আমি যে কী করি!’’

বিচারপতির নির্দেশে এ দিন আদালতে হাজির হন বেলাদেবীর বৌমা বীণারানি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ১৬ বছরের মেয়েও। টিটাগড় থানায় বৌমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। তলব পেয়ে হাজির হন সেখানকার ওসি-ও। বৌমার আইনজীবী রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ জানান, বেলাদেবীর
ছেলে তারক নিজের স্ত্রী-কন্যাকে দেখেন না। মা, বিবাহিত বোন, দাদা, দাদার ছেলেকে নিয়ে বাড়ির একতলা জুড়ে থাকেন তারক। দোতলার একটেরে এক জায়গায় থাকতে হয় তাঁর স্ত্রী-মেয়েকে। বৌকে নিয়মিত মাসোহারা দেওয়া হয় না ইত্যাদি।

ছেলে তখন বিচারপতির দিকে তাকিয়ে পাল্টা বলতে শুরু করেন, বৃদ্ধ মায়ের উপরে অত্যাচার হয়। তিনিই মাকে রান্না করে খাওয়ান।বৌ সারা দিন রাজনৈতিক দলের কাজ করেন। মেয়েকে দেখেন না। পুলিশ দিয়ে তাঁকে মার খাওয়ান ইত্যাদি।কর্তা-গিন্নি এ ভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকায় বিচারপতি পাথেরিয়া তাঁদের সামনে ডেকে নিয়ে নিচু স্বরে কথা বলতে থাকেন। তাঁকে তারকের উদ্দেশে এক বার বলতে শোনা যায়, ‘‘কত দিন এমন চলবে, বলুন
তো? বুঝলাম বৌয়ের মাথা গরম। রাগ আছে। কিন্তু কাউকে তো থামতে হবে।’’

তারক বলেন, ‘‘ও (বীণা) খালি জলের কলে, দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়।’’ বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি এত ভীতু কেন? আদালতের যদি বারণ না-থাকে, আপনি ওই সব তালা ভেঙে দিন।’’ বীণা বলে ওঠেন, ‘‘আমি শুধু শুধু অশান্তি করি? সব দোষ আমার?’’ বিচারপতি তাঁকে শান্ত করার সুরে বলেন, ‘‘আচ্ছা বাবা, আপনিও আর কিছু করবেন না। উনিও (তারক) আর কিছু করবেন না। ঠিক আছে?’’ তা সত্ত্বেও বিচারপতির সামনে সমানে গলা চড়াতে থাকেন স্বামী-স্ত্রী। নাজেহাল হয়ে বিচারপতি বলেন, ‘‘ওরে বাবা, আমার মাথা আর খারাপ করবেন না। আপনারা এখন যান দেখি।’’ বিচারপতির স্বগতোক্তি, ‘‘কেউ কারও ইগো (অহং) ছা়ড়বে না! এ যত বলে, ও তত বলে।’’ এর পরে ওই দম্পতির একমাত্র মেয়েকে ডেকে নেন বিচারপতি। নিচু স্বরে তাকে বলেন, ‘‘ওরা যা পারে করুক। তুমি লেখাপড়া করে যাও। ওদের জন্য তোমার পড়াশোনা যেন নষ্ট না-হয়। বুঝেছ?’’

বিচারপতি টিটাগড় থানার ওসি-কে নির্দেশ দেন, বেলারানির বা়ড়িতে শান্তি বজায় রয়েছে কি না, আগামী তিন মাস ধরে ১৫ দিন অন্তর এক জন কনস্টেবল পাঠিয়ে তার খবর নিতে হবে। কাউন্সেলিংয়ের জন্য স্বামী-স্ত্রীকে নিয়মিত পাঠাতে হবে রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজের কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Court Crime Domestic Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE