Advertisement
E-Paper

অধ্যক্ষকে নিয়ে ক্ষোভ কাটছে না

নিহত কৃষ্ণপ্রসাদ জানা সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র ছিলেন না, এমনই দাবি অধ্যক্ষের। তবে তাঁর স্মরণে সোমবার কলেজে শো‌কপালন ও ছুটি ঘোষণা হল।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৫৩

নিহত কৃষ্ণপ্রসাদ জানা সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র ছিলেন না, এমনই দাবি অধ্যক্ষের। তবে তাঁর স্মরণে সোমবার কলেজে শো‌কপালন ও ছুটি ঘোষণা হল। আর অধ্যক্ষ কানাইলাল পড়িয়ার এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বেড়েছে নিহতের আত্মীয়-পরিজন এবং বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে।

কৃষ্ণপ্রসাদের দাদা নারায়ণ জানার সঙ্গে একই সুরে এসএফআই বা ছাত্র পরিষদ জানতে চাইছে, অধ্যক্ষ যে ‘তৎপরতায়’ পুলিশকে জানান, কৃষ্ণপ্রসাদ প্রাক্তন ছাত্র, একই তৎপরতা তিনি খুনের অভিযোগে ধৃতদের ব্যাপারে দেখালেন না কেন? এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি মধুজা সেনরায়ের অভিযোগ, ‘‘ধৃতদের
মধ্যে দু’জন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) লোক বলে তারা বহিরাগত জেনেও অধ্যক্ষ নিশ্চুপ।’’

শুক্রবার কলেজে কৃষ্ণপ্রসাদকে পিটিয়ে খুনে অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। ওই দিনই জেলার এসপি ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘কৃষ্ণপ্রসাদ কলেজের নিয়মিত ছাত্র নন। তিনি ওই কলেজে কী করছিলেন, তা দেখা হচ্ছে।’’ সোমবার কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করেন, কৃষ্ণপ্রসাদ পরপর দু’বছর প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এ ক্ষেত্রে ফের কলেজে ভর্তি হতে গেলে অধ্যক্ষের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিতে হয়। তা নেওয়ার শেষ দিন ছিল গত ১৬ জুন। কৃষ্ণপ্রসাদ সে অনুমতি নেননি।

অধ্যক্ষের কথায়, ‘‘নথি দেখেছি, কৃষ্ণপ্রসাদ প্রাক্তন ছাত্র। কলেজের বর্তমান বা প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের ক্ষেত্রে এমন ঘটলে শোকপালন করাই রীতি। সব ক্ষেত্রে ছুটি হয় না। এ ক্ষেত্রে ঘটনাটি কলেজে ঘটেছে বলে ছুটি দেওয়া হল।”

কিন্তু কলেজ ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জেনে ক্ষোভ বেড়েছে কৃষ্ণপ্রসাদের দাদার। নারায়ণবাবুর বক্তব্য, চলতি বছরে ফের কলেজে ভর্তি হওয়ার ফর্ম তুলেছিলেন কৃষ্ণ। সে ফর্ম জমা দেওয়া হয়েছিল কি না, তা তিনি জানেন না। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রথম থেকেই মনে হচ্ছে, ভাইকে বহিরাগত প্রমাণ করতে মরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। অথচ, ওকে যারা মারল তাদের মধ্যেও যে বাইরের ছেলেরা ছিল, সে প্রশ্ন কেউ তুলছে না!’’ টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি অবশ্য বলছেন, ‘‘কারা বহিরাগত এনেছিল, পুলিশ দেখছে তদন্ত করে।’’

কৃষ্ণপ্রসাদ খুনে শেখ মুন্না, সানোয়ার আলি ও অসীম মাইতিকে ধরেছে পুলিশ। কলেজ সূত্রের খবর, অসীম সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের বিএ পাস কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। শেখ মুন্না ও সানোয়ার এই কলেজের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় পরপর দু’বার অকৃতকার্য হন। সানোয়ার এ বছরই পিংলা কলেজে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু মুন্না ফের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘পুলিশ এ বিষয়ে কোনও তথ্য চায়নি। পুলিশ জানতে চাইলেই তথ্য দেওয়া হবে।’’

অধ্যক্ষের এই আশ্বাসে ভরসা রাখছেন না ছাত্র পরিষদের নেতারা। তাঁদের দাবি, ঘটনার দিনই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা ছাত্র পরিষদ নেতা সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায় অধ্যক্ষের কাছে ঘটনার কথা জানান। কিন্তু নিজস্ব কোনও নোট না দিয়ে অধ্যক্ষ সে চিঠিই পাঠিয়ে দেন সবং থানায়। সৌমেনের কথায়, ‘‘অধ্যক্ষ চাইলেই টিএমসিপি-র বহিরাগতদের কথা উল্লেখ করে বিশদে নোট দিয়ে আমার চিঠি পুলিশের কাছে পাঠাতে পারতেন!’’ ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘অধ্যক্ষ দায় এড়িয়েছেন।’’ আশুতোষ জানান, আজ, মঙ্গলবার মেদিনীপুরে পুলিশ সুপারের অফিসে বিক্ষোভ-সমাবেশ করার কথা ছাত্র পরিষদের।

যদিও অধ্যক্ষের দাবি, ‘‘ছাত্র সংসদের অভিযোগ দ্রুত পুলিশের কাছে পাঠানোই জরুরি মনে হয়েছিল। দায় এড়াব কেন?’’

ঠিক কেন সংঘর্ষ হয়েছিল সে দিন? অধ্যক্ষ বলছেন, ‘‘জানি না। আমিও অবাক।’’ যদিও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক কলেজ পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কাল, বুধবার কলেজে নবীনবরণ উৎসব হওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের মধ্যে তা নিয়ে প্রচার করছিল ছাত্র পরিষদ। কলেজের ছাত্র সংসদে ৩২টি আসনের মধ্যে প্রথম বর্ষের প্রতিনিধির সংখ্যা ১২। ফলে, তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ছাড়তে চায়নি টিএমসিপি। তারাও প্রায় একই সঙ্গে ক্লাসে-ক্লাসে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি সফররত মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের সংবর্ধনা কর্মসূচিতে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচারে নামে। তা নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়।

আগুনে ঘি পড়ে কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের ‘বাস কনসেশন ফর্ম’ পূরণ করা নিয়ে। বিধিমতো কলেজের ছাত্র সংসদ ওই ফর্ম অনুমোদন করে কলেজ কতৃর্পক্ষের কাছে পাঠায়। কলেজ কতৃর্পক্ষের স্ট্যাম্প-সহ ওই ফর্মকে বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনগুলিও মানে। ফলে, পড়ুয়ারা ভাড়ায় ছাড় পান। ওই ফর্ম পূরণে পড়ুয়াদের সাহায্য করার নামে আসরে নামে টিএমসিপি। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, শেখ মুন্না ক্লাসঘরে শিক্ষকদের জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে আবেদনপত্র পূরণের কাজ করছিলেন। তা নিয়ে দু’পক্ষে বচসা বাধে। দু’পক্ষই অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। অধ্যক্ষ আলোচনায় বিষয়টি মিটিয়ে দিতে চাইলে মুন্না ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। আধ ঘণ্টার মধ্যেই দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ যায় কৃষ্ণপ্রসাদের।

sabang college principal cp sfi maduja sen roy sabang college student murder sabang colllege principal decision kanailal pariya krishnaprasad jana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy